Advertisement
Advertisement

Breaking News

বইপাড়া

বইপাড়ায় ‘একলা’ বৈশাখ, ছাপাখানায় আটকে শুকতারা, বুদ্ধদেব-সঞ্জীবদের লেখা

লেখক-পাঠকদের বৈঠকি আড্ডা নেই, বন্ধ কফি হাউস, পয়লা বৈশাখে একলা স্তব্ধ বইপাড়া।

COVID-19: No New Book Release, Lonely Poila Boishakh in College Street
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:April 14, 2020 6:35 pm
  • Updated:April 14, 2020 6:35 pm  

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সরস্বতী পুজোয় নিশ্চয়ই কোনও খুঁত থেকে গিয়েছিল এ বছর। হতে পারে মন্ত্রপাঠ ভুল হয়েছিল। তা না হলে বাঙালির বৈশাখী সাহিত্যের ভাণ্ডার এমন শূন্য রয়ে যায় কী করে! ছেপে বেরল না দে’জ পাবলিশিং-এর বুদ্ধদেব গুহ উপন্যাস সমগ্র প্রথম খণ্ড। দেব সাহিত্য কুটির থেকে বেরল না তার গল্পের বই। হাতে এল না কল্লোল যুগের প্রধান ধারক ও বাহক বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাস সমগ্র প্রথম খণ্ড। দে’জ পাবলিশিং-এর। পেলাম না সিনেমা পাড়া নিয়ে লেখা পরিচালক তরুণ মজুমদারের স্মৃতিকথা। সেটাও দে’জ পাবলিশিং-এর।ধর্ম নিয়ে বেশ কিছু লেখালেখি করেছিলেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। বাঁধাই হতে গিয়ে লকডাউনে ধরা পড়ল দেব সাহিত্য কুটিরের সে বইগুলোও।

প্রকাশনা শুরু হওয়ার পর থেকে ৭৩ বছরে এই প্রথম বাজারে এল না শুকতারার বৈশাখ সংখ্যা। প্রকাশের ৬০ বছর পর ধাক্কা খেল নবকল্লোলও। গোটা বছর বই প্রকাশের যে ট্রেন্ড এই বৈশাখ থেকে শুরু হয় তা আচমকা থমকে গেল করোনা আতঙ্কে। ছাপাই বাঁধাইয়ের লোকবল নেই। ছাপাখানা থেকে বই দোকানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেই। বামুন-পুরুত নেই যিনি হালখাতায় স্বস্তিক একে পূজো সেরে সে বই বিক্রির কাজ শুরু করবেন। শহর-দেশ লকডাউন। ফলাফল বিগত আর্থিক বছর শেষের হিসেব সম্পূর্ণ হল না। বইগুলো পরে বেরলেও তাদের বৈশাখের সেল আর পাবে না। জীবন-জীবিকার আরও একটা অবশ্যম্ভাবী অঙ্গ হল রয়্যালটি। গোটা বছর যা বই বিকোয়, এই বৈশাখেই তার মোটা অংকের রয়্যালটি পান লেখকরা। হাতে এল না সেই অংশটাও। লেখক-পাঠকদের বৈঠকি আড্ডা নেই, বন্ধ কফি হাউস, পয়লা বৈশাখে একলা স্তব্ধ বইপাড়া।

Advertisement

বইপাড়ায় হালখাতার পুরনো এক দস্তুর আছে। পয়লা বৈশাখের দিন ৪-৫ আগে থেকে ঝাড়পোঁছ শুরু হয় বইয়ের দোকানপাট গুলোতে। চাঁদ মালা, ফুল দিয়ে সাজানো শুরু হয় ঘরগুলো। লেখক-পাঠকদের এদিন একজোট হওয়ার দিন। ১৪২৭-এর পয়লা বৈশাখ কাটল এইসব টুকু ছাড়া। একেবারে একলা। নিঝুম বইপাড়ায় টুকটাক ঘন্টার আওয়াজ। যদিও তার মধ্যেই ভারচুয়াল বৈঠকি আড্ডা আয়োজন করেছিল পত্রভারতী। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়দের নিয়ে সারাদিন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রকাশনা সংস্থার ফেসবুক পেজে চলল লাইভ আড্ডা। অবশ্যই যে যার বাড়িতে বসে। কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “আমরা যে এই লকডাউনেও বেঁচে আছি, শুধুমাত্র সেটুকু জানানোর জন্যই সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম।” এ বছর দেবারতি মুখোপাধ্যায়, অভীক সরকার ও রাজা ভট্টাচার্যর নতুন তিনটি বই বেরনোর কথা ছিল পত্রভারতী থেকে। বেরল না সেগুলিও।

[আরও পড়ুন: পয়লা বৈশাখে টুইট পর্যন্ত নেই রাজ্যপালের, রীতি মেনে রাজভবনে মিষ্টি পাঠালেন মমতা]

কিন্তু বইপাড়া যে পেল না তাদের প্রিয় লেখক লেখিকাদের। আক্ষেপের কথা শোনালেন দে’জ পাবলিশিং-এর অন্যতম কর্ণধার অপু দে। এ বছর বুদ্ধদেব গুহ, বুদ্ধদেব বসুর লেখা মিলিয়ে তাদের ২৫-৩০ টা বই বেরোনোর কথা ছিল। একটাও বেরল না। পুরনো বৈঠকি আড্ডার স্মৃতিকথা নিয়ে বললেন, “লেখকদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রত্যেকের মন খারাপ। এই দিনটাতে প্রায় সকলেই আসতেন আমাদের বাড়ি। হইহই, আড্ডা, আলোচনা, মিষ্টিমুখ, হালখাতা সব বাকি থেকে গেল।” দে’জ পাবলিশিং-এ যে লেখকেরই এই দিনে পা পড়ুক তাকে অবশ্যই এই দিনটা স্মরণ করে কিছু লিখে রেখে যেতে হবে। অপুর কথায়, এমনই এক দিনে একবার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ লিখে যান, ‘এই দিনটায় প্রতিবছর আসি। খুব ভাল লাগে। জানি না পরের বছর আসতে পারব কিনা তবে আশা রাখি আবার আসব’। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, আরও পরে দিব্যেন্দু পালিতদের পা পড়েছিল দোকানে।

শুকতারা বা নবকল্লোল নিয়ে শুধু নয়, দেব সাহিত্য কুটিরের রুপা মজুমদারের আক্ষেপ তাদের নতুন বই গুলো নিয়েও। খুব সচেতনভাবেই লকডাউনের বিধি মেনে এ বছর হালখাতা, গণেশ পুজো, বাড়ির সত্যনারায়ণ পুজো সব বন্ধ রেখেছেন তারা। কম করে সাতটা বই তৈরীর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। আটকে গিয়েছে সেসবও। তার কথায়, “প্রচুর লগ্নি হয়ে পড়ে রয়েছে। এই বৈশাখে সেলের একটা আলাদা আকর্ষণ। কিন্তু এ বছর কিছুই হল না।” শুধু বই বিক্রি নয়। গোটা বছরের বিক্রি বাটার যা লাভ হয় তার একটা বড় অংশ রয়ালটি বাবদ পান লেখকরা। দেব সাহিত্য কুটির-এর কর্ণধারের আক্ষেপ, “বহু লেখক আছেন যাদের শুধু লেখাটুকুই জীবিকা। গোটা বছরের রয়্যালটির একটা বড় অংশ আমরা এই বৈশাখে তাদের হাতে তুলে দিই। এবছর সেটুকুও পারলাম না।”

 ছবি: পিন্টু প্রধান

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement