Advertisement
Advertisement

Breaking News

Arthur Conan Doyle

হোমসের স্রষ্টা নিজেই খুনি! কোনান ডয়েলকে ঘিরেও রহস্য কিছু কম নয়

গল্পের মতোই রহস্যের কুয়াশা ঘিরে আছে লেখকের জীবনকেও।

Did Sir Arthur Conan Doyle kill for the Baskervilles story
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:June 9, 2024 5:10 am
  • Updated:June 9, 2024 5:17 pm  

বিশ্বদীপ দে: ‘‘গুরু তুমি ছিলে বলেই আমরা আছি।’’ লন্ডনের এক রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই স্বগতোক্তি করেছিলেন প্রদোষ মিত্তির। বাঙালি পাঠকদের প্রায় সকলেই আকৈশোর ফেলুদা ভক্ত। সেই ‘গুরু’ কাকে গুরু মানতেন একথাও পাঠকদের অজানা নয়। লন্ডনের (London) ওই রাস্তা যে বেকার স্ট্রিট। এখানেই থাকতেন শার্লক হোমস (Sherlock Holmes)। তাঁর প্রতি নতমস্তকে সেলাম জানিয়েছিলেন ফেলুদা (Feluda)। শুধু ফেলুদা কেন, বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অসংখ্য গোয়েন্দাদের মধ্যেই রয়েছে হোমস সাহেবের ছায়া ও অনুপ্রেরণা।

যদিও ওই রাস্তায় ২২১বি নম্বরের কোনও বাড়ি আদপে ছিল না। পরবর্তী সময়ে নম্বরটি দেওয়া হয় এক বিশেষ বাড়িকে, যেখানে গড়ে ওঠে শার্লক হোমস মিউজিয়াম। সে যাক, এ তো গেল এক কাল্পনিক চরিত্রের কথা। যার শরীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘন হয়েছে মিথের মিহি কুয়াশা। ‘জ্যান্ত’ হয়ে উঠেছেন হোমস। কিন্তু তাঁর স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল (Arthur Conan Doyle)? তাঁকে ঘিরেও যে আশ্চর্য সব ঘটনার মিথ। ফলে তাঁর নিজের সৃষ্টি করা চরিত্রটি যেমন কল্পনা থেকে হয়ে উঠেছে ‘বাস্তব’, তেমন তিনি নিজেও রহস্যময়তার আলোছায়ায় ক্রমেই হয়ে উঠেছেন এক এমন চরিত্র, যাকে ঘিরে তৈরি হতে পারে কোনও নতুন রোমহর্ষক গোয়েন্দা কাহিনি।

Advertisement

শনিবার, ২২ মে ডয়েল সাহেবের ১৬২তম জন্মদিন। স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করার সময় তাঁর পরিবারের কারও পক্ষেই কল্পনাও করা সম্ভব ছিল না একদিন এই শিশুর খ্যাতি এই ছোট্ট পরিধি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। পেরিয়ে যাবে দেশকালের গণ্ডি। বলা হয়, পৃথিবীতে পাঁচটি চরিত্রকে সকলেই চেনে। তাদেরই অন্যতম শার্লক হোমস। সুমেরু থেকে কুমেরু, পৃথিবীর সর্বত্র এই নামটা কমবেশি পরিচিত। রহস্যভেদ করতে যার জুড়ি নেই। পরিত্যক্ত দেশলাই কাঠি কিংবা অস্পষ্ট হাতের ছাপ থেকেও তিনি পড়ে ফেলতে পারেন অপরাধীর হাল হকিকত।

Arthur Conan Doyle

[আরও পড়ুন: শপথ গ্রহণের আগে মোদির ‘চায়ে পে চর্চা’, সম্ভাব্য মন্ত্রী কারা?]

আসলে তো এই সব রহস্য তিনি ভেদ করেননি। করেছিলেন তাঁর স্রষ্টা। নিজে স্যার ওয়াল্টার স্কটের মতো ঔপন্যাসিক হতে চেয়েও শেষমেশ শার্লক হোমসের সঙ্গে মিলেমিশে রহস্যের জট ছাড়াতে হয়েছে ডয়েলকে। পাতার পর পাতা জুড়ে সাজাতে হয়েছে রোমাঞ্চের কারুকাজ। কিন্তু তাঁর জীবনে অপরাধ ও রোমাঞ্চের উপাদান কেবল লেখার টেবিলেই শেষ হয়ে যায়নি। খোদ ডয়েলের দিকেই যে উঠেছে দু’টি সাঙ্ঘাতিক অভিযোগ! এক, সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় হোমস কাহিনি ‘দ্য হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিলস’ (The Hound of the Baskervilles) তিনি ‘চুরি’ করেছেন তাঁর লেখক বন্ধু বারট্রাম ফ্লেচার রবিনসনের থেকে। আরও ভয়ংকর দ্বিতীয় অভিযোগটি। রবিনসন যাতে সেকথা কখনও কাউকে বলতে না পারেন, তাই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। হ্যাঁ, খুনের অভিযোগ তোলা হয়েছে ডয়েলের বিরুদ্ধে!

সাল ২০০০। নতুন সহস্রাব্দের শুরুতেই প্রথমবারের জন্য উঠে এল এমন অভিযোগ। সাড়া পড়ে গেল চারদিকে। সে কী! বাস্কারভিলসের গা ছমছমে আখ্যানের পিছনে রয়েছে এমন এক নির্মম হত্যার ‘সত্যি’ আখ্যান! কিন্তু কে করলেন এমন অভিযোগ? ভদ্রলোকের নাম রজার গ্যারিক। পেশায় মনস্তত্ত্ববিদ ও লেখক। প্রায় এক দশক ধরে তিনি গবেষণা করছিলেন রবিনসন ও ডয়েলের সম্পর্ক নিয়ে। আর গবেষণা করতে করতেই নাকি পরদার আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া সত্যিটা তিনি খুঁড়ে বের করে নিয়ে এসেছেন একশো বছরের পুরনো পৃথিবীর বুক থেকে।

[আরও পড়ুন: মোদির শপথে চাঁদের হাট, থাকবেন মুইজ্জু,হাসিনা-সহ ৭ রাষ্ট্রপ্রধান, রইল পূর্ণাঙ্গ তালিকা]

Ghost

ঠিক কী জানিয়েছিলেন তিনি? সংক্ষেপে বলা যাক। ডার্টমুরের নিকটবর্তী দক্ষিণ ডেভনের বাসিন্দা রবিনসন ওই অঞ্চলের এক ভুতুড়ে কুকুরের গা ছমছমে কিংবদন্তি শোনান ডয়েলকে। পরে আগ্রহী লেখককে তিনি ঘুরিয়ে দেখান ডার্টমুরের বিভিন্ন এলাকা। কেবল ঘুরিয়ে দেখানোই নয়। উপন্যাসের গোটা প্লটটাই নাকি তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। সেই প্লট বেমালুম আত্মসাৎ করেন ডয়েল। গ্যারিকের আরও দাবি, কেবল ওই অপকর্মটুকু করেই ক্ষান্ত হননি হোমস স্রষ্টা। বরং তাঁর মনে জাঁকিয়ে বসেছি‌ল ভয়। যদি একদিন রবি‌নসন মুখ খোলেন। সুতরাং তাঁকে সরিয়ে দিতেই হবে পৃথিবী থেকে। অবশ্য এই খুনের আরও একটা মোটিভ ছিল‌। আর এখানেই অবতীর্ণ হন আরও এক চরিত্র। তিনি রবিনসনের স্ত্রী গ্ল্যাডিস। তাঁর সঙ্গে নাকি সেই সময় পরকীয়ায় মেতে উঠেছিলেন ডয়েল। ফলে প্রেমিকের পরামর্শে সেই মহিলা নাকি দীর্ঘদিন ধরে লডানাম নামের বিষপ্রয়োগ করে মেরে ফেলেন রবিনসনকে। যতই তাঁর কবরে লেখা থাক তিনি টাইফয়েডে মারা গিয়েছেন, আসলে সবটাই নিছক ‘আইওয়াশ’। খ্যাতির শীর্ষে থাকা প্রভাবশালী ডয়েল সাহেব সব ধামাচাপা দিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে তাঁর পরকীয়া কিংবা প্লট চুরির অপরাধও সেই কবরের সঙ্গেই মাটিতে মিশে যায়।

এই হল অভিযোগ। যা রীতিমতো চ্যা‌লেঞ্জ জানাতে পারে বইয়ের পাতায় পড়া থ্রিলার কাহিনিকে। কিন্তু ইতিহাসের স্বীকৃত সত্য? সেখানে কী পড়ে আছে? জানা যাচ্ছে, ১৯০১ সালে গলফ খেলতে গিয়ে একসঙ্গে চারদিন কাটান ডয়েল ও রবিনসন। সেই সময়ই উঠে আসে ডার্টমুরের সেই রহস্যময় কুকুরের মিথ। মনের কোণে জমাটি রহস্যকাহিনির সন্ধান পেয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন ডয়েল। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয় দু’জনে মিলেই লিখবেন গল্পটি। যদিও ‘দ্য স্ট্র্যান্ড’ পত্রিকায় প্রকাশের সময় দেখা গেল লেখক হিসেবে কেবল ডয়েলের নামই রয়েছে। আর এইখানেই দানা বাঁধতে থাকে রহস্য।

Sherlock

স্বয়ং রবিনসনের গাড়ির কোচ বহুদিন পরে এক রেডিও সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার বলেছিলেন, গাড়িতে যেতে যেতে দুই বন্ধুকে তিনি একটি পাণ্ডুলিপির কথা বলতে শুনেছিলেন। ‘অ্যান অ্যাডভেঞ্চার অন ডার্টমুর’। পরে সেই লেখার একটি কপিও উদ্ধার করে ফেলেন গ্যারিক। উপন্যাসটির লেখক রবিনসন! তাঁর মতে, দু’টি উপন্যাসের মধ্যে যা মিল তা নিছক কাকতালীয় হতেই পারে না। শুধু গ্যারিক নন, এরপর আরও বেশ কয়েক জন দাবি তোলেন এই রহস্যের সমাধান করতে হবে। এমনকী, কবর থেকে রবিনসনের দেহাবশেষ তুলে জিন পরীক্ষা করে দেখার আরজিও জানানো হতে থাকে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের এক সিনিয়র ডিটেকটিভও উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

তবে অভিযোগ তোলা যত সহজ, প্রমাণ করা ততটা নয়। বিশেষ করে তা যদি হয় শতাব্দীপ্রাচীন কোনও ঘটনা। তাই আজও রহস্যের আড়ালেই রয়ে গিয়েছে পুরো বিষয়টি। এদিকে গ্যারিক যা যা দাবি করেছেন, তা যে নির্ভেজাল নয় এমনটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এই ক’বছরে। প্রথমত, পরকীয়ার অভিযোগটা একেবারেই ধোপে টেকে না। কেননা সেই সময়ই ডয়েল তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হতে চলা জিন লেকির প্রেমে মগ্ন। পরবর্তী জীবন এই মহিলার সঙ্গেই কাটিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত, শার্লক হোমস সোসাইটির এক সদস্য জানিয়েছেন গল্পটির সহ-লেখক হিসেবে রবিনসনের নামও দিতে চেয়েছিলেন ডয়েল। কিন্তু ততদিনে শার্লক হোমসের সঙ্গে কোনান ডয়েল এমন এক কিংবদন্তি যুগলবন্দি হয়ে গিয়েছেন, ‘দ্য স্ট্র্যান্ড’ পত্রিকা সেপ্রস্তাবে সম্মত হতে পারেনি। তবে সেটা না হলেও উপন্যাসটি বই হয়ে বেরনোর পর গোড়ার দিকে রয়্যালটির একটি অংশও নাকি পেতেন রবিনসন। আর স্বয়ং রবিনসন? তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন প্লটটির আইডিয়া তিনি ডয়েলকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আর কোনও রকম ইঙ্গিত তিনি দেননি যা থেকে ‘চুরি’র তত্ত্ব খাড়া করা যায়। ১৯০৭ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রবিনসন চূড়ান্ত সম্মানই দেখিয়েছেন খ্যাতিমান বন্ধুকে।  সেই হিসেব মিলিয়ে দেখলে ডয়েলের তাঁকে খুন করতে চাওয়ার কোনও কারণ তৈরিই হয়নি।

Holmes

কাজেই আমাদের প্রিয় লেখকের হাতে লেগে থাকা কাল্পনিক রক্তের দাগকে মন থেকে মুছে ফেলাই ভাল। হয়তো এরহস্যের সমাধান কোনও দিনই সম্ভব নয়। তবু শেষে এসে, হে পাঠক, স্মরণ করা যাক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা শার্লক হোমসেরই এক উক্তিকে, ‘‘যা যা অসম্ভব, সেটা বাদ দিয়ে দিলে যা বাকি থাকে, সেটা শুনতে যত অবিশ্বাস্যই লাগুক না কেন, সেটাই গ্রহণ করো। সেটাই আসল সত্যি।’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement