সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: এ বছর মহালয়া ৮৭ বছরে পড়ল। তার এক বছর আগে অর্থাৎ ৮৮ বছর আগে হাওড়ায় বসেই আজকের মহালয়া বা মহিষাসুরমর্দিনী রচনা করেছিলেন বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য। পরবর্তীকালে তিনিই বাণীকুমার নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। “কিন্তু এই সুদীর্ঘকাল কেটে গেলেও বাবা যোগ্য সম্মান পেলেন কই?” এমনই আক্ষেপের সুর বাণীকুমারের পুত্র নৃসিংহকুমার ভট্টাচার্যর গলায়।
মহালয়া মিটতেই কেষ্টপুরের বাড়িতে বসে অভিমানের সঙ্গেই তিনি জানান, “আমার বাবাই হলেন বাঙালির প্রাণের মহালয়ার সৃষ্টিকর্তা। অথচ সেইভাবে বাবার নাম প্রচারিত হল না এই ৮৭ বছরেও। প্রচারিত হল শুধুমাত্র বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাম। তিনি নিঃসন্দেহে পণ্ডিত ও নমস্য ব্যক্তি। মহালয়ায় তাঁর অবদান অবশ্যই অনেকটাই রয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার বাবার অবদানও কম কিছু নয়। তাঁর এই ঐতিহাসিক রচনা না হলে মহিষাসুরমর্দিনী বা আজকের মহালয়ার জন্ম হত না।” ইন্টারনেটের যুগে রেডিও সারা বছর নিশ্চুপ থাকলেও মহালয়ার সকালে ঠিক বেজে ওঠে। আর তার দু’দিন আগে থেকে খবরের কাগজ, টেলিভিশন, হালফিলের ফেসবুক, টুইটারে পর্যন্ত শুধুই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর নাম আলোচিত হয়। হারিয়ে যান বাণী কুমাররা। আর তখনই বাণীকুমারের পরিজনদের মনে আরও তীব্র হয় তাঁর যোগ্য সম্মান না পাওয়ার অভিমান।
বাণীকুমারের আসল বাড়ি ছিল আঁটপুরে। কিন্তু তাঁর জন্ম হয়েছিল আমতার কানপুরের মামার বাড়িতে। নৃসিংহকুমার ভট্টাচার্য জানান, “বাবা একটু বড় হতেই আমার দাদু তাঁকে নিয়ে চলে আসেন মধ্য হাওড়ায়। সেখানে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। দাদু বিধূভূষণ ভট্টাচার্য শিক্ষকতা করতেন মধ্য হাওড়ার বয়েজ স্কুলে।”এই মধ্য হাওড়ার ভাড়াবাড়িতে বসেই মহিষাসুরমর্দিনী লেখেন বাণীকুমার। এই উপলক্ষে গত বছরই মহালয়ার দিন মধ্য হাওড়ায় বাণীকুমারের আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় ও বিদায়ী মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র। বাণীকুমার চাকরি করতেন টাঁকশালে। কিন্তু সেই স্থায়ী চাকরি ছেড়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি আকাশবাণীর অস্থায়ী চাকরিতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্সির ইংরেজি, বাংলা ও সংস্কৃতের কৃতী ছাত্র। চাকরি সূত্রে হাওড়ার বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন বাগবাজারের ভাড়াবাড়িতে।
নৃসিংহকুমারের কথায়, “১৯২৮ সালে আকাশবাণীতে বাবার রচনা ও প্রযোজনায় প্রথম মহালয়া প্রচারিত হয়। তখন রেকর্ডিং পদ্ধতি ছিল না। সরাসরি সম্প্রচার করা হত। সেই কারণে একমাস আগে থেকেই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে বাবা, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং পঙ্কজকুমার মল্লিক রিহার্সাল দিতেন। তখনও মহালয়ার প্রযোজক হিসেবে বাবার নাম বলত আকাশবাণী। পরে প্রযোজনায় আকাশবাণী কেন বাবার নাম বাদ দিল তা আমার জানা নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.