সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অসম-ত্রিপুরার পর জ্বলছে বাংলা। নেপথ্যে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (Citizenship Amendments Act)। প্রতিবাদের নামে একপ্রকার তাণ্ডব চলছে রাজ্যজুড়ে। প্রতিবাদের ভাষা বদলানোর আবেদন জানিয়েছেন বাংলার বুদ্ধিজীবীরা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ। কোনায় একাধিক বাসে আগুন। বিপর্যস্ত সিগন্যালিং ব্যবস্থা। সাঁকরাইল স্টেশন কার্যত পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। CAA-এর বিরোধিতায় শনিবার সকাল থেকে অগ্নিগর্ভ কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। একের পর এক জ্বলছে বাস। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ। কার্যত স্তব্ধ জনজীবন। চূড়ান্ত ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। অশান্তি আঁচ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না রোগী-সহ অ্যাম্বুল্যান্সে সওয়ারিরাও। এককথায়, অসম-ত্রিপুরার পর জ্বলছে বাংলা। ঘটনার জেরে সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।” চুপ থাকেননি রাজ্যের বিশিষ্টজনেরাও। সরব হয়েছেন প্রতিবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রীর সুর টেনেই মন্তব্য করেছেন বুদ্ধিজীবীরা।
দিন কয়েক আগেই CAB (Citizenship Amendments Bill)-এর বিরোধীতা করে কেন্দ্রীয় সরকারে দরবারে চিঠি পাঠিয়েছিলেন অপর্ণা সেন, অরুন্ধতী রায়-সহ বহু বিশিষ্টজনেরা। জ্বলন্ত অসম-ত্রিপুরার পর পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন অপর্ণা সেন। তাঁর কথায়, “গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন। শান্তি বজায় রাখুন। ভাঙচুর নয়। যে কোনও ইস্যু চরমে পৌঁছলে হিংসাত্মক পথ নেয়, সে জায়গায় মাথা ঠান্ডা রেখে প্রতিবাদ করাই বুদ্ধিমত্তার। যেভাবে বাংলায় প্রতিবাদ হচ্ছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়।” শান্তির আবেদনের পাশপাশি সরকারি সম্পত্তি নষ্ট না করারও অনুরোধ জানিয়েছেন পরিচালক-অভিনেতা অপর্ণা সেন।
অপর্ণার সুর টেনে পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তও একই কথা বলেছেন- “এটা প্রতিবাদের পথ নয়। প্রতিবাদ সংযত হোক, হিংসাত্মক নয়।” সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অভিমত, আইন জোর করে চাপানো উচিত নয়। এরকম বিশৃঙ্খল আন্দোনয় মোটেই সমর্থন করা যায় না।
দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির অচলাবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন অভিনেতা তথা নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন। কৌশিকের কথায়, “গত কয়েকদিন ধরে যে পরিস্থিতি চলছে এবং ক্রমাগত আন্দোলন যে হিংসাত্মক পথ নিচ্ছে, এমনটা চলতে থাকলে আখেরে লাভ বিজেপি’রই হবে। আন্দোলনের এমন ভাষাকে বিশ্রী হিংসাত্মক চিত্র দিয়ে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করবে গেরুয়া দল। যে অশান্তিতে সুবিধে হবে ওদের।”
উদ্বেগপ্রকাশ করে নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেছেন, “ট্রাম, বাস জ্বালালে আখেরে সাধারণ মানুষেরই বিপদ। আর এভাবে হিংসা-মারামারি কখনওই আন্দোলনে ভাষা হতে পারে না।” পরিচালক আবুল বাসারের কথায়, “প্রতিবাদকে সমর্থন করি। কিন্তু আন্দোলনের এই পথ সমর্থন যোগ্য নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.