Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga Puja 2024

মায়ের প্রতিমা গড়াই সাধনা, কুমোরটুলির গল্প শোনালেন পদ্মশ্রী সনাতন রুদ্র পাল

যাঁরা সাবেকি ঠাকুর তৈরি করেন তাঁরা থিমের ঠাকুরও গড়তে পারেন, দাবি শিল্পীর।

Durga Puja 2024: Exclusive Interview of Artist Sanatan Rudra Paul
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 1, 2024 7:49 pm
  • Updated:October 1, 2024 8:21 pm  

প্রতিমা শিল্পই সাধনা তাঁর। তিনি বাংলা ও বাঙালির মুখ মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্র পাল। প্রতিমা শিল্পে উৎকর্ষতার স্বীকৃতি হিসেব পেয়েছেন পদ্মশ্রী। বর্ষীয়ান শিল্পীর সঙ্গে আলাপচারিতায় সুলয়া সিংহ

পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়ার পর শিল্পীর দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে?

Advertisement

-আমি তো ভেবেছিলাম, বয়স বাড়ছে, কাজকর্ম কমিয়ে দেব। দুটো-তিনটে কাজ করব। কিন্তু পদ্মশ্রী পাওয়ার পর লোকের চাহিদা আরও বেড়ে গেল। এক দুবছর দেখা যাক। তারপর কাজ কমিয়ে দেব।

বাবা মোহনবাঁশি রুদ্র পাল, জেঠু রাখালচন্দ্র পালদের থেকে পেয়েছেন শিল্পের উত্তরাধিকার। তাঁদের আশীর্বাদেই কি এই সাফল্য?

-ঠাকুমার আশীর্বাদ সবচেয়ে বেশি। গুরুদেব ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, তাঁরও আশীর্বাদ রয়েছে। বাবা, জ্যাঠা… সবার আশীর্বাদ রয়েছে। দর্শকদেরও আশীর্বাদ রয়েছে। তাঁরাও আমার সুস্থতা কামনা করেন।

পরিবারের আপত্তি সত্বেও বাপ-কাকার পেশার টানে চলে আসেন প্রতিমা শিল্পের কাজে। আজ কি সে কারণে গর্ব বোধ হয়?

-এটা একটা নেশা। যৌথ পরিবারে প্রতিমা গড়ার কাজ দেখেই বড় হয়েছি। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি স্টুডিওতে যাওয়া। টুকটাক কাজ শেখা। মোষের চোখ, ইঁদুরের চোখ তৈরি করতাম। ঠাকুর ডেলিভারির সময় কাস্টোমারের ঢল নামত। সব মিলিয়ে একটা আকর্ষণ অনুভব করতাম। অন্য কাজের কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। গর্ব যেমন হয়, ধিক্কারও হয় নিজের প্রতি। আসলে কাজের এত চাপ! সময় মতো কাজ না পেলে উদ্যোক্তারা বিরক্ত হন। কেউ কেউ খারাপ কথা বলেন। তখন মনে হয় এবারই শেষ।

প্রতিমা শিল্পের প্রশিক্ষণ দিতে স্কুল গড়া বা শিল্প শিক্ষা দেওয়ার ভাবনা আছে?

-আমার ছেলে তো লেখাপড়া করে অন্য লাইনে গেছে। আমার নাম হয়েছে ঠিক। কিন্তু এই চাপ নিতে পারবে না ছেলে। এই কাজে ঢুকতে চাইছে না। বহু শিল্পীর সন্তানদের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা এক। তবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ইচ্ছে আছে, কিন্তু ৫০টা ছেলেকে যে শেখাব তার সময় কোথায়! তাঁদের সঙ্গে তঞ্চকতা করতে পারব না। মূল কাজটা কমাতে পারলে অন্য কাজে সময় পাব। ভাওতা দিয়ে পয়সা নিতে পারব না।

প্রান্তিক বয়সেও তরুণদের মতো পরিশ্রম করেন আপনি। সৃজনের এই প্রেরণা কোথা থেকে পান?

-আমি এখনও চেষ্টা করি মায়ের মুখগুলো ঠিক রাখতে। পুরো কাজটাই দেখভাল করতে হয় আমাকে। চোখের কাজটাও এখনও করে চলেছি। আর কতদিন করতে পারব সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারবে।

প্রত্যেক পুরুষের সাফল্যের পিছনে থাকেন একজন নারী। আপনার সাফল্যের নেপথ্যে থাকা পাওয়ার স্টেশন কে?

-হ্যাঁ, আমার স্ত্রী প্রচুর সহযোগিতা করেছেন। আমি যখন বাবার থেকে বেরিয়ে আলাদা কাজ শুরু করি তখন বড়বাজারে গিয়ে প্রতিমা সংক্রান্ত যাবতীয় কেনাকাটা স্ত্রীই করতেন। একবার দেখিয়ে দিয়েছিলাম। এখনও বাড়িতে বসে অনেক বিষয় পরিচালনা করে থাকেন।

কুমোরটুলি আপনার শিল্পের ধাত্রীভূমি। বর্তমানে থিম শিল্পীদের রমরমায় কি অন্য রাজনীতি শুরু হয়েছে এখানেও?

-এটা আগে অল্প ছিল, এখনও বেশি হয়েছে। কেউ হয়তো শরীর খারাপের নাম করে আমার স্টুডিও থেকে ছুটি নিয়ে কোনও থিম আর্টিস্টের কাজ করতে গেল। আমি হয়তো তাঁকে হাজার টাকা রোজ দিচ্ছি, আর্টিস্ট লোভ দেখাল দুহাজার টাকার। এভাবে পাঁচদিন কাজ করিয়ে নিল। আমার তো ক্ষতি হয়ে গেল! এর ফলে আমাদের কাজের চাপও বেড়ে যায়। কাজ বাকি থেকে যায়।

সাবেকি ঠাকুরের পাশাপাশি থিম পুজো প্রতিমা তৈরি হয় আপনার স্টুডিওতে। কোন ঘরানা আপনার পছন্দের?

-সবই ভালো লাগে। ভালো ভাবনার থিম হতেই পারে। সাবেকিও ভালো, কোনওদিন বিলীন হবে না। মাদুর্গা অসুরকে বধ করছে, এই ব্যাপারটা, এই অনুভবটা থাকলেই থিমটা ভালো হয়। গোজামিলের থিম আমার অপছন্দের। অনেক থিম হয়েছে ঝুলনের মতোন। দুর্গোৎসব আর ঝুলন এক না। যাঁরা সাবেকি ঠাকুর তৈরি করেন তাঁরা থিমের ঠাকুরও তৈরি করতে পারবেন, যাঁরা থিম করেন তাঁরা সাবেকি ঠাকুর গড়তে পারবেন না। চ্যালেঞ্জ করছি।

গোটা দুর্গাপুজোটাই এখন একটা আর্ট গ্যালারিতে পরিণত হয়েছে। ভক্তি কি ফিকে হচ্ছে?

-আমাকে তো ভক্তিটাই আনতে হয় সবার আগে। কাঠামো পুজো থেকে চক্ষুদান, সব ক্ষেত্রে ভক্তি আনতে হবে। যাঁরা তা করেন না, সেটা তাঁদের ব্যাপার। পাঁচজন পাঁচ রকম হয়ে থাকে। আমি কাউকে খারাপ বা ভালো বলব না। তবে আমি আর থিম আর্টিস্টের কাজ করব না।

কুমোরটুলির বহু উত্থানপতনের সাক্ষী আপনি। ভবিষ্যতে কুমোরটুলিকে কীভাবে দেখতে চাইবেন?

কুমোরটুলি পাকা হোক। পাকা দেওয়াল, ছাদ। দোতলা বাড়ি হোক। এরকম ব্যবস্থা সরকারি উদ্যোগেই সম্ভব। শিল্পীদের দ্বারা একাজ হবে না। আমাদের সরকার কুমোরটুলির দিকে কোনওদিন তাকায়নি। এখনও দেখছে না, ভবিষ্যতেও দেখবে না। কুমোরটুলি থেকে খালি নেবে, কুমোরটুলিকে কিছু দেবে না।

প্রতিবারই পুজোর সময় কাজের বিরাট চাপ থাকে। কীভাবে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখেন?

-খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে সংযত থাকি। বেশি মশলাদার খাবার খাই না। চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খাই। আমার হল ‘ওয়ান ম্যান শো’। অসুস্থ হলে ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যাবে। মায়ের কাছে প্রতিবার প্রার্থনা করি, এই কাজের সময়টায় আমাকে সুস্থ রেখো মা। পুজোর(Durga Puja 2024) পর যা খুশি করো।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement