Advertisement
Advertisement

Breaking News

Poila Baisakh

‘পয়লা বৈশাখ এখন একলা বৈশাখ হয়ে গিয়েছে’

'সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল'-এ কলম ধরলেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী।

Swapnamoy Chakraborty reminisced Poila Baisakh
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 12, 2025 4:42 pm
  • Updated:April 12, 2025 4:42 pm  

বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীতের স্মৃতিচারণা এবং আগামী নববর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালে লিখলেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী

ছোটবেলায় যে পয়লা বৈশাখ পালন করা হত তা আসলে পূর্ববঙ্গ থেকে সঙ্গে নিয়ে আসা প্রথা। অঞ্চলভেদে, সমাজের স্তরভেদে এই প্রথাগুলি তৈরি হয়। এগুলো পালন করতে গিয়ে একটা আশ্চর্য আনন্দের অনুভবও হত। মনে পড়ে।

Advertisement

মনে পড়ে ‘শত্রুবলি’র কথা। আজ এটা লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ব্যাপারটা ছিল এরকম- বড় কেউ ছাদে ইট বা চক-খড়ি দিয়ে রাক্ষস জাতীয় কিছু একটা আঁকত। তার উপরে ইট বা কাঠের টুকরো রেখে একটা কাঁচা আমকে দা দিয়ে খচাৎ করে দুভাগ করে দিতাম। এটাই শত্রুবলি। আবার নিমপাতা ও হলুদ বাটা মেখে নিয়ে স্নান করার প্রথাও ছিল বচ্ছরকার দিনে। আরেকটা ব্যাপার ছিল। বড়রা সবাই এদিন পয়সা দিত ছোটদের। বিরাট কিছু অর্থ নয়। ১৯৫৭ সাল থেকে নতুন পয়সা চালু হলেও ১৯৬৪-৬৫ পর্যন্ত পুরনো পয়সাও চলত। তা কেউ হয়তো এক আনা দিল, কেউ দু’আনা। কেউ আবার হয়তো চার আনাই দিল। এটাকে বলা হত মেলাখরচা। আসলে পূর্ববঙ্গে নববর্ষের সময়ে চড়কের মেলা হত। এখানেও অবশ্য হত। এখনও হয়। তা এই টাকা দেওয়া হত মেলা দেখার জন্য। জিলিপি-পাঁপড়ভাজা খাওয়ার জন্য। এটা খুব মনে পড়ে। এসব প্রথা কবেই লুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

আরেকটু বড় হলে বাবার সঙ্গে মুদি দোকানে যেতাম। আমাদের সোনার দোকানে বড় একটা লেনদেন হত না। রিফিউজি মানুষ, সোনার দোকান থেকে আমাদের বলত-টলত না। নেমন্তন্ন আসত মুদিখানা কিংবা দরজির দোকান থেকে। তবে মুদি দোকানই বেশি। তা এই সব দোকানে গেলে খাওয়াত। বেশ গজা-টজা পাওয়া যেত। শরবতেরও একটা চল ছিল। আমার এক পিসেমশাই ছিলেন ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি আমাকে একবার নিয়ে গিয়েছিলেন একটা বড় কোম্পানিতে। সেখানে আমরা লেমোনেড খেয়েছিলাম। তখন কাচের বোতলে পাওয়া যেত। সেই স্বাদ এখনও ভুলিনি।

লেখক হিসেবে পয়লা বৈশাখে বইপাড়ায় ডাক পেয়েছিলাম অনেক পরে। লিখতে শুরু করার পরপরই যে ডাকে এমনটা নয়। তবে একবার ডাক পাওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই ডাক পাই। যদিও দুপুর থেকেই প্রকাশনী দপ্তরগুলিতে শুরু হয়ে যায়, কিন্তু আমি প্রতিবারই একটু দেরি করে বিকেলের দিকে যাই। সব জায়গায় যাওয়াও হয় না। একটা বা দু’টো জায়গায় যাই। গল্পগুজব, আড্ডা হয়। বেশ মনে পড়ে, আগে দু’জন প্রকাশক ডাব খাওয়াত। এখন সেটা উঠে গিয়েছে। কারণ একটাই। ডাব কাটার লোক নেই। ডাব কাটার একটা এক্সপার্টাইজ আছে। সবাই কাটতে পারে না। যারা পারে তারা দা দিয়ে খচাখচ কেটে ফেলে। কিন্তু এখন তেমন লোক অপ্রতুল। তাই ডাব বাদ চলে গিয়েছে। এসেছে কোল্ড ড্রিঙ্কস। গ্লাসে গ্লাসে সেটাই পরিবেশন করা হয়। গতবার শরীর বেশ খারাপ ছিল, তাই বইপাড়ায় যেতে পারিনি। এবার আশা করছি যাব।

বাঙালি হিন্দু এখনও পঞ্জিকা রাখে। অনেক বাড়িতেই শনিবার নিরামিষ হয়। কেউ কেউ একাদশী করে। আরও নানা রিচুয়াল। তা সেসবের হিসেব রাখতে পঞ্জিকা রাখতেই হয়। আবার পয়লা বৈশাখে যে বাংলা ক্যালেন্ডার রাখে, সেটাও অনেকে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখে। এটাও ছোটখাটো পঞ্জিকার কাজ করে। পয়লা বৈশাখের সঙ্গে এগুলোর যোগ রয়েছে। নইলে পয়লা বৈশাখ তো এখন একলা বৈশাখই হয়ে গিয়েছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement