অভিরূপ দাস: “এই বছর আর গান-বাজনার অনুষ্ঠান হবে বলে মনে হয় না। কারও ড্রাইভারের প্রয়োজন হলে জানাবেন”, কি-বোর্ড প্লেয়ার বাবুল মুখোপাধ্যায়ের সহজ স্বীকোরোক্তি সোশ্যাল সাইটে। অনেকেই যা মুখ ফুটে বলতে পারেননি। তবে মেনে নিয়েছেন সত্যিটা। ড্রাম ছেড়ে এবার রুজিরুটির প্রয়োজনে অন্য কিছু ধরতে হবে!
মারণ ভাইরাস করোনার জন্য নিদান দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- “সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন”। একজনের সঙ্গে অন্যজনের ছ’ফুট দুরত্ব বজায় রেখে গানের জলসা করা কি আদৌ সম্ভব? “অসম্ভব। একটা অডিটোরিয়ামে ৩০ জন দর্শককে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে। তাতে শিল্পীকে সাম্মানিক দিয়ে আর আমাদের পারিশ্রমিক দেওয়া সম্ভব হবে না”, জানিয়েছেন বাবুল। ক্যালকাটা কোয়ারের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে গানবাজনার জগতে। কল্যাণসেন বরাট থেকে শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, অথবা শ্রীকান্ত আচার্যের মতো খ্যাতনামা শিল্পীদের সঙ্গে বাবুল পারকাশন, কি-বোর্ড বাজিয়েছেন। আজ তিনিই কর্মহীন। গানের অনুষ্ঠানই যে হচ্ছে না কোনও!
গায়কদের খবর তো সবাই রাখেন। কিন্তু পাশে যাঁরা সঙ্গত করেন? গানের মহাকাব্যে তবলচি, কি-বোর্ড প্লেয়ার, পারকাশনিস্টরা চিরকালই উপেক্ষিত। বেশ কয়েকবছর আগে কবীর সুমনের ‘সহশিল্পীরা এসো’ সে কথাই বলেছিল। আজ করোনা এসে আরও একবার বুঝিয়ে দিল দিন বদলায়নি। যন্ত্রানুসংগীত শিল্পী দ্রোণ আচার্য বলছেন, “সিরিয়ালের অভিনেতাদের মতো আমাদের কোনও ফোরাম নেই। তাই কীভাবে আমাদের সমস্যা মিটবে? তা নিয়ে কেউ এগিয়েও আসছেন না।” বাধ্য হয়েই তাই বাবুলের মতো অনেককেই পেশা বদলাতে হচ্ছে!
বেলেঘাটা সিআইটি রোডের বাসিন্দা বাবুল বলছেন, “এই ফেব্রুয়ারিতেও ঢাকায় অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। গায়কদের সঙ্গে নানকাসা, স্লিট ড্রাম বাজাই। এটাই আমার মতো শিল্পীদের উপার্জনের মাধ্যম। এখন তো আর অনুষ্ঠান হবে না। তাই ড্রাইভারি করেই দিন চালাতে হবে।” অনেকেই এই সময়ে গাড়ি পাচ্ছেন না। বাসে ভিড়ের ভয়ে পৌঁছতে পারছেন না গন্তব্যে। বাবুল বলছেন, “আমায় ফোন করলে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেব। তাতে যদি দিন গুজরান হয়, মন্দ কী?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.