সুচেতা সেনগুপ্ত: সংস্কৃতি জগতে অন্যতম নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী রইল কলকাতা। রবিবার সন্ধেয় নজরুল মঞ্চে কবীর সুমনের আধুনিক গানের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলেন একদল শ্রোতা। যাতে অনুষ্ঠানের রেশ কেটে গেল সম্পূর্ণভাবে।
নিজের প্রকৃতি অনুযায়ী গায়ক কবীর সুমন শুধুমাত্র অনুষ্ঠান মঞ্চে গানই গান না। একইসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেন শ্রোতাদের সঙ্গে। ইদানীং তাঁর অনুষ্ঠানগুলিতে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা থাকছে। যা পুরোপুরি বিজেপি বিরোধী। সম্প্রতি তিনি এনআরসি (NRC), নাগরিকত্ব (সংশোধিত) আইন(CAA) নিয়ে বেশ চড়া সুরেই কথা বলেন। এদিনও অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি সংখ্যালঘুদের হয়ে বেশ কিছু বক্তব্য পেশ করেছেন।
শুরুতেই CAA নিয়ে তাঁদের প্রতিবাদকে সমর্থনই করে বসেন কবীর সুমন। আর তাতেই একদল শ্রোতা আপত্তি তুলে বলেন, “এসব শুনতে চাই না।” এতে সুমন নিজেই উত্তর দিয়ে বলেন, “বেশ করেছি এসব বলেছি।” গায়কের সমর্থনে সুর চড়ান শ্রোতাদের একাংশ। পরে যদিও তিনি সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন।
সামান্য বাকবিতণ্ডার পর তখনকার মতো পরিস্থিতি সামলে গেলেও, আসল ঝামেলা শুরু হয় বিরতির সময়ে। ইতিমধ্যে নিজের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান শোনানোর ফাঁকেই বিজেপি বিরোধী আরও কিছু কড়া সমালোচনা করেন। আরএসএস এবং বাবুল সুপ্রিয়র নাম করেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। ফ্যাসিস্ট বলে বারবার বিজেপিকে তোপ দাগেন। ফলে বিরতি পর্যন্ত চাপা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী শ্রোতাদের মধ্যে।
তাঁরাই বিরতিতে কবির সুমন মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতেই ফের তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। পালটা বচসায় জড়ান সুমন অনুগামীরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আয়োজকরা সামলানোর চেষ্টা করেন। বারবার ঘোষণা করা হয় যে শান্ত থাকতে। তবু কেউ তা কানে তোলেননি। ঘোষণা করা হয় যে অনুষ্ঠান পছন্দ না হলে হলের বাইরে চলে যেতে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ঝগড়া চলতে থাকে, চিৎকার বাড়তে থাকে। প্রায় মিনিট ১৫ এরকম চলে।
তারপর কবীর সুমন নিজে মঞ্চে আসেন। থেমে যায় বচসা। তা দেখে সুমন ভীষণ বিরক্তির সুরে বলেন, “কয়েকজনের খুব অসুবিধা হচ্ছে দেখছি, কেন ? এত অসুবিধা কীসের?” এরপর তিনিই সব শান্ত করেন। ফের শুরু হয় অনুষ্ঠান। তবে এই অশান্তির জের প্রেক্ষাগৃহের বাইরেও ছড়িয়েছে। সেখানেও চলে তর্ক-বিতর্ক। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কলকাতার অভিজাত প্রেক্ষাগৃহে এমন পরিস্থিতি যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.