শম্পালী মৌলিক: করোনার আক্রমণ এবং লকডাউনের জেরে এবারের রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের ছবিটাই বদলে গিয়েছে। এমন পঁচিশে বৈশাখ বাঙালির জীবনে আগে কখনও আসেনি। প্রতি বছরই এই দিনটায় রবি-পুজোর জোয়ার আসে। কিন্তু এবার আর পাড়ার মোড়ে মোড়ে অনুষ্ঠান করার উপায় নেই। গুরু-বন্দনার পুরোটাই চল এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় তথা ভারচুয়াল প্ল্যাটফর্মে। অন্যবারেও ফেসবুক ভরে যেত রবিপ্রণামে। কিন্তু এবারে পুরোটাই ঘটছে ডিজিটালি। কারণ করোনা কবলিত বিশ্ব। সোশ্যাল ডিসটেন্সিং আর লকডাউন পালটে ফেলেছে আমাদের জীবনের গতিবিধি। আর এর ফলে অনেকের মনেপ্রাণে নীরবে ছিলেন রবি ঠাকুর, তাঁরাও সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে নিজের মতো করে রবীন্দ্রবরণ করছেন।
আবৃত্তিকার ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, ‘কিছুটা বাধ্য হয়েই এভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছরই ভারচুয়াল মিডিয়াতে এই ধরনের কিছু না কিছু হয়। হয়তো এমনভাবে হয় না অন্যবার। এখন তো সংকট-মুহূর্ত। শুধু বাইরের আড়ম্বর নয়, রবীন্দ্রনাথকে কেউ যদি আশ্রয় করেন, তবে তাঁর কাছ থেকে যেটা এখনও পাওয়া যায় তা হল সাহস আর নিজের ওপর বিশ্বাস। এই মুহূর্তে যেটা মানুষের খুব দরকার। শুধু বাইরে বাইরে গান আবৃত্তি নয়, যদি তাঁর বার্তা ভিতরে নিই, তাহলে এই সংকটকালে তিনি একটা সহায় হতে পারেন। একটা জোর পাওয়া যায়। এখন আমরা সবাই ঘরের ভিতরে থেকে যে যেমন পারি, শুধু শিল্পীরা নয়, সকলেই কিছু না কিছু করছে। ফেসবুক যেন রবীন্দ্রসদন বা শিশিরমঞ্চ। প্রত্যেকে তাঁদের পেজে গান করেছেন। ছড়া বলেছেন। নাচের ভিডিও পোস্ট করেছেন। এখন টিভিও খুলছি না প্রায়। এখানেই দেখছি। এটা টেম্পোরারি হতে পারে। কিন্তু আমরা সবাই চাইব এটা টেম্পোরারিই হোক। আমরা সবাই যেন এর থেকে উত্তীর্ণ হতে পারি। সময়টা যেন ফাঁসের মতো চেপে বসেছে। এই চাপটা থেকে যত তাড়াতাড়ি মুক্ত হওয়া যায়, সেটাই চাই।’
এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে রবীন্দ্রনাথের ১৫৯তম জন্মদিবস পালিত হচ্ছে। বদলে গিয়েছে চারপাশের আবহ। ইচ্ছে থাকলেও পাটভাঙা জামাকাপড় পরে কবিগুরুর স্মরণ অনুষ্ঠানে কোথাও বেরিয়ে পড়া যাচ্ছে না। শিল্পী শ্রাবণী সেন বলেছেন, ‘হ্যাঁ। এ তো একটা প্রতিবন্ধকতার সময় বটেই। কাছাকাছি একটা দোকানে গিয়ে ফুলমালা কিনে আনার উপায়ও কঠিন হয়ে গিয়েছে যে কবিগুরুর ছবিতে দেওয়া যাবে। তবে প্রযুক্তির উন্নতির কথা স্বীকার করতেই হবে। ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত, আমার মনে হয়। এই সারা পৃথিবীর মানুষ একসঙ্গে আজকের দিনে ভারচুয়াল মিডিয়ার সৌজন্যে কবিকে স্মরণ করতে পারছে, তাঁকে শ্রদ্ধা জনাতে পারছে, এই বা কম কী? মনে প্রাণে চাই পৃথিবীর এই দুঃসময় যেন দ্রুত কেটে যায়।’
অপরদিকে ইমন চক্রবর্তী জানালেন, ‘এখন যেরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, যেরকম পরিস্থিতি আসবে, সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। বাড়িতে বসেই কাজ করতে হবে। পৃথিবীর মানুষের কাছে আর কোনও অপশন নেই। গানবাজনা বা ক্রিয়েটিভ যে কোনও বিষয় ঘরে থেকেই করতে হবে। রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনও তাই ঘরে বসেই। যেটুকু হাতের নাগালে আছে, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েই এগোতে হবে আমাদের।’ করোনার এই দিনগুলোতে কবিপক্ষের পরিবর্তিত রূপ দেখছি আমরা। অনলাইন প্ল্যাটফর্মেই সমস্ত রবীন্দ্র-উদযাপন। ক্ষতি কী, যদি এমন দুঃসময়ে এভাবেই কবিকে স্মরণ করে একটু ভাল থাকা যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.