সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের (Kazi Nazrul Islam) ‘কারার ওই লৌহ কপাট/ ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’-এর ‘রহমানীয়’ রিমেক নিয়ে শোরগোল সর্বত্র। অগ্নিযুগে বিপ্লবের এই গানের সুর বিকৃতি নিয়ে দুই বাংলায় চরম ক্ষোভের পরিবেশ। বাংলাদেশের (Bangladesh) সঙ্গীতশিল্পীদের দাবি, গানের প্রাণটাকেই হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কবি নজরুল ইনস্টিটিটিউটের তরফে জানানো হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের (Liberation War 1971) সময়ই শুধু নয়, বহু আগে থেকেই দখলদার পাকিস্তান সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে এই দেশাত্মবোধক এই গানটি গাওয়া হতো। উজ্জীবীত করা হতো স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের ময়দানে উদ্দীপনা এবং সাহস জুগিয়েছিল।
সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের (AR Rahman)দেওয়া এই গানে সুরটিকে গানের বাণীর সঙ্গে পরস্পরবিরোধী বলে মনে করছেন বাংলাদেশের সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ও অনুরাগীরা। তাঁরা এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলছেন, এখানে সুরের বিকৃতি ঘটেছে। এর মাধ্যমে নজরুলকে হেয় করা হয়েছে। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক শাহিন সামাদ। তিনি বলেছেন, ”এটা আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত গান। যা আমাদের বাঙালি জতির আবেগ। এ আর রহমানের মত একজন বিশ্বমানের শিল্পী এই গানের সুর বিকৃতি করলেন কী করে? এটা তিনি করতে পারেন না। আমরা নিজেরা তো এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি, পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিবাদ জানানো হবে। আমি মনে করি শিল্পীদের একত্র হয়ে এর প্রতিবাদ জানানো জরুরি।”
বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পী সুজিত মোস্তফা বলেছেন, ‘‘এরকম একটা বিষয় ঘটুক, আমি কখনওই চাইনি। এটি নজরুলের নিজের সুর করা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। এই গানে এভাবে হাত দেওয়া মানে ক্রিয়েটরদের মরাল রাইটের আর কোনও অস্তিত্ব রইল না। এ. আর রহমান এবং তাঁর সঙ্গে যারা অংশ নিয়ে এই কাণ্ডটি করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
কবি-গবেষক-সাংবাদিক মোহাম্মদ নূরুল হকের মতে, ‘‘সুরকে অবশ্যই বাণীর অনুগামী হতে হবে।’ তাঁর কথায়, ‘‘বাণী যদি পূজার হয়, তবে সুর দ্রোহের হলে সুরকারের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। আবার বাণী বিপ্লব বা সংগ্রামের হলে সুর যদি হয় মিনমিনে, তাহলেও লোকে সুরকারকে দুষবে। এক পশুর কাছে প্রকৃতি কখনোই আরেক পশুর ভাষা আশা করে না। অর্থাৎ প্রকৃতির রাজ্যের সর্বত্রই নিয়মের শাসন। ব্যতিক্রম অন্যায় হিসেবেই বিবেচ্য।’’ সাহিত্যিক-সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য, দেশে ব্রিটিশ শাসন থাকলে, তারাও এই গান শুনে ঘুমিয়ে পড়তেন। সেটাও এক ধরনের কৃতিত্ব। আমাদের দেশের উৎসবের গানের মতো মনে হল। ধান কাটার গান, গ্রামীণ খেলাধূলার গান বা নৌকাবাইচের গানের মতো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.