এই শহরে অনেক রং দেখেছেন তিনি। সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলেন যাত্রা। সেই ‘একাই একশো’ নচি এবার নতুন গান আর আবির নিয়ে শহরের পথে এই বসন্তে। কেন, তা জানতে চাইলেন সোমনাথ লাহা।
তাঁর ভাবনা বরাবরই ব্যাতিক্রমী ও সৃজনশীলতায় ঘেরা। সেই কারণেই তাঁর গানে ও লেখায় বারংবার ফিরে ফিরে এসেছে সমাজ জীবনের চিত্রপট। আক্ষরিক অর্থে সমাজের দর্পণ তাঁর গান। তিনি নচিকেতা চক্রবর্তী। এক কথায় যিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। গায়ক, সংগীত পরিচালক, গীতিকার এবং লেখক।
আসলে নচিকেতা একটি আবেগের সমার্থক, অমূল্য যন্ত্রণাবোধের প্রতীক। পায়ে পায়ে সংগীতজগতে ২৬টি বসন্ত অতিক্রম করেও একইরকমভাবে জনপ্রিয়। সমানভাবে জুড়ে রয়েছেন মানুষের মনের মণিকোঠায়। আর তাইতো তাঁর বোধ ধারণকারীরা হয়ে উঠেছে এক একটি আগুনপাখি। এহেন নচিকেতার কলম দিয়ে বসন্ত এসেছে অন্য আবেশে, বসন্তের সুরকে তিনি তাঁর সুরের মূর্ছনায় রাঙিয়ে তুলেছেন নানাভাবে। তাইতো নচিকেতাই গেয়ে উঠতে পারেন ‘এই আগুনে হাত রাখো আর ফাগুনে মুখ ঢাকো…’। আবার তিনিই লিখেছেন ‘পৃথিবীকে যদি রাঙাতে না পারিস, আমাকেই রাঙা, পৃথিবী ভেবে…’।
কিন্তু বসন্ত উৎসবের দিনে নচিকেতাকে কখনও দেখা যায়নি প্রকাশ্য রাজপথে। তবে এবার সেই নিয়ম ভাঙতে চলেছেন তিনি। বসন্তের দিনে রাস্তায় নেমে রঙের উৎসবে মাতবেন নচিকেতা। শুধু তাই নয়, নগরের পথে পথে নাচ-গানের সঙ্গে থাকবে আবিরও। এবারই তা প্রথম ঘটতে চলেছে। আর এ প্রসঙ্গে নচিকেতার অভিমত, “মানুষ ক্রমশ সংস্কৃতির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সেই জন্যই সাংস্কৃতিক চেতনাবোধকে ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় নামা দরকার। কারণ এই মোবাইলের যুগে সৌজন্য, সাংস্কৃতিক চর্চা, শুভেচ্ছা বিনিময় সবকিছুই কেমন ডিজিটাল দুনিয়ায় আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বসন্ত উৎসব তো মানুষকে কেন্দ্র করে। তার ভিতরকার রংকে ঘিরে। পারস্পরিক রঙের বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে এক অভিন্ন মহামিলনের বন্ধন।
শহরের রাজপথে তো বহুদিন ধরেই নানারকম পতাকার রং দেখেছে। এবার তাই আবিরের রং নিয়ে পথে নামছি।” তবে নচিকেতার এই রং নিয়ে পথে নামা দোলের দিন নয়, দোলের ঠিক আগের দিন। অর্থাৎ ৮ মার্চ (রবিবার) শিল্পীর বেলগাছিয়ার বাড়ির সামনে থেকে বিকেল বেলায় বার হবে এই ‘দোলযাত্রা’। আর তার পরে শহরের পথে পথে, অলিতে-গলিতে পরিক্রমা, তবে রাজপথে সেদিন নচিকেতা একা নন, সঙ্গে থাকবে নচিকেতার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী সুমিতা চক্রবর্তীর প্রতিষ্ঠান ‘শৈল্পিক ডানা’ এবং নচিকেতার ফ্রেন্ডস ফোরাম ‘আগুনপাখি’। ডান্স অ্যাকাডেমির সদস্যদের নৃত্যর পাশাপাশি থাকবে আগুনপাখির সদস্যদের গান। আর সঙ্গে অবশ্যই নচিকেতা আর আবির।
প্রসঙ্গত এই অনুষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা হলেন নচিকেতার স্ত্রী সুমিতা চক্রবর্তী। একটু অন্যরকমভাবে বসন্ত উৎসব উদযাপনের এই ভাবনায় সুমিতার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছেন নচিকেতা। সঙ্গে অবশ্যই থাকবে নচিকেতার কন্যা ধানসিড়ি চক্রবর্তী। এখন জোরকদমে চলছে শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং টাচের ছোঁয়া। তবে চমক এবারেও দেবেন নচিকেতা, রাজপথে এই বসন্ত উৎসব পালনের মাঝে তাঁর গলায় শোনা যাবে নতুন গান। আর তা নিয়ে এখনই সবটা খোলসা করতে চান না তিনি। নচিকেতার কথায়, “রং নিয়ে একটা নতুন গান বেঁধেছি। তবে আমার গানে তো শুধু দোলের রঙের ছোঁয়া থাকবে না, অন্য কিছুও থাকবে। ওই দিন সেটা শোনাব”।
অতএব বোঝাই যাচ্ছে শুধুমাত্র বসন্তের রং নয়, জীবনবোধের রঙের ছোঁয়াও বেরিয়ে আসতে চলেছে সেদিন নচিকেতার গানের মধ্যে দিয়ে। তবে তাঁর সঙ্গে এই ‘দোলযাত্রা’য় তাঁর কোনও সহশিল্পী তথা সংগীত জগতের বন্ধুদের দেখা যাবে কি না জানতে চাওয়া নচিকেতার সপ্রতিভ উত্তর, “আরে আমিই তো আছি। আমি এখনও একাই একশো।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.