Advertisement
Advertisement
Tiner Tolowar Review

পাঁচ দশক পর ফিরে দেখা উৎপল দত্তর স্মৃতিমাখা ‘টিনের তলোয়ার’

গত কয়েকদিনে এই নাটক নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। তবে এখন সেসব অতীত।

Here is the review of Tiner Tolowar, Utpal Dutt's great creation reprised by Mukhomukhi
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:April 8, 2024 12:48 pm
  • Updated:April 8, 2024 12:48 pm

চারুবাক: উৎপল দত্ত’র ‘টিনের তলোয়ার’ (Tiner Tolowar) নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী রবীন্দ্রসদনে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৯৭১ এর আগস্ট মাসের কোনও এক তারিখে। তৎকালীন ‘যুগান্তর’ পত্রিকার প্রতিনিধি হয়ে দেখেছিলাম নাটকটি। স্মৃতির ধুলো সরিয়ে সেই সন্ধ্যা ফিরে দেখলে এখনও কানে বাজে সদ্য তরুণী ছন্দা চট্টোপাধ্যায় গ্রাম্য অশিক্ষিত মেয়ে ময়না সেজে খিনখিনে গলায় কোমরে ঝুড়ি নিয়ে কলকাতা শহরের গলিতে আনাজ বেচছে। ওঁর গানের গলাটিও ছিল মন কেড়ে নেওয়ার মতো।

Tiner-Tolowar-1

Advertisement

ধুঁকতে থাকা নাট্যদলের নতুন নাটকের জন্য এই গ্রাম্য মেয়েকেই পছন্দ হয় বাংলার গ্যারিক বেণীমধবের। তার পর মেয়েটিকে নিজের কব্জায় নিয়ে পুরোদস্তুর পেশাদার অভিনেত্রী করে তোলার কারুকাজ ভুলতে পারিনি। হ্যাঁ, তখনকার দিনে নব্য বাঙালিবাবুদের অনেকে নাট্য দলের পোশাকি মালিক হতেন মঞ্চের অভিনেত্রীদের নিয়ে ফুর্তি করার ধান্দায়। বেণীমাধব ভালো করেই জানতেন বীরকৃষ্ণ দাঁ মশাই ময়নাকে পেলে তাঁর নাট্যচর্চায় তেমন বাধা আসবে না। উৎপল দত্তের (Utpal Dutt) কলমে তৎকালীন পেশাদারি রঙ্গমঞ্চের জটিল ও অন্ধকার দিকগুলোর পাশাপাশি বেণীমাধবের নাটিপ্রেম ও দেশপ্রেমের ব্যাপারটিও উঠে এসেছিল।

শ্যামবাজার মুখোমুখির আয়োজনে সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় উৎপল দত্তর মূল বক্তব্যের যেমন খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি, তেমনই তাঁর আধুনিক প্রায়োগিক ভাবনার পোশাক চড়ানোয় বেশ কিছু জায়গা আরও উজ্জ্বল ও মনোগ্রাহী হয়েছে। দু-তিনটি উদাহরণ – রাস্তার মেয়ে ময়নার মধ্যে অভিনেত্রী সত্তার জাগরণের মুহূর্তটি তিনি আলোর ছোট্ট রং বদল এবং ময়নাবেশী আনন্দরূপার মুখের নির্বাক চলনের সূক্ষ্ম পরিবর্তন দিয়ে বুঝিয়েছেন। প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাইভ মিউজিক অবশ্যই এই প্রযোজনার বাড়তি পাওনা, হ্যাঁ পুরাতন সুরকার প্রশান্ত ভট্টাচার্যর কাজ মনে রেখেও একথা বলছি।

[আরও পড়ুন: ‘আলিয়া কোথায়?’, ৬ কোটির গাড়িতে ভক্তরা হামলে পড়তেই রেগে কাঁই রণবীর]

নাটক নিয়ে গত কয়েকদিনে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। তা সরিয়ে রেখেই বলছি, সেট ডিজাইন (সুমন) ও বিলু দত্তর সেট নির্মাণ উৎপল দত্তর তুলনায় নিশ্চয়ই আধুনিক মনস্ক এবং পুরনো কলকেতার অনেকটাই ধরা পড়ে। আর রয়েছে শিল্পীদের সামগ্রিক বা বলতে পারি অনসম্বল অভিনয়ের সৌন্দর্য। উৎপল দত্তর নিজস্ব ধারাকে কিছুমাত্র অনুসরণ না করেও দেবশংকর হালদার তাঁর নিজস্ব স্টাইলেই কিঞ্চিৎ বদল ঘটিয়ে বেণীমাধবের চরিত্রের অন্তরের দ্বন্দ্বকে ছুঁতে পেরেছেন। বেণীমাধব নিশ্চিতভাবে তাঁর অভিনয় জীবনের একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

Tiner Tolowar 1

বীরকৃষ্ণর ভূমিকায় শংকর চক্রবর্তী বারবার মনে পড়িয়ে দিচ্ছিলেন পুরনো প্রযোজনার সমীর মজুমদারকে। শংকর তাঁর নিজস্ব লয়ে বেঁধেছেন বীরকৃষ্ণর ‘মেয়েমানুষের’ প্রতি ‘পিরিত’ এবং নাট্যদল চালানোর কূটনীতিকে। তাঁর চলনবলনে বাবুয়ানির কাপ্তেনিপনা এসেছে দারুণ। ময়নারুপী আনন্দরূপার সঙ্গে ছন্দাদির তুলনা চলে না, করা উচিতও নয়। বেশ কয়েকটি দৃশ্য ছাঁটার ফলে ময়নার ব্যবহারিক বদলগুলোর ক্রমপরিবর্তন ধর পড়ল না। দায় তাঁর নয়, সেটা পরিচালকের।

হরবল্লভের চরিত্রে অসীম রায় চৌধুরী (পুরনো নাটকে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়), বসুন্ধরার ভূমিকায় পৌলমী চট্টোপাধ্যায়(পুরনো নাটকে শোভা সেন), প্রিয়নাথবেশী রাজু বেরা (পুরনো নাটকে অসিত বসু) নির্দ্বিধায় বলবো তাঁদের সেরাটি দেবার চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি। পুরনো প্রযোজনার সঙ্গে কোনওভাবেই এই নতুন ভাবনার প্রযোজনার তুলনা টানা নীতিগত ভাবে উচিত নয়। তবুও দুটি কথা না বললেই নয়। উৎপল দত্তের ‘ম্যাগনাম অপাস’কে সাম্প্রতিক করে তোলার কী খুবই প্রয়োজন ছিল? ‘টিনের তলোয়ার’ তো এমনিতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ নাটক। সেখানে ‘মারিচ সংবাদ’ ও ‘নরক গুলজার’ নাটকের অত্যন্ত জরুরি ও জনপ্রিয় দুটি গানকে জুড়ে দিয়ে কোনও বাড়তি মাত্রা যোগ হল কী? মনে হয় হল না। নিশ্চিতভাবে নীল ও সুমন অভিনীত দুটি গানের দৃশ্য দর্শককে ‘চেতনা’ দলের পুরনো নাটকের কথাই মনে করাবে। তবে তা ‘টিনের তলোয়ার’ কোনওভাবেই সমৃদ্ধ করছে না। একবার ভাববেন সুমন!

[আরও পড়ুন: শাড়ি পরেই মারকাটারি অ্যাকশন, রোমহর্ষক ‘পুষ্পা দ্য রুল’-এর টিজারে দুরন্ত আল্লু অর্জুন]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement