ধনতেরস-এর আবেদনে সাড়া দিন বা না-ই দিন, গয়নার আবেদনে নিজেকে বাঁধেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার! সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাই আজ সেলিব্রিটিদেরও ধন সঞ্চয়ের উৎসব। আপনার প্রিয় তারকারা আজ কী কেনাকাটা করছেন, তারই সুলুকসন্ধান এই প্রতিবেদনে।
গার্গী রায়চৌধুরি
ধনতেরস দিনটাকে ভীষণভাবে মানি, এমন নয়৷ এটা মূলত অবাঙালি উৎসব৷ এখন অবশ্য অনেক বাঙালিও এই দিন মানেন৷ আমি নিয়ম করে ধনতেরসের দিন কিছু না কিনলেও মানুষজনের উত্তেজনা দেখতে বেশ লাগে৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার চিরকালই ভারী সোনার গয়না পছন্দ৷ আমার মুখেও সাবেকি নকশাই ভাল মানায়৷ তাই যখনই গয়না গড়াই, চেষ্টা করি ট্র্যাডিশনাল নকশার কিছু বানাতে৷ আমার গয়নার সমস্ত ডিজাইন আমার নিজের দেওয়া৷ সে যেখান থেকেই বানাই না কেন৷ আগের বছর একটা আংটি বানিয়েছিলাম৷ আমার আবার সোনার ওপর মিনে বা পাথরের কাজ একেবারে ভাল লাগে না৷ তাই যখনই কিনি সলিড সোনা কিনি৷ ধনতেরসে সোনার পাশাপাশি রুপো কেনারও প্রচলন রয়েছে৷ প্রতিবছর এই প্রথা মেনে একটা রুপোর কয়েন কিনি৷ কালীমায়ের পায়ের কাছে প্রতিবার এই কয়েন দিই৷ এবছর আলাদা করে সোনার কিছু কেনার প্ল্যান নেই৷ সারাবছরই টুকটাক কেনা হয়েছে৷ তাছাড়া আমি বংশানুক্রমেও সোনা পেয়েছি৷ বিশেষ অনুষ্ঠানে ওগুলোও পরি৷ ঠাকুমার দেওয়া একটা হার আমার ভীষণ পছন্দের৷ ওটাও অনেক সময় পরি৷ এবারে আমার জাঙ্ক আর রুপোর গয়নায় ইন্টারেস্ট৷ তাই গয়না কিছু কিনলে কিনতে পারি, তবে ধনতেরস-এর দিনেই কিনব এমন নয়৷
মানালি দে
ধনতেরসে আমার বাবা প্রত্যেক বছর কিছু না কিছু কেনেন৷ মা যখন ছিলেন মা’কে বেশ কয়েক বছর পর পর গয়না কিনে দিয়েছি৷ একটা হার দুলের সেট কিনে দিয়েছিলাম৷ এখন বাবা একটা করে রুপোর কয়েন কেনেন, আমিও থাকি সঙ্গে৷ রুপোর বাটি কেনেন৷ সোনার গিনিও কেনা হয়েছে দু’-একবার৷ আমি গয়না পরতে খুব ভালবাসি৷ তবে শুধু সোনা নয়, সবরকম গয়নাই আমার ভাল লাগে৷ রুপোর গয়না, জাঙ্ক জুয়েলারি৷ যে পোশাকের সঙ্গে যেটা মানায় তেমন গয়নাই কিনি৷ সোনা কিনি তবে ধনতেরাসেই যে কিনতে হবে এমনটা নয়৷ সারাবছরে যখন যেমন পছন্দ হয়েছে বাজেটের মধ্যে হলে কিনেছি৷ সোনার ক্ষেত্রে সাবেকি গয়নাই আমার পছন্দ৷ মিনের কাজও খুব ভাল লাগে সোনাতে৷ শাড়ি সঙ্গে গয়না পরলে ভারী সোনাই ভাল লাগে৷
অঞ্জনা বসু
ধনতেরসের দিন আলাদা করে কিছু কিনতেই হবে এমন ধারায় আমি বিশ্বাসী নই৷ গত কয়েক বছর জুয়েলারি ইনসেনটিভ স্কিমে কিছু কিছু গয়না কিনেছি ওই ধনতেরস-এর আগে পরে৷ আমার সাবেকি নকশার গয়না ভীষণ পছন্দ৷ আমার বিয়েতে যে হারটা আমি পরেছিলাম সেটা আমার দিদার বিয়ের৷ দিদার পর মা সেটা বিয়েতে পরেছিলেন, তারপর আমি৷ ওই গয়নাটা আমার দারুণ পছন্দের, এক তো তার সঙ্গে প্রচুর আবেগ জড়িয়ে আছে, সঙ্গে নকশাটাও অপূর্ব৷ তাই আমি যখনই কিনি চেষ্টা করি ট্র্যাডিশনাল কিছু কেনার, গত কয়েকবছর রুপোর কয়েনও কিনেছি ধনতেরস-এর সময়৷ এবছর আপাতত কিছু কেনার প্ল্যান নেই৷
বিশ্বনাথ বসু
ধনতেরস উপলক্ষে প্রতিবছর আমি আমার স্ত্রী-কে নিয়ে কিছু না কিছু কিনতে যাই৷ সবসময় ধনতেরসের দিন না যেতে পারলেও তার আগের দিনও যাই৷ দেবিকা ওর পছন্দমতো কিছু না কিছু কেনে৷ এবছর আমার ইচ্ছে আছে একটা চেন কিনব৷ অনেক সময় সোনার সঙ্গে রুপোর কয়েনও কিনেছি৷ সাধারণত দেবিকাই এদিন গয়না কেনে আর আমি তা পূর্ণহৃদয়ে সমর্থন করি৷
অপরাজিতা আঢ্য
আমি সোনার বেনেবাড়ির মেয়ে৷ আমার ঠাকুমা ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির মেয়ে৷ শুনেছি ঠাকুমার প্রচুর গয়না ছিল৷ এমন বাড়ির মেয়ের গয়না প্রীতি থাকবে না তা হয়! গয়না পরতে ভীষণ ভালবাসি৷ শাশুড়ি মা আমাকে বলেন ‘মণিহারা’৷ অনেক কিছু কিনেছি আমি ধনতেরস উপলক্ষে বিগত বছরগুলোয়৷ মবচেন, সোনার কান, সোনার গিনির নেকলেস, হাতপদ্ম, গোলাপফুল বালা, আর্মলেট, ঝুমকো সীতাহার৷ গতবছর ধনতেরসেও সুন্দর একটা সীতাহার কিনেছি৷ সোনার গয়না আমি উপহারও পেয়েছি প্রচুর৷ ধনতেরসে একটা কিছু আমাকে কিনতেই হবে৷ এর কোনও ব্যতিক্রম নেই৷ এই বছর খুব ব্যস্ততায় কেটেছে তবে আজকে সোনা কিনতে যাব৷ তা সে যত রাতই হোক, যদিও ভাবা হয়নি কী কিনব৷ ট্র্যাডিশনাল সোনার গয়নাই আমার পছন্দ৷ পুরনো সাবেকি ডিজাইনের নেকলেস, সীতাহার, কানপাশা, চূড় এগুলোই ভারী সোনাতে ভাল লাগে৷
ইন্দ্রাণী হালদার
আমি সোনার গয়না খুব পছন্দ করি, কিনিও৷ ধনতেরসে প্রতিবছর গয়না কেনা হয়৷ আমি ধনতেরসে গয়না কেনাকে শুভ মনে করি৷ মূলত এইদিন প্রথমে আমার ঠাকুরের গয়না কিনি৷ আমার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ রয়েছে৷ জগন্নাথের জন্য গতবার একটা হার কিনেছিলাম৷ আর আমার জন্য রতনচূড় কিনেছিলাম৷ এবছর জগন্নাথের জন্য একটা মুকুট কেনার ইচেছা আছে আর আমি ভেবেছি একটা বালা কিনব৷ সেই পুরনো ট্র্যাডিশনাল এথনিক বালা৷ হীরেও আমার খুব পছন্দ৷ হীরের বা সোনা যেটাই হোক আমি হালকা ডিজাইনই কিনি৷ কারণ বিয়েতে এত ভারী ভারী গয়না পেয়েছিলাম সেগুলো তো পরাই হয় না৷ হালকা ডিজাইন হলে অন্তত পরতে পারি যে কোনও অনুষ্ঠানে৷
সুদীপা মুখোপাধ্যায়
ধনতেরসে আমাদের বাড়িতে তিনটে নিয়ম রয়েছে৷ এইদিন আমাদের বাড়িতে অ্যালুমিনিয়ামের বাসন কেনা হয়, মূলত ঠাকুর পুজোর জন্যই এই বাসন ব্যবহার করা হয়৷ দুই হল এদিন বাসনের পাশাপাশি রুপোর কিছুও কেনার নিয়ম৷ তা সে রাজা বা রানির মাথাওয়ালা কয়েন হোক, বাসন হোক অথবা লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি৷ তিন নম্বর নিয়ম হল এদিন সোনা কেনা হোক বা না হোক, প্ল্যাটিনাম বা হীরে কেনা হবেই হবে৷ ধনতেরস-এর নিয়ম হল শুভ্র কোনও ধাতু কেনার, তাই এগুলো কেনার নিয়ম৷ গল্পে আছে, গভীর রাতে লক্ষ্মীর পায়ের কাছে যখন ধনকুবের আসে অন্ধকারে তিনি পথ হারিয়ে ফেলেন, তাই রাতে মায়ের পায়ের কাছে রুপোর কোনও প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার নিয়ম৷ ধনকুবের এদিন মা লক্ষ্মীর পায়ের কাছে অধিষ্ঠান হন৷ হীরে, প্ল্যাটিনামের বদলে রুপো, স্টিল বা যেকোনও সাদা কিছু কেনাও শুভ৷ এই তিনটে নিয়ম মাথায় রাখার পর কোনও দোকানে যদি কোনও গয়না পছন্দ হয়, কেনা হয় তখন৷ আমার ব্যক্তিগতভাবে পুরনো সাবেকি গয়না খুব পছন্দের৷ এবার ধনতেরসে তাই আমি একটা জালি হার অর্ডার দিয়েছি৷ গয়নাটা সম্পূর্ণ হ্যান্ডমেড৷ আমি ডাইসের কাজ একেবারেই পরি না৷ জালি হারটা একেবারে গলা ভরা ভিক্টোরিয়ান নকশার, কুরুশে বোনার ডিজাইনের মতো করে তৈরি৷ ধনতেরসেই বছর সাতেক আগে আমি একটা রুপোর মা লক্ষ্মী কিনেছিলাম৷ সেটাই এখন প্রতিষ্ঠিত, তাকেই পুজো করা হয় এদিন৷
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়
ধনতেরসে আমি আর নবমিতা প্রতিবছর কিছু না কিছু কিনি৷ আমরা মানি যে এইদিনে কিছু একটা কিনলে তা শুভ৷ আমার আর নবমিতার গোল্ড কয়েনের খুব শখ৷ তাই প্রতিবছর আমরা একটা করে সোনার কয়েন কিনি৷ নবমিতাকে বেশ কয়েকবার সোনার গয়নাও কিনে দিয়েছি৷ নবমিতা সোনার চুড়ি হার এই ধরনের জিনিসপত্র কিনেছে, শুনেছি এই দিন রাত ১২টার পর কিছু কিনতে হয়৷ আমাদের সেটা হয়ে ওঠে না একেবারেই, কিন্তু ওইদিনই কিনতে যাই৷ এখন পুরুষেরাও গয়না পরে তবে আমি নিজে গয়না নিয়ে খুব শৌখিন নই৷ ওই হাতে একটা আংটি রয়েছে, পরতে হয় তাই পরি! কিন্তু মেয়েরা যে সোনার গয়না পরে সেটা আমার দেখতে খুব ভাল লাগে৷ মেয়েদের সোনার গয়না পরলে দেখতে বেশ অন্যরকম লাগে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.