সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলার পেশাদার নাট্যমঞ্চের সার্ধশতবর্ষে নট-রঙ্গ নিয়ে আসছে সোহন বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ও নির্দেশিত হরর কমেডি, ‘ছায়াপথের শেষে’। এককালে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত নাট্যমঞ্চ, গ্যালাক্সি থিয়েটার, আজ পোড়ো বাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। থিয়েটার বন্ধ হয়ে গেছে বহুকাল আগে। এখন পায়রা, বাদুড়, সাপ, ইঁদুর, প্রভৃতির বাস সেখানে। পড়ে আছে ভাঙা সেট সেটিং, ছেঁড়া পর্দা, ভাঙাচোরা আলোর সামগ্রী আর প্রায় বাতিল হয়ে যাওয়া একটা মানুষ, রামশরণ, যে আজও এই থিয়েটারের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই প্রায় ভূত হয়ে যাওয়া মানুষটা দিন কাটায় ভূতেদের সঙ্গে। এই নাটমঞ্চের শ্রেষ্ঠ নট জ্ঞানেন্দ্র চৌধুরী, তার স্ত্রী ও সেযুগের বিখ্যাত অভিনেত্রী বিভা চৌধুরী, ডাকসাইটে নটী ননীবালা ও আরো বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী মৃত্যুর বহু বছর পর আজও রয়ে গিয়েছে এই হলে, ভূত হয়ে।
বর্তমানে ভূত আর মানুষের সহাবস্থানের মিলনক্ষেত্র এই পোড়ো গ্যালাক্সি থিয়েটার। এরা স্বপ্ন দেখে, আবার একটা দিন ফিরে আসবে- যখন এই মঞ্চ প্রাণ ফিরে পাবে, আলো জ্বলবে, পর্দা উঠবে, অভিনয়ের নবরসে সিক্ত হবে উপস্থিত দর্শকমন্ডলী। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। পুঁজিবাদের অমোঘ গ্রাসে লোকাল বিধায়ক দুর্নীতিগ্রস্ত দেবল পাইনের মধ্যস্থতায় হলের মালিকানা চলে যায় অলোক বাজোরিয়ার হাতে। ব্যবসাদার বাজোরিয়া হল গুঁড়িয়ে দিয়ে উদ্যোগ নেয় মল বানানোর। গর্জে ওঠে ভূত-মানুষের জোট। শুরু হয় এক অসম লড়াই- থিয়েটারের স্বার্থে। এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে দেবলের চেলা স্বপন বিশ্বাস। ঘটনার ঘনঘটায় এক তীব্র সত্যের দিকে এগিয়ে চলে নাটক।
সম্পূর্ণ মজার মোড়কে বাঁধা এই প্রযোজনা ধীরে ধীরে এক সংগ্রামী চেহারা নেয়- প্রতিবাদ জানায় ঐতিহ্য ভেঙে ফেলার সমস্ত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। গৌতম হালদার, সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জীব সরকার, অঙ্কিতা মাঝি, প্রভৃতি এই প্রযোজনায় আছে সৌমিক-পিয়ালীর তীব্র ব্যঞ্জনাময় মঞ্চসজ্জা, আছে বাদল দাসের জাদুকরী আলো, মহ: আলির মনোমুগ্ধকর রূপসজ্জা, শঙ্কর জানার রঙীন পোশাক পরিচ্ছদ, মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া গানের সাথে দীপান্বিতা মন্ডলের কোরিওগ্রাফিতে বেশ কয়েকটি নাচ, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ, সত্যিকারের ম্যাজিক, প্রভৃতি। অধুনা লুপ্ত বাংলার পেশাদারী রঙ্গমঞ্চকে এই প্রযোজনার মাধ্যমে নট-রঙ্গের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতেই এই প্রয়াস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.