যাত্রার পোস্টার
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: অপরাধীদের পিছনে ধাওয়া করাই তাঁদের কাজ। সমাজের বিভিন্ন অংশে ক্রাইম কমানোর জন্য তাঁরা সদা সচেষ্ট। উর্দি পরেও উঠসব, অনুষ্ঠানে তাঁদের ডিউটি করতে হয়। তারপরেও তাঁরা সময় বার করে মঞ্চে সাড়া ফেলেছেন।
যাত্রার মঞ্চে পুলিশকর্মীরা। ছোট, বড় পর্দাতে হামেশাই দেখা যায় খাকি উর্দি পড়ে কর্তব্যপরায়ণ পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করতে অনেক বিখ্যাত অভিনেতা, শিল্পীদেরদের। কিন্তু আসল পুলিশ খাকি পোশাক ছেড়ে মেকআপে মঞ্চে অন্য চরিত্রে অভিনয় করছেন, এটা ব্যতিক্রমী। তবে ব্যাপারটা অসম্ভবও নয়। এটাই করে দেখাচ্ছেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের কয়েকজন পুলিশ কর্মী।
যাত্রা অভিনয়ের মাধ্যমে লোকশিক্ষা, জনসংযোগ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে তাঁরা তৈরি করেছেন একটি যাত্রাদল। যার নাম ‘শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ যাত্রা সমাজ’। দলটির প্রাণপুরুষ সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী তারিণী চক্রবর্তী। পুরুলিয়ার বাসিন্দা তারিণীবাবু অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ আধিকারিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে বদলি হয়ে আসেন আসানসোলে। অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় পুলিশের একটি নিজস্ব যাত্রাদল ছিল। দলটির নির্দেশনা সহ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারিণীবাবু। উদ্দেশ্য ছিল, যাত্রার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কর্তব্য পালনের পাশাপাশি লোকশিক্ষা, জনসংযোগ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা।
তারিণীবাবু বলেন, “পুলিশের কাজের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতি, অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল। ইতিমধ্যে যাত্রা, নাটক ছাড়াও অভিনয় করেছি কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমাতেও। পাশাপাশি কীর্তন, বাউল, রবীন্দ্র সংগীত গানও করি।” তিনি অভিনয়, সংস্কৃতি জগতে সপ্তসূর্য চক্রবর্তী নামে পরিচিত। পূর্ব বর্ধমান থেকে বদলি হয়ে আসানসোলে আসার পর তারিণীবাবুর উদ্যোগেই আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ লাইনে তৈরি হয় ‘শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ যাত্রা সমাজ’ নামে নতুন একটি যাত্রা দল। এই দল গড়তে সহযোগী হিসেবে তিনি পাশে পান পুলিশ কর্মী বাবলু চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত রায়, কুণাল রায়ের।
এখন এই দলের সদস্য প্রায় ১৫ জন। সবাই পুলিশ কর্মী। পোস্টিং রয়েছেন বিভিন্ন থানা এলাকাতে। তারিণীবাবু বলেন, “কাজের জন্য মহড়ার সময় সেভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু যেহেতু অভিনয়টা সবাই আন্তরিকভাবে ভালবাসেন, তাই কাজের পর সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে মহড়ায় অংশ নেন।” উখড়া পুলিশ আউট পোস্টে পোস্টিং থাকা এএসআই প্রাণকৃষ্ণ প্রামাণিক ও সাব-ইন্সপেক্টর বাবলু চট্টোপাধ্যায় এই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রাণকৃষ্ণবাবু বলেন,”বছরে অন্তত দুটি ভিন্ন ধর্মের যাত্রায় আমরা অভিনয় করি। সেই সব পালা মঞ্চস্থ হয় পুলিশ কমিশনারেটর বিভিন্ন থানায় কালীপুজো, দুর্গাপুজো সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বছরে কমবেশি ২০ থেকে ২৫ টি পালা মঞ্চস্থ হয় প্রতি বছর।”
ইতিমধ্যে পুলিশ আধিকারিক ও যাত্রা প্রেমিকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে ‘নবাব দরবারে সাধক রামপ্রসাদ’ ও ‘গাঁ আমার মা’ নামে যাত্রপালাগুলি।” গত ৩ ডিসেম্বর আসানসোল পুলিশ লাইনে মঞ্চস্থ হয় ‘বিসর্জনে দেবীর বোধন’ নামের পালা। এই পালাতে নায়কের ভূমিকাটি ছিল দ্বৈত্য। একটি চরিত্রের নাম হাঁদারাম অন্যটি বাদশা। দুটো চরিত্রেই অভিনয় করেছেন তারিণীবাবু। পুলিশ কর্মীদের নিখুঁত অভিনয় দেখে তাজ্জব দর্শকরাও। পুলিশ ছুলে ১৮ ঘা। এরকম একটা প্রবাদ চালু আছে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ব্যতিক্রমী পুলিশও আছে। তেমন কথাই বলছেন দর্শকদের একটা অংশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.