স্বপনসাধন বোসের আত্মজীবনী 'শূন্য থেকে শুরু'। সেই বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বপনসাধন বোসের সঙ্গে উপস্থিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অভীক সরকার, জোস ব্যারেটো ও হর্ষ নেওটিয়া। –প্রতিদিন চিত্র
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ময়দান অন্তঃপ্রাণ তিনি, মোহনবাগান (Mohun Bagan) তাঁর কাছে মাতৃসম। এই বঙ্গের খেলাধুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন চিরকাল, লোকে তাঁকে চেনে-জানে অসম্ভব দিলদরিয়া, সফল এক উদ্যোগপতি হিসাবেও। মোহনবাগান ক্লাবের সভাপতি তিনি। আবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর চেয়ারম্যান। সেই স্বপনসাধন (টুটু) বোসের (Swapan Sadhan Bose) আত্মজীবনীর আত্মপ্রকাশ হল রবিবাসরীয় কলকাতায়, তাঁর ছিয়াত্তরতম জন্মদিনের প্রাক্ লগ্নে, জন্মদিনের ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে।
যে আত্মজীবনীর নাম– শূন্য থেকে শুরু। যে আত্মজীবনীর আবরণ উন্মোচনে রবিবার বালিগঞ্জে তাঁর বাসভবনে উপস্থিত থাকল একটুকরো শহর। কে ছিলেন না সেই আত্মজীবনীর প্রথম পাতা ওল্টানোর মুহূর্তে? প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ও পূর্বতন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। এক সময় মোহনবাগানের প্রাণ, সবুজ-তোতা হিসাবে পরিচিত জোস রামিরেজ ব্যারেটো। আনন্দবাজার গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য ও উদ্যোগপতি অভীক সরকার। শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া। সঙ্গে বিশিষ্ট গণ্যমান্য সাংবাদিকরা।
আর গোটা অনুষ্ঠানই হল যেন স্বপনসাধন বোসের স্বকীয় মেজাজে, ফুরফুরে আবহে, দিলদরিয়া এক অনুভূতি সহ। আত্মজীবনীর মোড়ক-উন্মোচনের পর এক এক করে বলছিলেন অভ্যাগতরা। বলছিলেন, ময়দানের শ্রদ্ধেয় টুটুবাবুর সঙ্গে তাঁদের নানা স্মৃতি, স্মরণীয় মুহূর্তের কাহিনি। হর্ষ নেওটিয়া বলছিলেন, ‘‘টুটুদার সঙ্গে আমার পরিচয় বহু দিনের। আমার জ্যাঠামশাইয়ের বন্ধু ছিলেন উনি। কিন্তু এত মজা করে কথা বলতেন যে, আমি প্রায়ই চলে যেতাম ওঁর কাছে।’’
ব্যারেটো বললেন, ‘‘টুটু বোসকে আমি আজ থেকে চিনি না। গত কুড়ি বছর ধরে চিনি। মোহনবাগানে খেলার সময় ওঁর থেকে যা যা সাহায্য পেয়েছি, জীবনে ভুলব না। আমার এত দিন ধরে মোহনবাগানে খেলার একটা বড় কারণ, ওঁর আবেগ। যা অতুলনীয় বললেও কম বলা হয়।’’ অভীক সরকার বলছিলেন, ‘‘বই আর জন্মদিন, দু’টোরই অনেক শুভেচ্ছা। আশা করছি, আজ থেকে দশ বছর পর এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ বেরোবে।’’ বিশদে গেলেন সৌরভ। বলতে শুরু করলেন মানুষ স্বপনসাধন বোসের কথা।
‘‘বই পড়ার আগে মানুষ টুটুবাবুকে অনেক শুভেচ্ছা জানাতে চাই। এ রকম মানুষ কিন্তু খুব কমই পাওয়া যায়। ওঁর নামেই দেখুন, স্বপ্ন আর সাধনা, দু’টো শব্দ কেমন মিশে আছে। দেখুন, আমাদের দেশে ক্রিকেট চালানো সোজা। কিন্তু ফুটবল নয়। সেখানে উনি বলেই মোহনবাগানকে এ ভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। টুটুবাবুই দেখিয়েছেন যে, খেলার মাঠে পেশাদারি মনোভাবই শেষ কথা নয়। বরং খেলাকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, সেটাও ওঁর থেকে শিক্ষণীয়।
মোহনবাগান ক্লাব যে আজ এই জায়গায় এসেছে, তার পঁচাত্তর শতাংশ কৃতিত্ব ওঁর,’’ বলে চলেন সৌরভ। সঙ্গে সহাস্য সংযোজন, ‘‘আত্মজীবনীর পাতা ওল্টাতে গিয়ে টুটুবাবুর ব্যাট হাতে একটা স্টান্সের ছবি দেখলাম। তা, ওঁর ব্যাটের স্টান্স ফুটবলের থেকে অনেক ভাল কিন্তু।’’ মঞ্চে উপবিষ্ট স্বপনসাধন বোস দ্রত মনে করিয়ে দিলেন, কী ভাবে মোহনবাগানে সৌরভকে ‘কিডন্যাপ’ করে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। যে ঘটনার ধারাবিবরণী তিনি লিখেওছেন আত্মজীবনীর সাদা পাতায়, কালো কালিতে।
শুনলে মনে হয়, ঠিকই তো বলেছেন সৌরভ। বর্তমানে খেলাধুলোর পৃথিবী যে ভাবে ঢাকা পড়ছে পেশাদারিত্বের বর্মে, সেখানে স্বপনসাধন বোসের মতো চরিত্রের প্রয়োজন বড়। যাঁরা খেলাটাকে ভালবাসেন হৃদয় দিয়ে। আর তাই কোথাও পেশাদারি পৃথিবীকে সযত্নে দূরে রেখে, আদতে খেলা আর আবেগের মোহানা সৃষ্টি হয় স্বপনসাধন বোসের আত্মজীবনীর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানকে ঘিরে। যেখানে আত্মজীবনীর আবরণ-উন্মোচন উপলক্ষ্য মাত্র। মুখ্য যেন তিনটে শব্দ। খেলা। ময়দান। মোহনবাগান!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.