সন্দীপ্তা ভঞ্জ: এক ঢাল রেশমি চুল, সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞায় নিঃসন্দেহে এক অন্য মাত্রা যোগ করে। কিন্তু লাবণ্য নিজের ছাঁচে গড়ে তুললেন সৌন্দর্য্যের আরেক সংজ্ঞা। যেখানে রাপুঞ্জেলের মতো একঢাল চুল ছাড়াও সে সুন্দর। অনন্যা। নিজের ১৮ ইঞ্চি লম্বা চুল যিনি অনায়াসেই অকাতরে কেটে ফেলতে পারেন ক্যানসার রোগীদের জন্য।
‘গিফট অব ম্যাজাই’-এর ডিলা স্বামীকে ভালবাসার উপহার দিতে গিয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল তাঁর সাধের একঢাল রেশমি চুল। তবে ‘বাস্তবের ডিলা’ লাবণ্য একেবারে বিনামূল্যে, ভালবাসার খাতিরে দান করে দিলেন তাঁর দীর্ঘাঙ্গী কেশ। হ্যাঁ, ভালবাসার খাতিরেই। ওই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যাদের শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ। ক্যানসার আক্রান্তদের কেমোথেরাপি চলাকালীন যে মাথার চুল ঝরতে শুরু করে, তা বোধহয় অল্পবিস্তর সবারই জানা। তাঁদের জন্যই এগিয়ে এলেন লাবণ্য দত্ত। এই সফরে অবশ্য লাবণ্যর সঙ্গী রোমিং পার্টনার ভ্লগ। সাহসিনীর এই প্রতিটা পদক্ষেপের মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হবে যাদের হাত ধরে।
পেশায় লাবণ্য রেডিও জকি। পেশাগতভাবে গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত থাকলেও, ‘ন্যাড়া’ শব্দটা বিশেষ ভাবায়নি তাঁকে। কারণ তাঁর কাছে শারীরিক সৌন্দর্য্যের চেয়েও বড় মনের সৌন্দর্য। একজন মহিলার ক্ষেত্রে মাথা মুড়িয়ে ফেলা নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ। তবে, পিছিয়ে যাননি তিনি। দিন সাতেক আগেই একেবারে গোড়া থেকে চুল কেটে ফেলেছেন।
তা এরকম সাহসী পদক্ষেপের চিন্তাভাবনা চাগাড় দিল কবে RJ লাবণ্যর মাথায়? তাঁর কথায়, সোনালি বেন্দ্রের একটি টুইট পড়ার পর। লাবণ্য বলেন, “প্রথমে আমি জানতামই না, যে রিয়েল হেয়ার উইগ কী! মার্কিন মুলুকে ক্যানসার ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সোনালি বেন্দ্রে একটা টুইট করেছিলেন তাঁর হেয়ার স্টাইলিস্টকে নিয়ে। তখন জানতে পারি রিয়েল হেয়ার উইগ ঠিক কী!”
“ভারতে এরকম অনেক মন্দির রয়েছে, যেখানে মানসিক পূরণ হলে মানুষ চুল দান করেন। আর সেই চুলের গোছা সেসব মানুষগুলোর কাজেই লাগানো হয় না যাঁদের প্রয়োজন। বাণিজ্যিক স্বার্থেই সেই চুল চালান করে দেওয়া হয় অন্য দেশে। আন্তর্জাতিক বাজারে আবার ভারতীয় চুলের বেশ কদর। সেই থেকেই মাথায় এই ভাবনা আসা। কিন্তু চুল দান করা যায় কলকাতায় এরকম কোনও সংস্থা না থাকায়, মুম্বইয়ের Cope With Cancer নামে এক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি। যারা সত্যিকারের চুল দিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত বাচ্চাদের জন্য উইগ তৈরি করে। সে এক বছর আগের কথা। কিন্তু তখন শর্তানুযায়ী চুল লম্বাই ছিল না দান করার মতো”, জানান লাবণ্য।
তবে এই একবছরে কিন্তু লাবণ্যের চুল অনেক বেড়ে উঠেছিল। রিয়েল হেয়ার উইগের জন্য যখন কেশদান করার মনস্থির করেছিলেন তখন ১২ ইঞ্চিরও কম লম্বা ছিল তাঁর চুল। একবছরে সাধের চুলগুলো বড় যত্নে বাড়িয়ে তুলছিলেন। হালকা কাটছাঁট, মানে বিউটিশিয়ানদের ভাষায় ‘ট্রিমিং’ ছাড়া আর কিছুই করাননি। অবশেষে প্রায় মাসখানেক পর তা বেড়ে ১৮ ইঞ্চি হয়। অতঃপর, দিন সাতেক আগে সেই একঢাল চুল কেটে ফেলেন লাবণ্য। সেই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যাঁরা মারণ রোগাক্রান্ত হয়ে হারিয়েছেন নিজের চুল।
লাবণ্যর এই উদ্যোগে উৎসাহ জুগিয়েছেন মা-বাবা, সমর্থন পেয়েছেন কাছের মানুষগুলোর থেকেও। তাঁর কথায়, “জীবদ্দশায় অন্তত এটা জেনেই খুশি যে আমার উদ্যোগে কারও মুখে হাসি ফুটতে পারে।” লাবণ্যর জন্য উচ্ছ্বসিত রোমিং পার্টনার ভ্লগের দুই উদ্যোক্তা রানু ঘোষ এবং অর্পিতা দে-ও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.