সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিন কয়েক আগেই ভারতের নাগরিকপঞ্জী আইন বিরোধী কবিতা ‘সব ইয়াদ রাখা জায়েগা’ বিশ্ব সমক্ষে পাঠ করেছিলেন রজার ওয়াটার্স। যিনি কিনা কিংবদন্তী ব্যান্ড ‘পিংক ফ্লয়েড’-এর সদস্য। “তুমহারি লাঠিও অউর গোলিও সে জো কাতিল হুয়ে হ্যায়.. সব ইয়াদ রাখা জায়েগা…,” বিশ্বদরবারের সামনে গর্জে উঠেছিল এই লাইনগুলি। জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আমির আজিজের লেখা সেই কবিতা এবার শোনা গেল অনির্বাণ ভট্টাচার্যের গলায়। তবে অনির্বাণের নিজস্ব আঙ্গিকে। আমিরের হিন্দি কবিতা নয়, বরং নিজের মাতৃভাষায় তারই বঙ্গানুবাদ করে ছড়িয়ে দিলেন সেই কবিতা। আমিরের কবিতাকে পাথেয় করেই খাস বাংলায় বললেন, “তুমি জেলে ভরো আমি দেওয়ালে লিখব..।”
“তোমাদের লাঠি আর গুলিতে মরেছে আমার যে সাথীরা তাদের স্মৃতি বুকে ভরে মন খারাপেই থাকা হবে/ তোমরা ক্ষমতার জোরে মিথ্যে লিখবে জানি/ প্রয়োজন হলে না-হয় নিজের রক্ত দিয়েই সত্যিগুলো ঠিক লিখে রাখা হবে/ সবকিছু মনে রাখা হবে.. মোবাইল, ইন্টারনেট, টেলিফোন বন্ধ করে অমানিশা আর শৈত্যে মোড়া শহরকে অন্ধ করে হাতুড়ি হাতে আচম্বিতে আমার ঘরে ঢুকে আসা, আমার অন্তের চেয়েও ছোট্ট জীবনকে ভাঙার পরেও, আমার সহায় সম্পদহীন হৃদয়কে চৌরাস্তায় মারার পরেও উদাসীন ভীড়ে দাঁড়িয়ে তোমার মুচকি হাসি.. সব মনে রাখা হবে!” নজরুল মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনির্বাণ যখন এই কবিতার লাইনগুলো আওড়াচ্ছিলেন, দর্শকাসন থেকে হাততালির রোল উঠেছিল।
“রাত্রি হলেই অধিকারের দাবিতে গুলি আর লাঠির বাড়ি/ যাদের গায়ে আঘাত চিহ্ন তাদেরকেই বলা বদমাইশের ধারী?”
আমির আজিজের লেখা গোটা কবিতাটিরই বঙ্গানুবাদ করে ফেলেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। “দিনের বেলায় মধুর ভাষণে পোড় খাওয়া.. রাত্রি হলেই অধিকারের দাবিতে গুলি আর লাঠির বাড়ি/ যাদের গায়ে আঘাত চিহ্ন তাদেরকেই বলা বদমাইশের ধারী?/ সব মনে রাখা হবে। এও মনে রাখা হবে যে, কোন কোন পথে তুমি ভাঙতে চেয়েছ দেশ/ বারবার সেই ভাঙন ঠেকানো হয়ে উঠেছিল আমাদের অভ্যেস/ জগৎ সম্মুখে ‘ভীরু’র যেদিন পরিমাপ করা হবে, তোমার নাম মনে রাখা হবে/ সেই জগতেরই সভায় যেদিন ‘জীবন’ বোঝানো হবে, আমাদের নাম মনে রাখা হবে। বলা হবে, কেউ কেউ ছিল যাদের প্রয়াস হাতুড়ির গায়ে ভাঙেনি..,” কবিতার স্ক্রিপ্ট হাতে একনাগাড়ে পড়ে চলেছিলেন অনির্বাণ।
এই কবিতার ছত্রে ছত্রে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার কথা বলেছে আমির। নিজের ভাষাতেই গর্জে উঠলেন অভিনেতা- “তুমি জেলে ভর আমি দেওয়াল লিখব.. তুমি এফআইআর লেখ আমি কবিতা লিখব। এত জোরে বলব যে বধিরও শুনতে পাবে, দেখতে পাবে দৃষ্টিহীনেরাও।” প্রসঙ্গত, এর আগে নাগরিকপঞ্জী আইনের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে কলকাতার রাস্তায় মিছিলে হেঁটেছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এবার ফের নজরুল মঞ্চে আওয়াজ তুললেন CAA, NRC’র বিরুদ্ধে, তবে আমিরের লেখা কবিতা বাংলায় পাঠ করে।
‘ম্যায় ইনকার করতা হুঁ’ এবং ‘সব কুছ ইয়াদ রাখা জায়েগা’ আজিজের লেখা এই দুই কবিতা মূলত পুলিশের হাতে আক্রান্ত ছাত্রসমাজ এবং নাগরিকপঞ্জী আইন বিরোধিতার কথাই বলে। জন্মসূত্রে পাটনার ছেলে আমির আজিজ। এবার তাঁরই কবিতা লন্ডনের প্রতিবাদসভার পর কলকাতায় খাস বাংলায় আবৃত্তি হল। করলেন বিশিষ্ট অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.