রাজা দাস, বালুরঘাট: কলকাতার বিখ্যাত নাট্যদলগুলির একগুচ্ছ নাটক নিয়ে বালুরঘাট শহরে শুরু হল নাট্যমেলা। স্থানীয় নাট্যমন্দিরে পাঁচদিনের এই মেলায় মঞ্চস্থ নাটকে অভিনয় দেখা যাবে বাংলার বেশ কিছু প্রথমসারির অভিনেতা ও অভিনেত্রীকে। তবে বালুরঘাট বিধানসভা ও লোকসভার জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ না জানানোর পাশাপাশি একগুচ্ছ বিতর্কের মধ্য দিয়েই এদিন শুরু হয়েছে নাট্য মেলাটি।
পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি আয়োজন ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এদিন বিকেল ৫টায় এই মেলার উদ্বোধন হয়। উদ্বোধক ছিলেন বিখ্যাত নাট্য নির্দেশক তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব অশোক মুখোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন, ডিআইজি (মালদা রেঞ্জ) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, ম্যাকেনটস বার্ণের চেয়ারম্যান শঙ্কর চক্রবর্তী, জেলাশাসক নিখিল নির্মল, জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত, জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক শান্তনু চক্রবর্তী প্রমুখ। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ, পাঁচদিনে ৬টি নাটক পরিবেশিত হবে। প্রথমদিন পরিবেশিত হয় থিয়েটার ওয়ার্কশপ নাট্যদলের নাটক ‘দীর্ঘদিন দগ্ধরাত’। যার নির্দেশনা করেছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব অশোক মুখোপাধ্যায়।
তবে এই নাট্য মেলা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। কেননা নাট্যমেলায় শহরের অধিকাংশ নাট্য দলকে আমন্ত্রণ না জানানোয় বিতর্ক দেখা দেয় বালুরঘাটে। এমনকী বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব হরিমাধব মুখোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তার দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এছাড়া বালুরঘাট বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বনাথ চৌধুরী এবং বালুরঘাট লোকসভার সাংসদ সুকান্ত মজুমদার সেখানে আমন্ত্রণ পাননি। ওই জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ নাট্যকর্মীর মধ্যেও। লাইনে দাঁড়িয়ে আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করে নাটক দেখতে নারাজ তাঁরা। কার্যত ওই উৎসব বয়কট করছেন অনেকে। সেই নাট্যকর্মীদের কথায়, বালুরঘাট বলতেই প্রখ্যাত নাট্যকার হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের নাম উঠে আসে। অথচ হরিমাধববাবুর ‘ত্রিতীর্থ’ নাট্যদলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। হরিমাধব মুখোপাধ্যায় বলেন, স্থানীয় নাটকের দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল। লাইনে দাঁড়িয়ে নাট্যকর্মীদের আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহের মত পরিস্থিতি তৈরি করা না হলেই ভাল হত। তাঁর দল ‘ত্রিতীর্থ’কে আমন্ত্রণ করা হয়নি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তাঁর জন্য একটি আমন্ত্রণপত্র এসেছে। তবে শারীরিক কারণে তিনি নাট্যমেলায় যাবেন না বলে জানিয়েছেন।
‘তূণীর’ নাট্যসংস্থার কর্ণধার জিষ্ণু নিয়োগী বলেন, রাজনৈতিক দম্ভ কাজ করে এমন উৎসবে যাওয়ার মানসিকতা নেই। নাটকের দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন ছিল বলে তার মনে হয়। লাইনের ভিড়ে দাঁড়িয়ে নাট্যমেলায় পাশ সংগ্রহ নিয়ে আপত্তি থাকায় অনেক নাট্যকর্মী পাঁচদিনের নাট্যমেলা বয়কট করছেন বলে তিনি শুনেছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ বলেন, আকাদেমির সদস্য অমিত সাহার কাছে জেনেছি যে, শহরের নাট্য দলগুলিকেও কাউন্টারে এসে আমন্ত্রণ পত্র সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিবার নাট্যদলগুলিকে পাস দেওয়া হলেও বেশিরভাগ দেখতে আসেন না। আগের বার বহু আমন্ত্রণ পত্র নষ্ট হয়েছে। আমন্ত্রণ পত্র নষ্ট না করার পাশাপাশি আসন ফাঁকা না রাখতেই এই পরিকল্পনা।
ছবি: রতন দে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.