নির্মল ধর: এই প্রতিবেদনের ছবিটি লক্ষ্য করুন। অ্যাকাডেমি মঞ্চের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন সদ্য তরুণ বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী। ‘চেতনা’ দলের নতুন নাটক ‘মারীচ সংবাদ’ মঞ্চস্থ হচ্ছে। নিচে সামনের স্পট লাইটটা এসে পড়েছে বিপ্লবের মুখে। তাঁর চরিত্রের নাম ‘মেরিবাবা’। খানিকটা যাত্রাপালায় ‘বিবেক’ ধরনের গান গাইবেন। গানটি শুরু করলেন বিপ্লব। আলোর ঝলকানিতে মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হচ্ছিল বটে, কিন্তু তার মধ্যেও ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপের আলোও ফুটে উঠছিল। পরে আবারও বিপ্লব এলেন পর্দায়। গাইলেন ‘সিয়া সিয়া’। মঞ্চে সেই প্রথম দেখা থেকেই বিপ্লব ঠাঁই করে নিয়েছিলেন দর্শকের মনে। এই দুটি গানই অভিনেতা বিপ্লবকেতনকে স্থায়ী জায়গাও করে দিয়েছিল বাংলা গ্রুপ থিয়েটারের জগতে।
গত ১১ ডিসেম্বর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পরিবর্তে প্রয়াত বিপ্লবকেতনের স্মরণে এক স্মরণ-অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল তাঁর তিন সুযোগ্যা কন্যা সুদীপ্তা, বিদীপ্তা এবং বিদিশা। সেখানেই দেখা গেল পুরনো টেপে বাজানো ‘মেরিবাবা’ গানের সঙ্গে সুন্দরভাবে ঠোঁট মেলাচ্ছে মেয়ে বিদীপ্তা ও নাতনি ইদা। বোঝা যাচ্ছিল চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর আগের গান এখনকার প্রজন্মকেও উসকে দিতে পারে তাহলে! যেমন দিয়েছিল সাতের দশকেও। শুরুতে ‘চেতনা’ ও পরে ‘থিয়েটারওয়ালা’ দলের শিল্পী হিসেবে বিপ্লবের প্রধান পরিচিতি মঞ্চাভিনেতা হিসেবেই। ‘জগন্নাথ’, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’, ‘বাঘুমান্না’, ‘স্পার্টাকাস’ কিংবা ‘গ্যালিলিওর জীবন’ নাটকে বৃদ্ধ সাধুর ছোট্ট চরিত্রে তাঁর স্বল্পক্ষণের আবির্ভাবও ছিল বড় চমক। বিপ্লবের প্রয়াণ বাংলা নাটকের বড় ক্ষতি। অবশ্য বেশ ক’বছর ধরেই তিনি ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার-এ আক্রান্ত থাকায় অভিনয় থেকে দূরেই ছিলেন। তরুণ মজুমদার, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে কাজ করলেও বড়পর্দায় তেমন বড় কাজ করেননি বিপ্লব। কিন্তু ছোটপর্দায় বিপ্লবের জনপ্রিয়তা ছিল অসামান্য। বিশেষ করে ‘চুনি পান্না’র কথা মনে পড়ছে।
সেদিন সন্ধ্যায় স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার ঝুড়ি উপুড় করে দিয়েছিলেন উপস্থিতদের মধ্যে সব্যসাচী চক্রবর্তী, বিভাস চক্রবর্তী, অরুণ মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু মাইতি, রবীন দেব, ডাঃ জয়ন্ত রায়, চৈতালী দাশগুপ্ত, ঋদ্ধি সেন, রাজা দাশগুপ্ত, কল্যাণ সেন বরাট, অভিষেক সাহা, ইন্দ্রাশিস রায়-সহ নাটক ও সিনেমা জগতের বিভিন্ন মানুষ। সুদীপ্তার ভূমিকা ছিল সঞ্চালনার। সেই সুযোগে তিনি জানিয়েও দিলেন আগামীতে বিপ্লবের লেখা, সাক্ষাৎকার এবং বিপ্লবকে নিয়ে লেখার একটি সংকলন প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। প্রত্যেকের স্মৃতি কথনে উঠে এসেছিল বিপ্লবের অভিনয় ক্ষমতার বিভিন্ন দিক তো বটেই, মানুষ হিসেব একজন আপসহীন রাজনীতি সচেতন নাগরিক সত্তাও। সবাই তাই সেদিন কামনা করেছেন ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোন।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.