সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতার গান-কলকাতার প্রাণ। এফএম স্টেশনে ১০৬.২ টিউন করলেই ভেসে উঠত এই সুর। কিন্তু এবার আর সেখানে শোনা যাবে না কিছুই। যে রেডিও স্টেশন বাংলা গানের ঝাঁপি খুলে দিত বাঙালি শ্রোতাদের সামনে, তা বন্ধ হয়ে গেল। আর রেডিওর ওপার থেকে কেউ বলবেন না, “আপনারা শুনছেন আমার ১০৬.২ এফএম।”
শুক্রবারই এল খারাপ খবরটা। অফিসে ঢোকার মুখেই বিল্ডিংয়ের মালিক আটকে দেন ওই এফএম স্টেশনের কর্মীদের। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, বন্ধ হয়ে গিয়েছে আমার এফএম। তাই এর অফিস বলে আর কিছু নেই। মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে কর্মীদের। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে খবর। শ্রোতারাও হতবাক। বাংলা গানের ঠিকানা হিসেবে এত বছর ধরে যে এফএম স্টেশনটি বাঙালির মনের মণিকোঠায় স্থান পেয়েছিল, তার আর কোনও চিহ্নই রইল না শহরের বুকে। রাতারাতি যেন বাংলা গানকে গলা টিপে হত্যা করা হল। কিন্তু কেন তৈরি হল এই পরিস্থিতি? তাহলে ফিরতে হবে কয়েক মাস আগে।
আমার এফএম পরিচালনার দায়িত্বে ছিল হিটস এফএম রেডিও ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। আর মার্কেটিংয়ের দেখভাল করত এয়ারটাইম মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড (AMSI রেডিও)। আর্থিক কারণে অজুহাত দেখিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই এফএম স্টেশনটি বন্ধ করতে চাইছিল হিটস। কিন্তু আমার এফএমের কর্মীরা ভালবাসা আর আবেগের জায়গাকে এত সহজে বিদায় দিতে চাননি। তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে এফএম স্টেশন চালানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। যদিও সে প্রস্তাবে সাড়া মেলেনি। এরপরই গত অক্টোবর অর্থাৎ মাস চারেক আগে বন্ধ হয়ে যায় কর্মীদের বেতন। তারপর টানা চার মাস বেতন ছাড়াই কাজ করেন কর্মীরা। বাংলা গান আর বাঙালি শ্রোতাদের ভালবেসে নিরলস পরিশ্রমে তাঁরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন আনন্দ। মোমবাতির নিচের অন্ধকারের মতো আড়ালেই রয়ে গিয়েছে কর্মীদের আত্মত্যাগ। কিন্তু ছবিটা একেবারে পালটে যায় গত ২৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে। কর্মীরা জানতে পারেন, ট্রান্সমিশন বন্ধ করে দেওয়ায় অফ এয়ার হয়ে গিয়েছে আমার এফএম। আসলে হিটস এফএম রেডিও ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড কর্মী ও শ্রোতাদের অজান্তেই গত ২৩ ডিসেম্বর লাইসেন্স সারেন্ডার করে দিয়েছিল।
কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি ও সম্প্রচার মন্ত্রকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও এফএম স্টেশনের লাইসেন্স সারেন্ডার করা হলে তাদের এক মাসের নোটিস পিরিয়ড দেওয়া হয়। সেই সময়ের মধ্যে কোম্পানির তরফে কর্মী ও শ্রোতাদের জানিয়ে দিতে হয় যে, স্টেশনটি বন্ধ হতে চলেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই হয়নি বলে দাবি কর্মীদের। খবরটা তাঁদের কাছে হঠাৎই এসে পৌঁছেছিল। প্রিয় এফএম স্টেশনকে হারিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ শ্রোতারাও। দুঃখপ্রকাশ করেছেন সংগীত জগতের কলাকুশলীরাও। আমার এফএমের ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিশেষ কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে। অফ এয়ার হওয়া স্টেশন নতুন ইনভেস্টরের হাত ধরে ফিরবে কি না, তা সময় বলবে। কিন্তু আপাতত প্রাণহীন হয়ে পড়ল কলকাতার বাংলা গানের আঁতুড়ঘর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.