বিতর্ক তাঁর অন্য নাম! তাও সেফ খেলায় বিশ্বাস নেই তাঁর! নিজেকে ভাঙতেই ভাঙতেই সমাজের আয়নায় মুখ দেখেন তিনি। অকপটে জানিয়ে দেন, বিয়েও করে ফেলছেন যত তাড়াতাড়ি হয়! ব্যক্তিগত জীবন, চলচ্চিত্রে নগ্নতা, বিয়ে নিয়ে ‘জুলফিকর’ মুক্তির আগে মুখ খুললেন পাওলি দাম।
সংবাদ প্রতিদিন: ‘নাটকের মতো’, ‘ক্ষত’, ‘মহানায়ক’-এর পর মুক্তি পাচ্ছে তোমার অভিনীত ‘জুলফিকর’৷ এরকম একটা পুরুষ-প্রধান ছবি করলে কেন?
পাওলি: দেখো, আমি নারীকেন্দ্রিক ছবি প্রচুর করেছি৷ তো ভাবলাম হোয়াই নট! মেল ডমিনেটেড ছবি হলেও এটা শেক্সপিয়রের দু’টো নাটকের অবলম্বনে এমন একটা ছবি যেখানে স্ক্রিন স্পেস কম হলেও চরিত্রটা আউট অফ প্লেস নয়৷ বরং ‘করিশ্মা আহমেদ’ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র যা বাকি চরিত্রগুলোর থেকে একেবারে আলাদা৷ তাছাড়া আমি সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই৷ শুধুই নারীকেন্দ্রিক ছবি করব এমন নয়৷ সবচেয়ে বড় কথা এটা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি৷ আর ওর ছবি, সে ছবিতে যেই থাকুক না কেন, হ্যাজ টু বি সৃজিত ডমিনেটেড৷ কারণ হি ইজ ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ৷ ‘রাজকাহিনী’ নারীকেন্দ্রিক হলেও সৃজিতের সিগনেচার স্টাইল সেই ছবিতেও খুব স্পষ্ট৷ আর ডমিনেশনের কথাই যদি আসে, আমি মনে করি সিনেমা ইজ আ ডিরেক্টর্স মিডিয়াম৷ তাই পরিচালকের ডমিনেশনটা সবচেয়ে বেশি৷ আমি এটা এভাবে দেখছি, মেল ডমিনেটেড বা ফিমেল ডমিনেটেড-এর চেয়েও, ডিরেক্টর ডমিনেটেড!
সংবাদ প্রতিদিন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এটা তোমার প্রথম ছবি…
পাওলি: আসলে অনেকদিন ধরেই কাজের কথা হচ্ছিল৷ ‘রাজকাহিনী’র সময়েও কথা হয়েছিল, কিন্তু নানা কারণে ওটা হয়নি৷ মানে ওটা করতে চাইনি বা হয়ে ওঠেনির চেয়ে এখন মনে হয় নিশ্চয়ই আরও ভাল কিছু করার ছিল, তাই হয়নি৷ আমি সবকিছুকে পজিটিভলি নিই৷ ‘করিশ্মা আহমেদ’ ইজ আ বিউটিফুল ক্যারেক্টর৷ ছোট চরিত্র হলেও, এই ছবিতে করিশ্মা আহমেদ বা ক্যালফার্নিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র৷ জুলফিকরের জীবনে করিশ্মা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ জুলফিকরের জীবনের সবই ও জানত৷ জুলফিকরের অন্য নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও জানত৷ তবু ভালবাসত৷ আর নিজের একটা জগত্ তৈরি করেছিল৷ আর এটাই এই চরিত্রের ইউএসপি৷ বাকিদের থেকে করিশ্মা একেবারে আলাদা৷ আর ‘নাটকের মতো’-র পরে নানা ধরনের কাজ করেছি৷ আমি চেয়েছিলাম সৃজিতের ছবিতে এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে যেটা খুব আলাদা, যেটা আমি আগে কখনও করিনি, যেটা থেকে যাবে৷ করিশ্মা তেমনই একটা চরিত্র৷ এই কনফিডেন্স আমাদের দু’জনেরই ছিল৷
সংবাদ প্রতিদিন: শুটিং-এর অভিজ্ঞতা কেমন?
পাওলি: আমার পাঁচদিনের কাজ ছিল৷ বুম্বাদার সঙ্গে দু’টো সিন, নুসরতের সঙ্গে একটা, বাকি সব সোলো৷ আমি সৃজিত সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছিলাম৷ প্রথম দিন, প্রথম শটটা দেওয়ার পর সৃজিত বলল, ওকে নেক্সট৷ আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না৷ কারণ সৃজিত যতটা পারফেকশনিস্ট, চোদ্দো-পনেরো টেকের নিচে ওকে খুশি করা যায় না৷ সেখানে ফার্স্ট টেক-এই ওকে! যাক পরীক্ষায় তা হলে উত্তীর্ণ হলাম! (হাসি) একটা জিনিস খুব ভাল লাগত, সৃজিত খুব ফোকাসড৷ ওর যেটা চাই, সেটাই চাই৷ এটা আরও ভাল কাজ করতে ইন্সপায়ার করে৷ ওর নজর সমস্ত দিকে৷
সংবাদ প্রতিদিন: আচ্ছা একটা কথা বলো, এই চরিত্রটা যখন অফার করা হয়, তখন তোমার ক্লিওপেট্রা-র চরিত্রটা করতে ইচ্ছে করেনি?
পাওলি: না, আরেকটা কথা বলি৷ যারা খুব সেন্সিবল পরিচালক, তারা কে কোন ধরনের কাজ করছে সেটা খেয়াল রাখে৷ সৃজিত জানে আমি কী ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি৷ আমার মনে হয় আমি যদি ক্লিওপেট্রার চরিত্রটা করতাম ইট উড হ্যাভ বিন রিপিটিটিভ৷ এই স্টিরিওটাইপ হয়ে যাওয়াটা নিশ্চয়ই সৃজিত চায়নি৷ আর সৃজিত বলেওছিল একটু অন্য ধরনের চরিত্রে আমায় কাস্ট করতে চায়৷ আর আমিও এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই৷ মোনোটোনি চাই না৷
সংবাদ প্রতিদিন: তোমার তো পর পর বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করা হয়ে গেল?
পাওলি: সেই ‘মনের মানুষ’ থেকে শুরু! এই ছবিতে জুলফিকরকে হতে হত লার্জার দ্যান লাইফ৷ বুম্বাদার প্রেজেন্স এত শক্তিশালী যে জুলফিকর ওকে ছাড়া মানাত না৷ আর বুম্বাদার সঙ্গে প্রায় সবধরনের ছবি করে ফেলেছি৷ বাউল থেকে ইরোটিক, শেক্সপিয়র আর ‘মহানায়ক’ তো আছেই৷
সংবাদ প্রতিদিন: একটু পিছিয়ে যাই৷ একটা সময়ে মাঝারি মানের ছবি করেছ, কখনও কলকাতা, কখনও মুম্বই৷ মুভি ক্লিপ লিক হয়ে যাওয়ার পর একটা ডার্ক ফেজ৷ সেই সবকিছুকে পিছনে ফেলে এখন তুমি পরিচালকদের প্রথম পছন্দ৷ সেই সময়টা পেরনো কতটা শক্ত ছিল?
পাওলি: সেই সময়টায় হিন্দিতে কাজ করতে গিয়েছিলাম বলে বেশ কিছু বাংলা ছবি করতে পারিনি৷ কিন্তু অফার তখনও পেয়েছি৷ তবে হ্যাঁ, কেউ নতুন কিছু করতে গেলে ক্রিটিসিজম থাকবেই৷ আর আমি সেফ খেলায় বিশ্বাস করি না৷ আর আমি আমার জীবনে মোনোটোনি চাই না, আমার কাজের ক্ষেত্রেও মোনোটোনি চাই না৷ বিভিন্ন ধরনের ছবি, বিভিন্ন ভাষায় কাজ করতে চাই৷ তবে এটা মেনে নিচ্ছি ওই সময়ে লড়াইটা বেশ শক্ত ছিল৷ এবং সেটা মেন্টাল এবং সাইকোলোজিকাল৷ কিন্তু আমি নিজের বিশ্বাসে স্টিক করে থাকব এটাই মনে মনে কাজ করত৷ তখন হয়তো সমালোচনা হবে, পরে মানুষ বুঝবে আই অ্যাম ডুইং অল দিস ফর দ্য লাভ অফ মাই ক্রাফট৷ ‘ছত্রাক’ ওয়াজ নট এ গিমিক৷ ছবির প্রোমোশন তো হবেই, সব কিছুর ক্ষেত্রেই সেটা প্রযোজ্য৷ আর ‘ছত্রাক’-এর, কান-এ অফিশিয়াল সিলেকশন হয়েছিল৷ সেটা তো গিমিক নয়৷
সংবাদ প্রতিদিন: সেই সময়টায় কাকে কাছে পেয়েছিলে?
পাওলি: আমি একটু ইন্ট্রোভার্ট৷ খুলে কথা বলতে পারি না৷ মুম্বই সেই জড়তা কিছুটা কাটিয়েছে৷ কিন্তু এখনও আমি লাজুক৷ তাই আমার লড়াইটা ছিল নিজের সঙ্গে৷ একা, একা৷
সংবাদ প্রতিদিন: সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী পেয়েছ?
পাওলি: অনেক উপলব্ধি হয়েছে, কিন্তু একটা কথা খুব মনে হয়, আমরা কেউ সারাজীবন থাকব না, আমাদের কাজটা থেকে যাবে৷ আর চলার পথে ফ্রিকশন হবেই৷
সংবাদ প্রতিদিন: ব্যক্তিগত জায়গায় একটা স্টেডি সম্পর্কে রয়েছ৷ এটা কতটা রিলিফ দেয়?
পাওলি: একটা স্থিতিশীল প্রেমের সম্পর্ক সবার জীবনেই খুব ইমপর্ট্যান্ট আমার মনে হয়৷ কারণ আমি মনে করি ইমোশনাল ভ্যাকিউয়াম অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক৷ ভালবাসার জায়গাটা ঠিক থাকলে, কনফিডেন্স লেভেলটা অনেক বেড়ে যায়৷ এটা আমাকে ভাল কাজ করতে ইন্সপায়ার করে, আমাকে নিজের প্রতি অনেক ফোকাস করেছে৷ পার্সোনাল জায়গাটা যদি ঠিক থাকে, কাজের জায়গাটা অনেক বেশি ভাল হয়৷
সংবাদ প্রতিদিন: অর্জুন ‘ক্ষত’ দেখেছে? ওর রিঅ্যাকশন কী? ইনসিকিওর ফিল করেনি?
পাওলি: না, ও দ্যাখেনি৷ অর্জুন আমার একটাই ছবি দেখেছে, সেটা হল ‘নাটকের মতো’৷ দেখো একটা রিঅ্যাকশন হওয়া খুব ন্যাচারাল, একটা বাইরের মানুষের পক্ষে, তবে ও খুব সেন্সিবল, লেভেল হেডেড৷ আমি চাই ও ‘ক্ষত’ দেখুক, ইন ফ্যাক্ট আমার সব ছবি দেখুক৷
সংবাদ প্রতিদিন: বিয়ে কবে করছ? কোনও প্ল্যানিং?
পাওলি: এখনও কিছু ঠিক করিনি৷ তবে ইচ্ছে আছে যত তাড়াতাড়ি হয়৷ ২০১৭ বা ২০১৮৷ আসলে এটা নিয়ে বসে প্ল্যান করার সময়ই পাচ্ছি না৷
সংবাদ প্রতিদিন: ‘দেবী’র টিজার তো সাড়া ফেলে দিয়েছে!
পাওলি: দেবদাস মেয়ে হলে কী হত, এই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে– সেই বিষয়টা নিয়েই ছবি৷ খুব বেশি বলতে পারব না৷ এখানে আমি দেবদাস, শতাফ চার্লি চন্দ্রমুখী আর শুভ মুখোপাধ্যায় হয়েছে পার্বতী৷ আর এই ছবিটা আমি আর ঋক (পরিচালক) এক বছর ধরে ডেভেলপ করেছি বলতে পারো৷ এটা নিয়ে খুব এক্সাইটেড৷ ২০১৭-র জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়ার কথা৷
(সাক্ষাৎকার: বিদিশা চট্টোপাধ্যায়, ছবি: শুভেন্দু চৌধুরি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.