সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: দীর্ঘ অভিনয় জীবনে সে অর্থে খুব বেশি সম্মান পাননি, দর্শকমহলের ভালবাসা ছাড়া৷ এবার বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ভূষিত হলেন ডি লিট সম্মানে৷ বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়৷ একইসঙ্গে এই সম্মান পেলেন তিরন্দাজ দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
ডি লিট সম্মানে সম্মানিত হয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শিল্পীর জীবন হল মেঘে ঢাকা আকাশের মতো। আমরা অপেক্ষায় থাকি এক ঝলক রোদ্দুর দেখার জন্য। আজকের দিনটা আমার কাছে যেন এক চিলতে রোদ্দুরই। সম্মান পেতে কার না ভালো লাগে? আমি কৃতজ্ঞ যে আমার জ্ঞান থাকতে থাকতেই এই সম্মান আমাকে দেওয়া হল।” অন্যদিকে, তিরন্দাজ দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “গত পাঁচ বছরে দেশে খেলাধুলোর অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবু এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছি আমরা। প্রতিভা খুঁজে বের করতেই হবে।” ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মোবাইল ও কম্পিউটার নিয়ে সবসময় ব্যস্ত না থেকে নিয়মিত মাঠে যাওয়ার পরামর্শও দেন অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত এই তীরন্দাজ।
[মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন! ঘর থেকে উদ্ধার অর্ধনগ্ন দেহ]
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সমাজে মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করে ছাত্রীদের আরও বেশি করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী রাজ্যপাল। এছাড়াও, এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভূ-তত্ত্ববিদ তথা অধ্যাপিকা সুদীপ্তা সেনগুপ্ত। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও তীরন্দাজ দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাম্মানিক ডি লিট উপাধিতে সম্মানিত করা হয়।
ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে মোট ৩০৪ জন ছাত্রীকে ডিগ্রী দেওয়া হয় এদিন। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোট এগারো জন ছাত্রী স্বর্ণপদক পান। ২০১৩ সালে পথ চলা শুরু হয়েছিল ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের। পূর্ব ও উত্তর—পূর্ব ভারতের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইতিমধ্যেই কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কয়েকশো ছাত্রী সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন এই কলেজ থেকে। বৃহস্পতিবার সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই অনুষ্ঠিত হল দ্বিতীয় সমাবর্তন উৎসব। এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে রাজ্যপাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “সমাজে মহিলাদের গুরুত্ব অনেক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে তাই মহিলাদের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।” কেবল মহিলাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখ্যাতি। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই যেন একদিন ভারতবর্ষ পায় তার কৃতী কন্যাদের।
[অসতর্কতার মাসুল, কৃষ্ণনগরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু মহিলা হোমগার্ডের]
ভূ-তত্ত্ববিদ তথা অধ্যাপিকা সুদীপ্তা সেনগুপ্তও এদিন নিজের শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন সমাবর্তনে উপস্থিত ছাত্রীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, “একটি দেশের উন্নতির জন্য উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই শিক্ষায় আরও বেশি করে শিক্ষিত হতে হবে ছাত্রীদের।” এমনকী, সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড: অনুরাধা মুখোপাধ্যায় ও নিবন্ধক ড: মহম্মদ সাইদুর রহমান-সহ শিক্ষাজগতের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। উপাচার্য ড: মুখোপাধ্যায় জানান, দেশে ও বিদেশে শিক্ষার মানচিত্রে শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে যাতে এই মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব জায়গা করে নিতে পারে তার জন্য তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবেন। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের যথাযথ আর্থিক সহায়তার কারণেই যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত পরিকাঠামোগত উন্নতি সম্ভব হয়েছে, সেকথাও জানান উপাচার্য। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে মোট চোদ্দটি বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। এছাড়াও তিনটি বিভাগে এম ফিল ও ছ’টি বিভাগে পিএইচডি গবেষণা চালু রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.