ছবি: ইনস্টাগ্রাম
জোরকদমে চলছে ইমন চক্রবর্তীর বসন্ত উৎসবের প্রস্তুতি। তার অবসরেই বিদিশা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অকপট গায়িকা।
ইমনের বসন্ত উৎসব
এর শুরু মায়ের হাত ধরেই। আমি এখন যে স্কুল চালাই সেটা মায়ের শুরু করা। এক বসন্তে মা তাঁর স্টুডেন্টদের নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনের গলিতে একটা ছোটখাটো খাট, তাতে চাদর পেতে, সাউন্ড বক্স চালিয়ে গানের অনুষ্ঠান করলেন। সেই শুরু। আমাকে এখন লোকজন চেনে, তাই স্পনসর পাই বলে বড় করে করতে পারি। এই বছরও লিলুয়াতে করছি অন্যান্য বারের মতোই। ৯ মার্চ এই অনুষ্ঠানে ঊষা উত্থুপ আসতে রাজি হয়েছেন, থাকছে আরও অনেকে।
মায়ের কথা
সাড়ে তিন বছর বয়সে প্রথম মায়ের সঙ্গে স্টেজে পারফর্ম করি। সেই আমার শুরু। মায়ের কাছেই প্রথম তালিম। খুব কড়া ছিলেন আমার মা, প্রায় তালিবানি শাসন যাকে বলে। মায়ের কাছে ছিল আগে গান, তারপর পড়াশোনা। কিছুতেই রেওয়াজ মিস করা যেত না। এমনকী, মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার দিনও সকালে রেওয়াজ করে তার পর সিলেবাস ঝালিয়ে পরীক্ষা দিতে গেছি। মা লিলুয়ার ডন বস্কো স্কুলে গানের টিচার ছিলেন। মা স্কুল থেকে ফেরার আগে, বাবার সঙ্গে ছিল আমার যত দুষ্টুমি আর অবসরের সময়। কলিংয়ের ঘণ্টা বাজলেই এক দৌড়ে হয় বই না হলে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে যেতাম। যেন ওটাই করছিলাম। মায়ের এই গানের শাসন নিয়ে মনে মনে খুব বিরক্ত হতাম। আসলে এখন বুঝতে পারি, মা অনেক কিছু করতে চেয়েছিলেন নিজের জন্য, কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকে সেটা আর সম্ভব হয়নি, তাই আমার মধ্যে দিয়ে নিজের স্বপ্ন দেখতেন। আজকে আমার এই সাফল্য মা দেখে যেতে পারেননি। আমার কষ্ট হয়, জানি মায়ের চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না, কারণ আমার জন্য মায়ের চেয়ে বেশি পরিশ্রম কেউ করেনি।
গানের প্রেমে
গান গাইতে ভালোবাসতাম বরাবরই, কিন্তু রাজকুমার রায়ের কাছে যখন গান শিখতে শুরু করি সেই আমার রবীন্দ্রগানের সঙ্গে পরিচয়। এক বর্ষার দিনে প্রথম রবীন্দ্রসংগীত শিখেছিলাম ‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে’– ব্যস, সেই যে রবীন্দ্রগানের প্রেমে পড়লাম, আর ফেরা নেই।
একলা চলা
আজ থেকে বারো-চোদ্দো বছর আগে আমার স্ট্রাগল শুরু। প্রথমেই কেউ সুযোগ দেয়নি। আর তখন সোশ্যাল মিডিয়াও ছিল না। আমাকে ভালোবাসতেন দুই-তিনজন, তাঁরা আমাকে সাহায্যও করেছেন, কিন্তু লড়াইটা আমি বেসিক্যালি একা লড়েছি। মাঝে মাঝেই নানা কিছু ব্যাকফায়ার করেছে। প্রথমত, কলকাতার নই, বাইরে থেকে আসা। তার ওপর জিন্স পরে, নাচতে নাচতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাই। আমার চরিত্র নিয়েও নানা কুৎসা রটানো হয়েছে। কেরিয়ারের শুরুতে জাজমেন্টের সম্মুখীন হয়েছি। এখন বিয়ে করার পর লোকজন চুপ করে গেছে। আর তখন প্রতিবাদ করেছি, তবে এখন বুঝি, কাজ করে যাওয়াটাই আসল উত্তর। তবে মা ২০১৪-য় চলে যাওয়ার সময় খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মা যেন চলে গিয়েও আমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন। আসলে আমার জীবনে কিছু বেনো জল ঢুকে পড়েছিল। মা চলে যাওয়ার পর, তারা সকলেই সরে পড়ল। ফলে শাপে বর হওয়া যাকে বলে। অবশ্য এত সমস্যার সম্মুখীন না হলে বোধহয় আমার মধ্যে এই স্পার্ক তৈরি হত না।
প্লেব্যাক ও অন্যান্য
ক্যাসেট চলে গিয়ে যখন সিডির চল শুরু হয়েছে, তখন থেকে আমার উত্থান শুরু। এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। শিল্পীদের হাতে খুব পাওয়ারফুল অস্ত্র, এবার তারা সেটাকে কীভাবে ব্যবহার করবে সেটা তাদের ব্যপার। নিজের প্রোডাকশনে আমি এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করতে চাই। নিজের মতো করে গান গাইতে চাই। তবু সিনেমায় প্লেব্যাকের লোভ আমার খুব। আসলে প্লেব্যাকই তো আমাকে লোকের কাছে পরিচিত করেছে। অনুপম রায়ের সুরে ‘প্রাক্তন’-এর গান, জাতীয় পুরস্কার। অনুপম রায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, সুরজিৎ-এর সঙ্গে আমার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলো গাওয়া।
নতুনদের পাশে ইমন
আমার নতুনদের গান শুনতে খুব ভালো লাগে। আমি তাদের কাল্টিভেট করতে চাই। ‘নতুন প্রতিভার খোঁজে’ সেই উদ্দেশ্যে আরও এক পা এগিয়ে যাওয়া। নতুনদের সুযোগ না দিলে ইন্ডাস্ট্রি এগোবে কী করে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.