এ নাটক দেখায় প্রতিটা শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এবং এই নাটকে আছে সমাজ বদলানোর অঙ্গীকার। সম্প্রতি মিনার্ভা থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হল ‘প্রোটেক্টর’। লিখছেন ইন্দ্রজিৎ আইচ।
প্রতিদিন আমাদের সমাজে ঘটে চলেছে গর্ভস্থ ভ্রূণ হত্যা, শিশুদের ওপর অত্যাচার। সেরকমই একটি ঘটনাকেন্দ্রিক এই নাটক ‘প্রোটেক্টর’। নোটো নাট্যদলের এই দু’ঘণ্টার নাটকটি সম্প্রতি মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হল।
আমেরিকায় চাকরি করে সন্ময়। তার স্ত্রী আর দেড় বছরের শিশুপুত্র টিঙ্কুকে নিয়ে সুখের সংসার। টিঙ্কু খুব দুষ্টু। বাবার এটা-সেটায় হাত দেয়। একদিন সন্ময় অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছিল। ঠিক তখনই তার ল্যাপটপে টিঙ্কু হাত দেয়। ওইটুকু শিশুর জানার কথা নয় বাবার কাজের মূল্য। তখনই সন্ময় টিঙ্কুকে ধরে সজোরে ঝাঁকায়, তার ফলে টিঙ্কুর নাক দিয়ে ক্রমাগত রক্তপাত হতে থাকে। এই অবস্থায় সন্ময় ও তার স্ত্রী মুক্তা টিঙ্কুকে নিয়ে আমেরিকার হাসপাতালে যায়। সেখান থেকে খবর যায় আমেরিকান চাইল্ড প্রোটেকশনে। তারা টিঙ্কুর বাবা-মায়ের কাছে জানতে চায় কীভাবে ঘটল এই ঘটনা। মুক্তা জানায় আমি সে সময় রান্নাঘরে রান্না করছিলাম। কিন্তু সন্ময় যে শিশুটিকে ধরে সজোরে ঝাঁকিয়েছিল তা আড়াল করে মিথ্যে কথা বলে। আমেরিকার আইন অনুসারে আমেরিকান চাইল্ড প্রোটেকশন অথোরিটি টিঙ্কুর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে শিশুর প্রতি অবহেলা ও অত্যাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে টিঙ্কুর দায়িত্ব তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে নিয়ে চাইল্ড প্রোটেকশনের পছন্দ করা কোনও দ্বিতীয় অভিভাবককে দেওয়া হবে। এর ফলে বাবা-মা সাজাপ্রাপ্ত হতে পারে।
[এলা এখন কেমন, নতুন নাটকে দেখালেন পরিচালক কৌশিক ঘোষ]
এই ঘটনায় সন্ময় ও মুক্তা আতঙ্কিত হয়ে আমেরিকার এক অভিজ্ঞ আইনজীবী শান্তালাল ওয়ানির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর জন্য সন্ময় তার পারিবারিক বন্ধু অভীক-সুতপার (স্বামী-স্ত্রী) সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করে। পরবর্তী সময় সন্ময় ও সুতপার বিয়ের আগে ভালবাসার কথা প্রকাশ্যে আসে। সুতপা সন্ময়ের প্রাক্তন প্রণয়ী। কলেজে পড়ার সময় কলকাতায় প্রেম-ঘনিষ্ঠতা তার ফলে সুতপা গর্ভবর্তী হয়। তখন সন্ময় বেকার, বাবা নেই, যার ফলে সন্ময়ের চাপে গর্ভস্থ ভ্রূণকে নষ্ট করে সুতপা। এর পর বড় চাকরি নিয়ে সন্ময় আমেরিকায় আসে ও মুক্তাকে বিয়ে করে। আর সুতপা পরে বিয়ে করে অভীককে। কিন্তু তার বিবাহিত জীবনে সুপতা আর মা হতে পারেনি। এই রাগটা সুতপার ভিতরে জ্বলছিল। সন্ময়ের মুখোমুখি হতে এবার আমেরিকায় এসে প্রতিশোধ নেবার পালা। তার কারণ সন্ময় আমেরিকায় আসার পরেই সুতপা-অভীকও চাকরি সূত্রে আমেরিকায় আসে। সুতপা নিশ্চিত টিঙ্কুর ওপর বলপূর্বক আঘাত করেছে সন্ময়। এবং শেষমেশ একথা স্বীকার করে সন্ময়। টিঙ্কুর দায়িত্ব পায় সুতপা। চাইল্ড প্রোটেকশনের আইন অনুযায়ী মুক্তা ও টিঙ্কু সুতপাদের বাড়িতে আশ্রয় পায়। জেল হয় সন্ময়ের। কিন্তু টিঙ্কু সেখানে বেবি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়। তার বাবার এই পাপের বোঝা মাত্র দেড় মাসের টিঙ্কুকে কতদিন বইতে হবে তা কেউ জানে না।
অসম্ভব একটি ভাল নাটক ‘প্রোটেক্টর’। সত্যিই এই ভারতবর্ষে কত ভ্রূণ কত শিশু এভাবেই মারা যায়। এর জন্য যে বাবা-মা দায়ী তাদের কথা কেউ জানে না। শাস্তির কোন বিধান নেই। আইনের জটিলতা-অর্থের কারবারিতে “বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।” এই সমাজ এই বাস্তব জীবনে ‘প্রোটেক্টর’ হওয়া উচিত সব শিশুরই। আমেরিকায় আইন খুব কঠোর। এখানেও তা হওয়া উচিত। সুদীপ্ত ভৌমিকের লেখা এই নাটক ‘প্রোটেক্টর’ সকল দর্শকের মনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো নাড়া দিয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। ময়ূরী মিত্র (ঘোষ)-এর নির্দেশনায় টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এই নাটক। অমর চট্টোপাধ্যায়ের মঞ্চ ও শিল্প নির্দেশনা যথাযথ। সুদীপ সান্যালের আলো ও অমর চট্টোপাধ্যায় ও ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহসংগীত ভাল লাগে। তবে এ নাটক যখন শিশুকেন্দ্রিক তাই শিশুর কান্নার আওয়াজ এবং কলেজ লাইফে সন্ময় সুতপার প্রেম-ঘনিষ্ঠতার দৃশ্য এ নাটকে রাখা যেতেই পারত!
এবার আসি অভিনয়ে মুক্তা (রুম্পা দুবে), সন্ময় (ইন্দ্রজিৎ কুমার), সুতপা (ময়ূরী মিত্র), অভীক (অমর চট্টোপাধ্যায়) এবং কান্তালালওয়ানি (নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়)-এর অভিনয় প্রশংসনীয়। সব মিলিয়ে ময়ূরী মিত্র (ঘোষ)-এর নির্দেশনায় নোটোর নতুন নাটক ‘প্রোটেক্টর’ আগামী প্রজন্মকে নতুন ও সুস্থভাবে বাঁচার সুরক্ষা দেবে।
[দিল্লিতে এক মঞ্চে ঋতুপর্ণা-কেজরিওয়াল, শুরু বাংলা সিনে উৎসব]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.