বিশাখা পাল: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (CAB) নিয়ে কার্যত অগ্নিগর্ভ অসম। গুয়াহাটিতে জারি হয়েছে কারফিউ। কিন্তু সে সব উপেক্ষা করে CAB নিয়ে বিরোধিতায় নেমেছে অসমবাসী। পিছিয়ে নেই বুদ্ধিজীবীরাও। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় পথে নেমেছেন তাঁরাও। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে মহানগরে এক বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন গায়ক জুবিন গর্গ। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যের অনেক কলাকুশলী সেই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন।
সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার তোড়জোড় শুরু হতেই প্রতিবাদের সলতে পাকাচ্ছিল উত্তরপূর্ব ভারত। সোমবার মাঝরাতে তা রাজ্যসভায় পেশ হওয়ার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অসম, ত্রিপুরা। প্রতিবাদের আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় অসম। রাজধানী দিসপুর, গুয়াহাটি-সহ বঙ্গাইগাঁও, গোলাঘাট, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, জোরহাট, মাজুলির মতো জেলাগুলিতে পথ অবরোধ শুরু হয়। গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড়ের রাস্তায় ফ্ল্যাগ মার্চ করে সেনা। বিপদ বুঝে একাধিক অঞ্চলে সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করে প্রশাসন। এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে অসমবাসীকে কুয়োর ব্যাং না হয়ে প্রতিবাদে সরব হওয়ার ডাক দেন জুবিন গর্গ।
বৃস্পতিবার গুয়াহাটির লতাশীল মাঠে বিরাট বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন অসমের এই গায়ক। জুবিন গর্গ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন সকাল ১১টা নাগাদ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ‘আশু’র (অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) উপদেষ্টা সমুজ্জল ভট্টাচার্য। এছাড়া ছিলেন অভিনেত্রী বর্ষারানি বিশয়া, গায়ক মানস রবিন ও অভিনেতা যতীন বোরা। মহানগরে কারফিউ অমান্য করে হাজার খানেক মানুষ গিয়েছিলেন জুবিনের ডাকা সেই বিক্ষোভ সমাবেশে। সেখানে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলও হয়। সমাবেশে জুবিন বলেন, “একাত্তরের পর যদি ভগবানও আসেন, তাঁকেও অসমে জায়গা দেওয়া হবে না। এই CAB মানব না। জাতীদ্রোহী এক আইন পাশ করা হল। এর প্রতিবাদ চলবে। অসম কখনও বাংলাদেশিদের চারণভূমি হতে পারে না।”
যদিও এই প্রথম যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় জুবিন গর্গ সরব হলেন, তা নয়। এর আগেও তিনি একই কথা বলেছেন। CAB নিয়ে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন তিনি। সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ হওয়ার আগেও তিনি একই কথা বলেছিলেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে অসম জ্বলবে বলেও হুংকার দেয় ‘অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’-সহ একাধিক সংগঠন। প্রতিবাদে সরব হন হীরেন গোহাইয়ের মতো বিশিষ্ট সাহিত্যিক। কিন্তু প্রথমে লোকসভা ও তারপর রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের উপর সিলমোহর পড়ে যাওয়ায় এবার পথে নেমে পড়েছেন বুদ্ধিজীবীরা। তাঁদের পাশে পেয়ে অসমবাসীর প্রতিবাদের পালে যেন হাওয়া লেগেছে। পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ, যে সিঁদুরে মেঘ দেখছে গোটা ভারত। প্রশ্ন উঠছে বিতর্কিত এই বিলটি ঘিরে ফের কি আটের দশকের রক্তাক্ত দিনগুলি ফিরবে উত্তর-পূর্বে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.