Advertisement
Advertisement

Breaking News

ট্রান্সডেন্ডার

মধ্যযুগীয় মানসিকতার প্রতিবাদ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে গান লিখলেন ‘তেপান্তর’-এর বাবী

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে এই গান ইতিমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে।

Uluberia lyricist from Bengal pens song on LGBT community
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:August 7, 2019 8:07 pm
  • Updated:August 7, 2019 8:07 pm  

সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: নারীরূপী এক পুরুষকে প্রথমে নানা রকম লাঞ্ছনা এবং পরে পিটিয়ে মারা। উত্তরবঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এই ঘটনার ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে বেশ কয়েক রাত ঘুমোতে পারেননি ‘তেপান্তর’-এর বাবী ওরফে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওটি তোলপাড় ফেলেছিল আট থেকে আশির হৃদয়ে। ধিক্কার জানিয়েছিলেন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীকার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অগণিত মানুষ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে নিজের গিটারে সভ্য সমাজের কতিপয় বীরপুঙ্গবের এই জঘন্য ও বর্বরোচিত কাজের বিরূদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিলেন জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ‘তেপান্তর’-এর বাবী।

[ আরও পড়ুন: সাঁতার শিখতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু মহিলার, প্রশিক্ষকের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ]

ডোমজুড়ের মাকড়দহের বাসিন্দা বাবী ওরফে অভিষেক নিজের স্টুডিওতেই এক রাতের মধ্যে আরও একটি চিত্তাকর্ষক গান উপহার দিলেন বাংলা সংগীতপ্রেমীদের। যে গানের কলিতে কলিতে গায়কের দৃঢ় মানসিকতার প্রতিফলনের পাশাপাশি কিছু মানুষের মধ্যযুগীয় মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঝরে পড়েছে- “না না থামছি না / আমি হেরে যাচ্ছি না / থাক না পৃথিবী একদিক আর আমি অন্যদিকে।” গানের কথাগুলি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছে। বর্তমান সমাজে একরকম উপেক্ষিত ‘রামধনু’দের নিয়ে হঠাৎই এই নতুন আঙ্গিকের বাংলা গানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশিষ্টজনেরা।

Advertisement

কেউ কেউ আবার এই পদক্ষেপকে ‘দুঃসাহসিক’ আখ্যা দিয়েছেন। কথায়, আড্ডায় নিজের ব্যস্ততার ফাঁকে বাবী জানালেন, তাঁর একাধিক বন্ধু বান্ধবী আছেন এলজিবিটি (lesbian, gay, bisexual, and transgender) সম্প্রদায়ের। ওদের প্রতিদিনের বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, গঞ্জনার সঙ্গে তিনি ভীষণভাবে পরিচিত। এই বিষয়টি অত্যন্ত ভাবায় বাবীকে। তাঁর হৃদয় ব্যথিত হয়। আর সেই যন্ত্রণা থেকেই জন্ম নেয় এই গান। বাবী জানান, তাঁর এই গানে তিনি তুলে ধরেছেন সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামীদের যন্ত্রণার কথা। তাঁদের হয়েই গলা ফাটিয়ে এই গানের মধ্যে দিয়ে উগরে দিয়েছেন সমাজের আড়চোখে দেখা মানুষদের প্রতি তাঁর প্রতিবাদের সুর। বলা বাহুল্য স্বাভাবিক ভাবেই গানটি ইতিমধ্যেই এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সকলেরই মন জয় করেছে।

প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী ও বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মেঘ সায়ন্তনী ঘোষ জানান, “বাবীদার এই গান আমাদের আলাদা করে সাহস জোগাবে।” তিনি বাবীর এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান। রূপান্তরকামী মডেল সোনাল দে জানান, “আমাদের নিয়ে ভাবার জন্য এবং আমাদের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা তাঁর গানে তুলে ধরে প্রতিবাদ করার জন্য বাবীদার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।” অন্যদিকে উভপ্রেমী স্নাতক ছাত্রী মৌমিতা পাল বলেন, “বাবীদার গানের কথা শুধু আমাদেরই নয়, সমাজের যে কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরই মন ছুঁয়ে যাবে।”

[ আরও পড়ুন: তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অশ্লীল পোস্টার, গ্রেপ্তার পুলিশ আধিকারিক ]

বাবীর বেশ কয়েকটি গান এর আগেও অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বরাবরই তিনি কাজে কিছু নতুনত্বের ছাপ রাখতে পছন্দ করেন। তিনি কোনওদিনই শুধুমাত্র প্রচলিত গানের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকতে চাননি। বরং প্রচলিত স্রোতধারা থেকে বেরিয়ে নতুন স্রোতে বাংলা গানের তরী ভাসিয়েছেন। তিনি বলেন সাত রঙ্গের মানুষদের নিয়ে গানের নাম ইচ্ছা করেই তিনি সাত অক্ষর দিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘আমিও রামধনু’।

আগামী ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার আইসিসিআর পেক্ষাগৃহে আয়োজিত ঋতু উৎসবে বাবী প্রথমবার ‘আমিও রামধনু’ গানটি উপস্থাপন করতে চলেছেন। তিনি জানান, “আমরা সকলেই এক ধরনের রামধনু। আমাদের মাটিতে, প্রকৃতিতে, মানুষের হৃদয়ে এতো রঙের সমাহার থাকা সত্ত্বেও আমরা রামধনুর আশায় আকাশে তাকাব কেন? আর মাটির রামধনুদের কপালে চিরকাল কেন শুধুই অপমান, লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা জুটবে? শহর জুড়ে নতুন একটা বিপ্লব আসুক, নামুক অপার শান্তি। সাত রঙের সমাহারে রঙিন হোক আকাশ, বাতাস, মাটি ও মন।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement