সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA),জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (NRC) বিরোধিতায় আগেই প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছেন বাংলার বিদ্বজ্জনদের একাংশ। হয়েছে একাধিক আলোচনা, বিতর্কসভা। কিন্তু সেই বিতর্কসভা যদি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে হয়, তাহলে তার মান আলাদা, গুরুত্বও বেশি। চলতি বছর বইমেলা শেষের আগের দিন, শনিবার অপর্ণা সেনের উদ্যোগে ‘সিটিজেন্স স্পিক’-এর মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। সকলেই সরব হলেন NRC-CAA বিরোধিতায়। চিরাচরিত যুক্তি-তর্কের মধ্যেও অন্যরকম সুর তুললেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের ষড়যন্ত্র, এই অভিযোগে সরব হলেন পরমব্রত। বললেন, “এ নিয়ে এখনও যদি নাগরিক হিসেবে আমরা সরব না হই, তাহলে কখন হব? প্রয়োজনে গলার স্বর আরও চড়াতে হবে, পথে নামতে হবে। আন্দোলনে নেমে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট নিয়েও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এবিষয়ে আমার একটি নির্দিষ্ট মতামত আছে। এনআরসি করতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। CAA‘র জন্য়ও প্রচুর অর্থ খরচ হবে। এখন এগুলো সবই তো নাগরিকদের করের টাকা। আন্দোলনে বাস পোড়ানো উচিৎ হয়নি, অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। কিন্তু তা মেনে নিয়েই এটা মনে রাখতে হবে যে ওগুলোর ক্ষেত্রে যদি ‘সরকারি সম্পত্তি’র ক্ষতি হচ্ছে ভেবে কুম্ভীরাশ্রু ফেলা হয়, তাহলে NRC-CAA’র লাগু করতে গিয়ে যে খরচ, তা জনগণের সম্পত্তি।”
অর্থাৎ, অভিনেতা-পরিচালক বলতে চাইলেন, এমনিতেই সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার একটা লড়াই চলছেই। তার উপর জনগণেরই অর্থ খরচ করেও তাঁদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে জোড়া ফলায় বিদ্ধ দেশবাসীর একটা বড় অংশ।
পরমব্রতর আরও বক্তব্য, “একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার এসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু যে জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়েছে, তার মধ্যে এই নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষজনের ভোটও তো আছে। তাঁরা তো এতদিন ধরে কর দিয়ে এসেছেন। যথাযথ নাগরিকের পরিচয় দিয়েছেন। অথচ এখন তাঁদের ভাবতে হচ্ছে যে, দেশের নাগরিক হিসেবে আদৌ তাঁরা বিবেচিত হবেন তো? আবার বলা হচ্ছে, নাগরিক হতে গেলে বিশেষ নথি জমা দিতে হবে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এদেশে থাকতে হবে। কিন্তু তারপরও তো অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। ” তাঁর মতে, এর বিরোধিতায় সকলকে শামিল হতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। প্রশ্ন করতে হবে, সুর চড়াতে হবে।
এদিনের মঞ্চে পরমব্রতর পাশে বসে তাঁর বক্তব্য সমর্থন যুগিয়ে চলছিলেন মূল উদ্যোক্তা অপর্ণা সেন নিজে। মঞ্চে ছিলেন গায়ক অনুপম রায়, রূপম ইসলাম। তাঁরাও এ বিষয়ে নিজেদের মতামত পেশ করেছেন। শনিবার বইমেলার এই আলোচনা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন লেখক-বাগ্মী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তিনিও নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় সরব হন। বলেন, “প্রয়োজনীয় নথির ভিত্তিতে কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি আরও মানবিকভাবে দেখা উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.