সন্দীপ্তা ভঞ্জ: অসম-ত্রিপুরার পর জ্বলছে বাংলা। নেপথ্যে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (Citizenship Amendments Act)। প্রতিবাদের নামে একপ্রকার তাণ্ডব চলছে রাজ্যজুড়ে। প্রতিবাদের ভাষা বদলানোর আবেদন জানিয়েছেন বাংলার বুদ্ধিজীবীরা। অপর্ণা সেন, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-সহ একাধিক ব্যক্তিত্ব শান্তির বার্তা দিয়েছেন। এসবের মাঝেই অভিনেতা তথা বিদ্বজ্জন বাদশা মৈত্রর ছবি নিয়ে এক ফেসবুক পোস্টে সরগরম হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
ঘটনাস্থল সারগাছি স্টেশন। শনিবার সেখানেই CAA-এর বিরোধিতায় একপ্রকার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এদিন সেই বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী এলাকাতেই বাদশা মৈত্রকে দেখা গিয়েছে। ফোনালাপে ব্যস্ত বাদশা মৈত্র। ভাইরাল ফেসবুক পোস্টে এমনভাবেই দেখা গেল বিশিষ্ট অভিনেতা তথা বাম যুবনেতা বাদশাকে। কেন, কী কারণে সেসময়ে তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন, সে সবের সত্যতা যাচাই না করেই, ভাইরাল পোস্টে বাম যুবনেতাকে কটাক্ষ করে ধেয়ে এসেছে একাধিক কদর্য মন্তব্য। এমনকী, মেরে ফেলার হুমকিও খেয়েছেন তিনি।
সেই পোস্টের সত্যতা যাচাই করতে এবং ঠিক কী কারণে বাদশা সারগাছির বিক্ষোভস্থলে পৌঁছেছিলেন, সেসব জানার জন্যই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছয়লাপ কদর্য মন্তব্যকে ঘিরে মুখ খুললেন বাদশা মৈত্র। তিনি জানান, “বহরমপুরের ডোমকলে বামফ্রন্ট যুব সংগঠন DYFI-এর জেলা সম্মেলন চলছিল। সেখানেই যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সারগাছির কাছে রাস্তা অবরোধ করে তখন জোর বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছিল। তাই বিক্ষোভস্থলে নেমে আমি প্রথমে ওদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। দেখি যে, কোনওভাবে গাড়ি নিয়ে সেই এলাকা পার করা যায় কিনা! তারপর সেটা না হওয়ায় তখনই DYFI-এর ছেলেদের ফোন করি। ওরা এসে আমায় গ্রামের ভিতরের অন্য রাস্তা দিয়ে বের করে নিয়ে যায়। ওই যে আমি ওখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। আর আমার মাথায় একটা টুপি ছিল। সেসব জুড়েই এমনভাবে দেখানো হয় যে আমি সেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছি। এবং সেটাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য কদর্য মন্তব্য ধেয়ে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকী, আমাকে শেষ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।”
রবিবার বহরমপুর থেকে ফেরার পথেই বাদশা জানান যে ইতিমধ্যেই সাইবার সেলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। CAB-এর তীব্র সমালোচনা করে এবং পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে বাদশা বলেন, “আমি ভীষণভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে আন্দোলন চলছে, সেটা তাদেরই ভীত শক্ত করছে, যারা এই CAB-এর নেপথ্যে। আন্দোলনকারীদের বারবার অনুরোধ করছি, প্রতিবাদ হোক গণতান্ত্রিক পথে। হোক শান্তিপূর্ণভাবে। ট্রেন জ্বালিয়ে, বাস পুড়িয়ে নয়। ঠান্ডা মাথায় ভাবুন তাঁরা।”
যে ‘ফেজ টুপি’কে ঘিরে এত কাণ্ড, উসকানিমূলক বার্তা ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, সে প্রসঙ্গে বাদশার মত, “যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের চিন্তার দৈন্য, ভাবনার দৈন্য, রসবোধের অভাব। পোশাক-খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জাতি-ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা অনুচিত। এর বাইরে বোধহয় তাঁরা কিছুই ভেবে উঠতে পারছেন না, এটা তাঁদের দুর্ভাগ্য।”
প্রসঙ্গত, CAA-এর বিরোধিতায় শনিবার সকাল থেকে অগ্নিগর্ভ কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। একের পর এক জ্বলছে বাস-ট্রেন। রবিবার একাধিক জেলায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। কার্যত স্তব্ধ জনজীবন। চূড়ান্ত ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। অশান্তি আঁচ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না রোগী-সহ অ্যাম্বুল্যান্সে সওয়ারিরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.