গৌতম ব্রহ্ম: এমন যুগলবন্দি আগে কখনও দেখেনি কলকাতা।‘উইলিয়ন পাইপ’ বনাম ‘কানুন’।
একটি যন্ত্রে উঠছে নেশা লাগা আইরিশ প্রেমের সুর। অন্যটি ছবি আঁকছে নীল নদ, পিরামিডের। ইউনেস্কোর (UNESCO) হেরিটেজ তালিকায় জায়গা করে নেওয়া উইলিয়ন পাইপের সঙ্গে মিশরীয় তারযন্ত্র ‘কানুন’-এর অভিনব যুগলবন্দি (Partnership)।
কী অদ্ভূত দ্বৈরথ! যাতে শামিল আরও অনেক লোকযন্ত্র। কনসার্টিনা, ক্ল্যারিওনেট, দারবুকা, দোতারা, আড়বাঁশি, কাহন। এমন যুগলবন্দি আগে কখনও দেখেনি তিলোত্তমা। আইরিশ (Irish) ব্যান্ড ম্যাডাগনের সঙ্গে অভিসারে গেল মিশরীয় (Egyptian) ‘মওলাইয়া’। রাজস্থানি সুরে মিশে গেল রাঙামাটির বাউল, জলঙ্গির কাওয়ালি। বিশ্বসুরের মোহনা হয়ে ওঠা গল্ফগ্রিন সেন্ট্রাল পার্কে ‘মিরস অফ রাজস্থান’-এর সুরে কোমর দোলালেন ম্যাডাগনের জো-জেসনরা। মওলাইয়া আমের অ্যান্টনীর সঙ্গে গেয়ে উঠলেন দেবলীনা ভৌমিক, প্রাণেশ সোমরা।
৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল ‘সুর জাঁহা’। শেষ হল ৫ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বশান্তির এই কনসার্টে এবারের অন্যতম আকর্ষণ ছিল উত্তর আয়ারল্যান্ডের ব্যান্ড ‘মড্যাগান’ ও মিশরীয় ব্যান্ড ‘মওলাইয়া’। লোকযন্ত্রের বৈচিত্রে দু’টি দলই নজর কেড়েছে সঙ্গীতপ্রেমীদের। মড্যাগানে ব্যবহৃত ‘উইলিয়ন পাইপ’ পাঁচ বছর আগেই ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। সঙ্গী ছিল কনসার্টেনিয়া।
অন্যদিকে মওলাইয়াদের ব্যান্ডের মধ্যমনি হয়ে উঠেছে সন্তুরের পূর্বপুরুষ ‘কানুন’, বিশ্বের প্রথম সুরে বাঁধা যন্ত্র। তবে সবচেয়ে নজর কেড়েছে মওলাইয়াদের দারভিশ ঘূর্ণন নৃত্য। আমের অ্যান্টনীর দানাদার গলায় যেন তুতেনখামেনের রহস্য! অন্যদিকে, ম্যাডাগানের গান দর্শক-শ্রোতাদের নিয়ে গেল ভিনগ্রহে। মনে হল যেন কল্পপর্বতের ওপাড় থেকে ভেসে আসা সুর ভাসিয়ে দিচ্ছে গল্ফগ্রিনের সবুজ গালিচা। যার সাক্ষী থাকলেন একাধিক দেশের রাষ্ট্রদূত।
অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা অমিতাভ ভট্টাচার্য জানালেন, ২০১১ সাল থেকে এই কনসার্ট। প্রতিবারই অনুষ্ঠানের শেষ দিনে দেশ-বিদেশের শিল্পীরা একসঙ্গে পারফর্ম করেন। বিশ্বশান্তির পেয়ালা হয়ে ওঠা মঞ্চ বুঝিয়ে দেয়, মানচিত্রের দাগগুলো মুছে দিতে পারে একমাত্র সঙ্গীত। সুরের কোনও সীমানা হয় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.