সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২২ সালের গোড়ায় চলে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandya Mukherjee)। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহমান সুরেলা মোহময় আবেশের স্রষ্টার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়েছিল বাঙালি। সেই মৃত্যুর পর বছর দেড়েকও কাটেনি, আরেক নতুন অভিঘাতের শিকার সন্ধ্যা-অনুরক্ত বাঙালি। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গীতশ্রীর লেক গার্ডেন্সের বাড়ি। সেখানে মাথা তুলে দাঁড়াবে কোনও বহুতল। আপাতত ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের আবাসের ছায়ামাত্র সেখানে পড়ে রয়েছে। নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বাড়ির ধ্বংসাবশেষের ছবি। সেই ছবি দেখে মনখারাপ নেটিজেনদের।
কোনও প্রত্নসভ্যতার চিহ্নের মতোই এখনও রয়ে গিয়েছে বহু স্মৃতিবিজড়িত শিল্পীর প্রায় নিশ্চিহ্ন বাড়িটির সামান্য চিহ্ন। দিব্যি পড়া যাচ্ছে বাড়ির ফলকলিপিতে লেখা ‘এস. গুপ্তা’। ইতিউতি উঁকি দিচ্ছে বড়ে গুলাম আলির ছবি (যে ছবি ইতিমধ্যেই সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে নিজের বাড়িতে সসম্মানে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এক নেটিজেন)! সেগুলিও মুহূর্তেই মুছে যাবে। ঝাঁ চকচকে বহুতলের আড়ালে রয়ে যাবে ফেলে আসা স্মৃতির জলছাপ।
শিল্পীর প্রয়াণের পর তাঁর পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার, এতে আর কারও কিছু বলার থাকে না। এই ক্ষোভ নেহাতই আবেগজনিত। দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাঙালির জীবনযাপন। তবু যে নামগুলি এখনও বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে রয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম স্বর্ণযুগের প্রতিনিধিরা। হেমন্ত-মান্না-শ্যামলের পাশাপাশি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ আজও প্লে লিস্টে জ্বলজ্বল করে। ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘কে তুমি আমারে ডাকো’র মতো গানে মজে রয়েছে নয়া প্রজন্মও। তাই সেই মানুষটির স্মৃতির স্মারক এভাবে মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা শুনে বিষাদগ্রস্ত বাঙালি।
হয়তো তাঁদের মনে হয়েছিল, শিল্পীর স্মৃতিকে ধরে রাখতে বাড়িটির সংরক্ষণ করা হবে। যেভাবে বহু শিল্পী-সাহিত্যিক বা অন্য খ্যাতিমানদের ক্ষেত্রে হয়। কিন্তু তা হল না। ভাইরাল হওয়া ছবিগুলিতে ফুটে থাকা শূন্যতা তাই বিঁধছে সন্ধ্যার অগণিত ভক্তের বুকে। প্রশ্ন উঠছে, অন্য কিছু কি করা যেত না? যা স্মৃতির স্মারক হয়ে রয়ে যেত চোখের সামনে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.