কলহার মুখোপাধ্যায়: হলুদ থামের মাঝে সবুজ রেলিংয়ের গেটটা বন্ধই ছিল সারাদিন। প্রতিবছর কয়েকশো মানুষ এই দিনে গেট দিয়ে ঢোকেন, বের হন। আজ, শনিবার কেউ আসেননি। লকডাউনের বাজারে আসার কথাও ছিল না। ফলে 1/1 বিশপ লেফরোয় রোডের বাড়ি বন্ধই রইল। অগণিত গুণমুগ্ধ ফোনে খবরাখবর নিলেন, শুভেচ্ছা জানালেন। শুধু কিংবদন্তী মানুষটার ছবির সামনে এসে দাঁড়ানো হল না কারও। ফুলমালার অর্ঘ্য তুলে রাখা হল পরের বছরের জন্য।
সকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ‘বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের জন্ম দিবসে তাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম… মহারাজা তোমাকে সেলাম’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ফোনে শুভেচ্ছা জানান। এবং তারপর আরও বহু মানুষ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন”- জানালেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র চিত্রপরিচালক সন্দীপ রায়।জীবিত থাকলে এই শনিবার ১00 বছরে পা দিতেন সত্যজিৎ রায়। অন্যান্যবার বিশপ লেফরোয় রোডের বাড়িটি এই দিনের জন্য খুলে দেয়া হত সকলের জন্য। খুলে দেওয়া হত সত্যজিৎ রায়ের কাজের ঘরটিকেও। সেখানে এসে গান, কবিতার শ্রদ্ধা জানতেন মানুষ। এদিন সেসব ফাঁকাই থাকল।
লকডাউনে ফুল অমিল বলে শুক্রবারই পুত্রবধূ ললিতা রায় ও নাতি সৌরদ্বীপ ফুল কিনে এনেছিলেন। সেগুলি ছবিতে সাজানো হয়েছে। আর প্রতিবারের মত পোস্তর বড়া, ডাল, ভাজা, রুই মাছের পদ এবং মিষ্টি বানিয়েছিলেন ললিতাদেবী। যারা জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে এই বাড়িতে এদিন আসেন, তাদের জন্য থাকে রায় বাড়ির বিশেষ তরমুজের শরবত, মিষ্টি। সঙ্গে থাকে মাছের চপ। এদিন তাও হয়েছিল। তবে অল্প করে।
লকডাউন সত্যজিৎ রায়কে কাছে পেতে বাধা দিল মানুষকে। এ দুঃখ বছরভর বয়ে বেড়াতে হবে। তবে লকডাউন একটা উপকারও করল বাঙালির তথা গোটা বিশ্বের। সত্যজিৎ রায়কে নতুন করে খোঁজা শুরু করেছিলেন সন্দীপবাবু ও সৌরদ্বীপ। এই মানুষটি কত কাজ যে করে গিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। সেসব কাজ কোথায় রাখা রয়েছে কেউ জানতেন না। মৃত্যুর আগে থেকেই তালাবন্দি হয়েছিল। কয়েকটি ট্রাঙ্কে রয়েছে সেগুলি। সেই ট্রাঙ্কগুলি এই অবসরে খুলে ফেলেছেন সন্দীপ এবং সৌরদীপ। লকডাউনের ৩২ দিন ধরে ঘরের মধ্যে থাকা এই সব মনিমুক্তোর সন্ধান করে চলেছেন সন্দীপবাবু। আর বাঙালি অপেক্ষা করছে সেই গুপ্তধনের জন্য যা প্রকাশ হলে দেখে নতুন করে আবার বিস্ময় জাগবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.