ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একটা কবিতা লিখছিলেন। দীর্ঘ কবিতা। কখনও কখনও কোনও গুণগ্রাহীকে ডেকে শুনিয়েওছেন সেসব। উত্তর কলকাতার যে পাড়ায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম, কবিতায় তাঁর সে পাড়ার ছবি তুলে ধরছিলেন তিনি। ফুটপাত, সেখানে জীবন কাটিয়ে দেওয়া মানুষ, এই সব। কিন্তু সে কবিতা শেষ হয়নি। তাঁর জীবনী গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ড তৈরি। ডিসেম্বরেই প্রকাশ পাওয়ার কথা। শুধু এই দু-একটা নয়, এমন অজস্র স্মৃতি, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লেখা, ছবি, নাটক সবকিছু একত্রে একটা গ্যালারি করে ২০২১-এর বইমেলায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষ সম্মান জানাবে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড।
করোনা আবহে বইমেলা নিয়ে অবশ্য এখনই কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে রাজ্য সরকারের কাছে একবার কথা পাড়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে পালটা জানানো হয়েছে। লন্ডন বইমেলা মার্চে হওয়ার কথা ছিল। সেখানে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে জুনে। সে প্রসঙ্গ টেনেই সভাপতি ত্রিদীব চট্টোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, “কঠিন পরিস্থিতি। এটি ছেলেখেলার বিষয় নয়। আগে মানুষের জীবন। সবদিক বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত হবে।”
সিদ্ধান্ত যাই হোক, বইমেলা যখনই হোক, সৌমিত্রবাবুর সম্মানে বিশেষ গ্যালারির প্রস্তাবটা আলোচনায় তুলবেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে। বলেছেন, “বইমেলা কবে হবে এ নিয়ে তো আলোচনা একটা সময় হবেই। তখনই আমরা এই প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা সেরে নেব। সৌমিত্রবাবুকে সম্মান জানানোটা আমাদের কাছে গর্বের।” ২০২০ সালের বইমেলায় কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনেও বিশেষ সম্মান দিয়ে আনা হয়েছিল সৌমিত্রবাবুকে। আলোচনায় মধ্যমণি ছিলেন তিনি। সুধাংশুবাবুর কথায়, সৌমিত্রবাবু শুধু নন, এর আগেও যেবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বা নবনীতা দেবসেন আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁদের সম্মানেও আমরা বিশেষ গ্যালারি করেছি বইমেলায়।
সৌমিত্রবাবুর শেষ লেখা বই হয়ে বেরনোর প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। তবে যাঁরা জানেন তাঁরা অনেকেই সৌমিত্রবাবুর লাল রংয়ের ডায়েরির কথা বলছেন। সুধাংশুশেখরবাবুর ছেলে অপু প্রকাশনার কাজের সূত্রেই বহুবার সেই ডায়েরি দেখেছেন। বলছেন, “ওটা একটা খেরোর খাতা। কী নেই তাতে। প্রায় পনেরো–ষোলোটা অমন ছোট ছোট ডায়েরি আছে। দিনলিপি নয়, কিন্তু তাতে নানা সময় নানা ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা পরপর লেখা রয়েছে।” সেটা কি পাঠকদের সামনে আসবে কখনও? যদিও সেটা সৌমিত্রবাবুর পারিবারিক ব্যাপার। একেবারেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তবে “এটা প্রকাশিত হোক, তা সৌমিত্রবাবু কখনও চাননি”, বলছেন অপু। তাঁর কথায়, “এখনও পর্যন্ত সৌমিত্রবাবুর যে গদ্যের বইগুলো বেরিয়েছে, তা ধারাবাহিকভাবে পড়লেই তাঁর জীবন, নানারকম কাজ নিয়ে তাঁর দর্শন সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.