Advertisement
Advertisement
Prothom Rajnoitik Hatya

দুই ভিন্ন সময়কে এক মঞ্চে তুলে ধরল নতুন নাটক ‘প্রথম রাজনৈতিক হত্যা’

দর্শকদের দু'ঘন্টা মোহিত করে রেখেছিল নাটকটি।

Anya Theatre's new drama Prothom Rajnoitik Hatya is a commendable one | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:December 2, 2022 7:55 pm
  • Updated:December 2, 2022 7:55 pm  

নির্মল ধর: বিভাস চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠিত ‘অন্য থিয়েটার’ শুরু থেকেই সমাজ সচেতন, বক্তব্য-প্রধান এবং নাট্যশৈলীর পরীক্ষায় নিবিষ্ট চিত্ত। বিভাসবাবুর পরিচালনায় তো বটেই, তাঁর উপদেশেও অন্য কেউ পরিচালক থাকলে তিনিও দলটির নির্দিষ্ট গুণমান শুধু নয়, পরিবেশনার বৈভবেও প্রযোজনার উচ্চমান বজায় রাখেন। খুবই আনন্দের কথা – তিনি দেবাশিসের মতো একজন তেজি, মেজাজি, সুকৌশলী, নাট্যাক্রিয়ার প্রতিটি বিভাগে অসাধারণ দখলদারি তরুণকে পেয়েছেন! তাঁর হাতেই এবার পড়েছে নতুন নাটক ‘প্রথম রাজনৈতিক হত্যা’ (Prothom Rajnoitik Hatya) পরিচালনার দায়িত্ব। আবার একই সঙ্গে বলতে হচ্ছে দেবাশিস দলে পেয়েছেন একঝাঁক উদ্যমশীল, পরিশ্রমী এবং নাটক অন্তপ্রাণ ছেলেমেয়ে, যাঁরা তাঁর মূল রসদ।

Prothom-Rajnoitik-Hatya-1

Advertisement

সম্মিলিতভাবে এঁরাই হাতে হাত মিলিয়ে, শুধু জোরালো অভিনয় দিয়ে নয়, নাচে গানে বাদনে পুরো অ্যাকাডেমি মঞ্চজুড়ে দর্শকদের দু’ঘন্টা মোহিত করে রেখেছেন। শুধু আলোর ব্যবহার নয়, সেটের অভিনব পরিকল্পনা নয়, সামগ্রিক প্রযোজনা মূল্যে এই নাটক এই মুহূর্তের বাংলা নাটকের জগতে একটি উদহারনযোগ্য কাজ। একশো চোদ্দ বছর আগে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবী ও এক বিশ্বাসঘাতক বিপ্লবীর সংঘাত নিয়ে দেবাশিসের এই নাটক।

[আরও পড়ুন: ‘সার্কাস’ ছবিতে ডাবল রোলে রণবীর, ট্রেলারের বিশেষ চমক দীপিকা পাড়ুকোন]

আমরা জানি, আলিপুর মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে নরেন গোঁসাই বিপ্লবীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তাঁকে খুন করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুই তরুণ
হাঁপানিরোগী সত্যেন বোস আর ম্যালেরিয়ায় ভোগা কানাইলাল দত্ত। নাটকে, এঁদের স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়েছেন বিপ্লবী বারিন ঘোষ, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, হেমচন্দ্র কানুনগো এবং অরবিন্দ ঘোষ। যাঁরা বেলেঘাটার বাগানবাড়িতে বোমা তৈরি শুধু নয়, সাহেবদের ওপর আক্রমণে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালের সেই বিশ্বাসঘাতক বিপ্লবীর সঙ্গে এখনকার এক রাজনৈতিক নেতা সোমরাজকে মিলিয়ে দিয়ে হত্যার রাজনীতির যে সমান্তরাল কাহিনি টানতে চেয়েছেন সেখানেই একটু খটকা থেকে যায়।

Prothom-Rajnoitik-Hatya-2

 

আজকের রাজনীতি আর সেই সময়ের রাজনীতি কখনই এক নয়। দুই সময়ে আকাশ-পাতাল ফারাক। শুধু এটুকু সরিয়ে রাখলে, পুরো প্রযোজনাটি দেখতে বসে নাট্যের প্রতিটি বিভাগের কাজ চমকে দেয়। বিশেষ করে প্রত্যেক বিভাগের সঙ্গে সকলের একাত্ম হয়ে কাজ করার কৌশল ও পরিচালকের মুন্সিয়ানার সঙ্গে সেগুলোকে এক সুরে বেঁধে ফেলা মুগ্ধ করে। লেপ, তোষক, কম্বল, চেয়ার, টেবিল, ছেঁড়া কাপড়, চাদর ইত্যাদি দিয়ে মঞ্চ সাজানোর কাজটি ‘এখন’ এবং ‘তখন’-এর ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়। একেকটা সময় মঞ্চেই যেন মিলে যায় দু’টি ‘কাল’।

অভিনয়ে আলাদা করে কার নামই বা করব! ভাস্কর মুখোপাধ্যায় (কানাইলাল), সায়ন্তন মিত্র (বারিন), অর্ক সেন (ক্ষুদিরাম), পরিমল মণ্ডল (নরেন), বাবর চৌধুরী (অনুরণন), রাজু ধর (সত্যেন্দ্রনাথ)- প্রত্যেকেই শারীরিক ও বাচিক অভিনয়ে চমকে দেন। কিশোর সুশীল সেনের চরিত্রে আফ্রোদিতি রায় এবং কানাইয়ের মায়ের চরিত্রে কৃষ্ণা দত্তও নজর কাড়েন। ভাস্করের বাড়তি দায়িত্ব ছিল গানে। সেখানেও তিনি অত্যন্ত সফল। দেবাশিস আসলে বলতে চেয়েছেন – কানাইলালকে হত্যা করাটাই এই রাজ্যে প্রথম রাজনৈতিক হত্যা। আবারও তাই সেই কথা এসে পড়ে, কানাইলালের হত্যা আর এখনকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মাঝে ‘ন্যাতা’র হত্যা কি এক পর্যায়ে ফেলা যায়, নাকি ফেলা উচিত? তবুও স্বীকার করতেই হবে দেবাশিস ও অন্য থিয়েটার এর হাতে হাত মেলানোয় এমন একটি বিস্ময় জাগানো নাটক দেখা গেল।

[আরও পড়ুন: গতে বাঁধা ছক ভেঙে দর্শকদের মন জয়ের চেষ্টা আয়ুষ্মানের, কেমন হল ‘অ্যান অ্যাকশন হিরো’?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement