ছবি - শুভাশিস রায়
নিরুফা খাতুন: লকডাউনের ক্ষত কাটিয়ে ফের ছন্দে ফিরছে যাত্রাপাড়া। যাত্রার বুকিং মিলতেই অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী পুরনো পেশায় ফিরে আসছেন। করোনার (Coronavirus) প্রকোপে গত বছর থেকে ধুঁকছিল যাত্রাশিল্প। লকডাউন ওঠার পরও কোভিড (COVID-19) আতঙ্কে যাত্রাপাড়ায় বুকিং কম ছিল। তবে এবার মরশুমের শুরুতেই শোয়ের চাপ রয়েছে। অনেক যাত্রাদল একদিনে একাধিক জায়গা থেকে বুকিং পাচ্ছে।
একটা সময় বাংলায় যাত্রাপালার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। চলচ্চিত্র জগতের অনেক নামী শিল্পীও যাত্রায় অভিনয় করতেন। সারা বছর উত্তর কলকাতার চিৎপুরে যাত্রাপাড়ায় ব্যস্ততা থাকত। রথের দিন থেকে যাত্রাদলগুলো নতুন স্ক্রিপ্ট নিয়ে হাজির হতেন। এখন আর যাত্রাপাড়ায় সেই চেনা ছবি দেখা যায় না। গ্রামবাংলায় আর আগের মতো যাত্রাপালা হয় না। এখন হাতে গোনা কয়েকটি জেলা যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
কিন্তু করোনার পর এই শিল্প একেবারে হারিয়ে যেতে বসেছিল। শো বন্ধ থাকায় অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী ইতিমধ্যেই পেশা বদলে ফেলেছেন। দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021) থেকে যাত্রার মরশুম শুরু হয়। এ বছর মহালয়া থেকে অনেক যাত্রাদল শো শুরু করে দিয়েছে। যেমন শ্রীচৈতন্য অপেরা। এ বছর এই অপেরা ‘কান্নায় ভেজা মায়ের আচঁল’ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। শ্রীচৈতন্য অপেরার ডিরেক্টর ও অভিনেত্রী রুমা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘লকডাউন ওঠার পর থেকেই যাত্রার বুকিং পাচ্ছি। অন্য বছর পুজোর পর থেকে শো পেতাম। এবার মহালয়া থেকে শো করছি। এখনও পর্যন্ত ৬টি শো হয়ে গিয়েছে। বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে বেশি বুকিং মিলছে। প্রতিদিন নতুন নতুন জায়গা থেকে বুকিং আসছে। লকডাউনের পর থেকে অনেক শিল্পী, কলাকুশলী এই পেশা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এখন তাঁরা আবার ফিরে আসছেন।”
একই বক্তব্য আনন্দ ভারতী অপেরার। এই যাত্রাদলের অভিনেতা নভোনীল রায়চৌধুরি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার শোয়ের চাপ বেশি। কালীপুজো (Kali Puja 2021) থেকে আমাদের শো চলছে। একদিনে দু’টি করেও শো করতে হচ্ছে। হাতে এখনও ১৭টি শো রয়েছে। এগুলি মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে বুকিং করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে শোগুলি রয়েছে।”
তবে অনেক জায়গায় প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় শো বাতিল হওয়ার অভিযোগও তুলেছে যাত্রাদলগুলি। যাত্রাশিল্পী রুমা দাশগুপ্ত বলেন, “১২ নভেম্বর বর্ধমানে একটি শো ছিল। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় শো বাতিল করতে হয়েছে।” তবে করোনা পরবর্তী আবহে পরিস্থিতি যে অনেকটা বদলেছে তা মানছে যাত্রাপাড়া। এবার অন্তত যে সংখ্যক বুকিং আসছে তাতে আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন যাত্রা কোম্পানির মালিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.