সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা দূর করতে যজ্ঞ! এখন আবার ‘করোনা মাতা’কে উৎসর্গ করে পুজোও হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও মারণ ভাইরাসের মোকাবিলা করতে এমন কুসংস্কার দেখে হতবাক অনেকেই। গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা যখন মারণ ভাইরাসকে কাবু করতে প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য কোমর বেঁধে ময়দানে নেমেছেন, তখন বাংলা তো বটেই, এমনকী অসম, বিহারের মতো বিভিন্ন রাজ্যগুলিতেও ঘটা করে চলছে ‘করোনা মাতা’র পুজো। অনেকে আবার এই ‘অভিনব’ পুজো দেখতে ভিড়ও জমাচ্ছেন। আধুনিকতা এলেও মানুষের মননে কি আদৌ কোনও পরিবর্তন ঘটেছে? বিজ্ঞানের যুগে মহিলাদের এই ‘করোনা মাতা’ পুজোর পর এই প্রশ্ন যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। সেই প্রসঙ্গ নিয়েই এবার মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা নাসরিনের কথায়, “এই পুজোর খবর পেয়ে আমি মোটেও অবাক হইনি! কারণ, এর থেকেও আরও ভয়ংকর কুসংস্কার আমি দেখেছি। এই পুজো তো অশিক্ষিত, অল্প-শিক্ষিত নিরীহ মহিলারা করছে। আমরা কি লেখাপড়া জানা ভদ্রলোকদের করোনা থেকে বাঁচতে গোমূত্র পান করতে দেখিনি, সারা গায়ে গোবর লেপে বসে থাকতে দেখিনি? আমরা বড় বড় তারকা, বড় বড় রাজনীতিক, বড় বড় ধনকুবেরদের কি মানুষ ঠকানোর ‘ব্যবসায়ী’ গুরুদের পায়ে মাথা ঠেকাতে দেখিনি! আমরা কি রকেট ছাড়ার আগে নারকেল ফাটাতে কিংবা মন্দিরে মিনিয়েচার রকেট নিয়ে বিজ্ঞানীদের পুজোয় বসতে দেখিনি? পুজো-আর্চা নিয়ে থাকা কিছু মহিলা, যারা বিজ্ঞান মনস্ক হওয়ার কোনরকম সুযোগ পায়নি জীবনে, তারা করোনা পুজো করেছে, বিজ্ঞান-পড়া ভদ্রলোকদের কুসংস্কারের তুলনায় এ তো কিছুই নয়।”
এপ্রসঙ্গে, আবারও মহিলাদের শিক্ষার প্রয়োজনীতা নিয়ে সরব হয়েছেন খ্যাতনামা লেখিকা। আমাদের দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে এখনও যেখানে কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়। কিংবা মেয়ে সন্তানের জন্ম হলে পরিবারের সদস্যদের মুখ ভার হয়ে যায়, সেখানে মেয়েদের ‘পেটে বিদ্যা ধারণে’র কথা বোধহয় এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে। এ তো গেল সমাজে নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেয়েদের কথা। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলিতে এর রকমফের হয় মাত্র! বাড়ির পুরুষের থেকে মহিলার রোজগার বেশি থাকলেও ভ্রু উঁচু হয় অনেকের! তবে এর ব্যতিক্রমও যে নেই, এমনটা নয়। তবে সেই সংখ্যাও সীমিতই। আজকের যুগেও যেখানে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রসঙ্গের উত্থাপন করতে হয়, লড়তে হয়, সেখানে মেয়েদের ঘর-সংসারের ভিতরে ঠেলে দিয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার জন্য দোষ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রশ্ন তুলেছেন তসলিমা নাসরিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.