সন্দীপ্তা ভঞ্জ: কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান বিকৃতি, এ আর রহমানকে (A R Rahman) ছেড়ে কথা বলল না বাংলার সঙ্গীতদুনিয়া। একযোগে গর্জে উঠেছেন সকলে। এবার আওয়াজ তুললেন দেবজ্যোতি মিশ্র (Debojyoti Mishra)।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সঙ্গীত সংস্কৃতিতে রিমেক গান একাধিকবার যেমন স্বাগত হয়েছে, ঠিক তেমনই সমালোচনার জালেও জড়িয়েছে! এবার ‘পিপ্পা’ ছবিতে দেশাত্মবোধ চাগার দিতে যেভাবে কাজী নজরুল ইসলামের গান কাটাছেঁড়া করে নতুন মোড়কে পরিবেশন করেছেন রহমান, তাতে ক্ষুব্ধ বাংলা তো বটেই এমনকী পদ্মাপারের শ্রোতারাও। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর তরফে দেবজ্যোতি মিশ্রকে ফোনে ধরা হলে তিনি প্রথমেই প্রশ্ন করলেন, “আমি বাংলাদেশের শ্রোতাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন! কারণ এখানে আর বাঙালি থাকেন কোথায়?” এরপরই বন্ধু রহমানের রিমেক ‘লৌহ কপাট’ নিয়ে সুর চড়ালেন সঙ্গীতশিল্পী।
দেবজ্যোতি বললেন, “এ আর রহমান আমার ব্যক্তিগত বন্ধু এবং ওকে আমি একজন জিনিয়াস মিউজিশিয়ান, কম্পোজার, একজন দরদী, অপূর্ব মানুষ হিসেবেই চিনি। যার ভাবনা চিন্তা সম্পর্কে কখনও প্রশ্ন ওঠে না। ঠিক এই অবস্থায় যখন ‘লৌহ কপাট’ গানের মর্মান্তিক ঘটনা শুনলাম, অর্থাৎ একটি গানের যে মৃত্যু হয়, একটি গান যে খুন হতে পারে, আর সেই গানের খুনের সঙ্গে যে রহমান জড়িত, এটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সারা পৃথিবীজুড়ে যখন উত্তাল সময়, অশান্ত সময়, যে সময়ে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’-এর মতো গান আমাদের ভারতবর্ষের, আমাদের বাংলার প্রতিনিধি হতে পারত। সেখানে সেই গানকে এত অবমাননায় মর্মান্তিকভাবে তাঁকে ভারতবর্ষেরই এক অন্যতম প্রতিভা এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এটা ভাবতে কষ্ট হয়। মনে হয়, যে এটা সত্য নয়!”
এরপরই সঙ্গীতশিল্পীর সংযোজন, “আমি গোটা অ্যালবামের গান শুনেছি। কোনও গানই আমার ইম্প্রেসিভ লাগেনি। কিন্তু আমার বিষয় হচ্ছে, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানকে যখন নেওয়া হয়েছে, যদি ধরি, গানটি কবিতা হিসেবে রহমানের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। নতুন গান যদি তৈরি করতেই হয় তাহলে অন্তত রহমানের চিন্তাশীল মনের কাছে ভাবনা, কল্পনার জন্য ওঁর উচিত ছিল গানটির ব্যাকগ্রাউন্ড জানা। গানটির ছন্দ জানা। সলিল চৌধুরিও দক্ষিণী ছবির জন্য রবিশঙ্করের সুরে ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ গানটি তৈরি করেছিলেন। অনবদ্য গান তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে রহমান যে রিমেক গানটি তৈরি করেছেন সেখানে কাজী নজরুল ইসলামের গানটিকে আর চেনাই যাচ্ছে না! আমার মনে হয়, এটা বোধহয় সম্ভবত এ আর রহমানের গান নয়। তিনি বোধহয় জানেনও না কী গান তৈরি হয়েছে। আর এটা যদি জ্ঞানত হয়ে থাকে, তাহলে এই গানটির প্রতি, গানটির কম্পোজারের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননা করা হয়েছে। আমি এখনও ভেবে উঠতে পারছি না এটা রহমানের কাজ। সময় ঠিক দেখে নেবে, যে গানটি যেখানে থাকার থেকে যাবে। আমি একেবারেই রক্ষণশীল নই। তাই ‘গেল গেল রব’ তোলাটাই আমার জায়গা নয়। আমি বলব নতুন করে এই গান তৈরির জন্য রহমানের প্রেক্ষাপট জানা জরুরী ছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.