সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালি মানেই ফুটবল। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান নিয়ে চায়ের কাপে তুফান না তুললে ভাত হজম হয় না বঙ্গসন্তানদের। আর ফুটবল মানে যেসব তারকাদের কথা মনে পড়ে তাঁদের মধ্যে অন্যতম চুনী গোস্বামী। বৃহস্পতিবার ফুটবলপ্রেমীরা চোখের জলে বিদায় দিয়েছেন তাঁকে। আর যাঁদের তাঁর সঙ্গে আলাপ করার সৌভাগ্য হয়েছে, তাঁদের ভাঁড়ারে তো রয়েছে এই তারকাকে নিয়ে গল্পের সম্ভার। এমনই একজন হলেন কবীর সুমন।
সম্প্রতি ফেসবুকে তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর যখন সাড়ে চার বছর বয়স, তখন তিনি কলকাতায় আসেন। আসার বছর খানেকের মধ্যে তিনি ফুটবলের সঙ্গে পরিচাত হন। তাঁর পাড়র বন্ধুরা ছিল মোহনবাগানের সমর্থক। বাঙালির কাছে ফুটবল মানে শুধু ময়দানে যুদ্ধ নয়। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মধ্যে জোর তর্কাতর্কি না হলে ফুটবল জমে না। সেই সময়ে তা ছিল আরও বেশি। দুই দলের সমর্থকের মধ্যে কথা বন্ধ হয়ে যেত। কবীর সুমন জানিয়ছেন, তবে এই যুদ্ধের মধ্যেও ইস্টবঙ্গলের সমর্থকরা একজন ফুটবলারের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তিনি চুনী গোস্বামী। নিজের দিকে ঝোল টেনে ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা বলতেন, চুনী গোস্বামী মোহনবাগানে খেলল কী হবে? আসলে তিনি বাঙাল। তাই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কোনও গোল করেন না।
এ তো গেল সর্বজনের কথা। কিন্তু কবীর সুমন নিজে চুনী গোস্বামীর অনুরাগী ছিলেন। “ছেলেবেলায় যদি একজনও হিরো থেকে থাকেন তিনি চুনী। আমার কৈশোর অবধি ওর ওই হাসি মুখচা আলোয় আলো করে রেখেছিলেন।” এই ফুটবল তারকার প্রতি তাঁর অনুরাগ এতটাই ছিল যে তিনি চুনী গোস্বামী যে গাছের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন সেই গাছের পাতা ছিঁড়ে এনে শক্ত অঙ্ক বইয়ের মধ্যে রাখতেন। সরস্বতীর ফুলের চেয়েও চুনীর গাছের প্রতি আস্থা ছিল তাঁর প্রবল। এমন একজন মানুষকে তাই যখন হাতের কাছে পেয়েছিলেন, আশপাশের পরিবেশ ভুলে সটানন পায়ে পড়ে গিয়েছিলেন কবীর সুমব। সেই গল্পই বলেছেন তিনি ফেসবুকে।
তখন কবীর সুমনের নামডাক হয়েছে। একটি পূর্ববঙ্গের ক্লাব তাঁকে চ্যারিটি শোয়ের জন্য পারফর্ম করতে ডেকেছিলেন। সেখানেই অকস্মাৎ সাক্ষাৎ চুনী গোস্বামীর সঙ্গে। গ্রিনরুমে যখন কবীর সুমন বসে বসে গিটারে সুর ভাঁজছেন, তখন একজন এসে খবর দেয়, ‘সুবিমলবাবু আপনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চান। সুবিমল গোস্বামী।’ ক্লাবের সদস্যে মুখে এমন কথা শুনে গিটার নিয়েই দৌড় লাগান প্রখ্যাত গায়ক। গিয়েই সোজা চুনী গোস্বামীর পায়ে পড়ে যান তিনি। এদিকে এত তাড়াতাড়ি ঘটনাগুলো ঘটে যায়, যে চুনী গোস্বামীও হতভম্ভ হয়ে যান। তখন তিনি কবীর সুমনকে তুলতে ব্যস্ত। এদিকে সুমনও নড়বেন না। এতদিন পর গুরুর দর্শন পেয়েছেন তিনি। এত সহজে ছাড়লে হয়? পরে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে খুব হাসাহাসি করেছিলেন তাঁরা। সেই দিনটা ছিল কবীর সুমনের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দিন, অস্কার জয়ের দিন।
কবীর সুমন বলেছেন, ‘চুনী আমার ইনস্পিরেশন। আমি যে আধুনিক বাংলা গান থেকে বাংলা খেয়ালে এলাম, এর ইনস্পিরেশন চুনী গোস্বামী।’ তাঁর গোটা কৈশোর, প্রথম যৌবন জুড়ে রয়েছেন ফুটলার চুনী, রনজি ট্রফির ব্যাট হাতে মাঠ কাঁপানো চুনী। ফুটবলের যুদ্ধে যতই বাঙাল-ঘটি থাক, চুনী গোস্বামী ছিলেন সবার। যতদিন তিনি খেলেছেন ‘রংবাজ’-এর মতো খেলেছেন, যতদিন বেঁচেছেন ‘রংবাজ’-এর মতো বেঁচেছেন। তাই তাঁর প্রয়াণে কবীর সুমনের মন খারাপ ঠিকই। কিন্তু শোক করতে নারাজ তিনি। তাঁর মতে, চুনী গোস্বামীর মতো এমন এক ব্যক্তিত্বকে শেষ বিদায় জানানো উচিত অশ্রুজলে নয়, হাসিমুখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.