সোম রায়, গুরদাসপুর: ‘ইয়ে ঢাই কিলো কা হাত জব কিসিপে পড়তা হ্যায় না, তো আদমি উঠতা নেহি। উঠ যাতা হ্যায়…’
না, ‘দামিনী’ ছবির চরিত্র গোবিন্দ নয়, বক্তার নাম অজয় সিং দেওল। চিনতে পারলেন না? এটাই যে পর্দার সানি দেওলের ‘আসল’ নাম।
কোনও টেলিভিশন শো-তে নয়। শনিবারের বারবেলায় গুরদাসপুর লোকসভা কেন্দ্রের এক প্রত্যন্ত গ্রাম, নাঙ্গালে মাইক হাতে এই ডায়ালগ দিলেন সানি পাজি।
হালকা নীল রংয়ের শার্ট। ডেনিম টুপি। রোদচশমা। একগাল দাড়ি। আর একমুখ হাসি। গলায় লাল-হলুদ ও গেরুয়া রংয়ের উত্তরীয়। হুডখোলা সাদা রেঞ্জরোভারের উপর দিয়ে এভাবেই সানি দিনভর ঘুরে বেড়ালেন বিভিন্ন পিন্ড (গ্রাম)-এ। গোটা চল্লিশেক গাড়ির কনভয়। বাইক? অগুনতি। সকাল সাড়ে দশটায় যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরিকল্পনা ছিল ,সন্ধে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত ৩৭টি পিন্ডে ঘুরবেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের থেকে একঘণ্টা সময় বাড়িয়েও একডজনের উপর গ্রামে যাওয়া হল না। হবে কী করে?
পাশাপাশি একেকটি গ্রামে রোড শো-র মাঝে ব্যবধান ধরা হয়েছিল গড়ে দশ থেকে পঁচিশ মিনিট। কিন্তু যে গ্রামেই যাচ্ছিল সানি দেওলের কনভয়, সেখানেই যেন ‘ফেভিকল কা মজবুত জোড়’। কোথাও বাড়ির বারান্দা থেকে ফুল ছুড়লেন মহিলারা। কোথাও আবার গাঁও কা মুন্ডে লোগ ছোট টিউবওয়েল নিয়ে এসেছিলেন। কেউ ‘সানি পাজি’-র কাছে ডায়ালগের আবদার করলেন। কেউ আবার ‘গদর’ ছবির সেই বিখ্যাত সিন, টিউবওয়েল উপড়ে ফেলার দৃশ্য করে দেখাতে বললেন। হাসিমুখে সব করলেন সানি। ভোট যে বড় বালাই। ‘ঢাই কিলো কা হাত’-এর সঙ্গে আরও তিনটি কমন ডায়ালগ সব জায়গায় বললেন সানি। প্রথমটি গদর সিনেমার গায়ে কাঁটা দেওয়া সেই বিখ্যাত সংলাপ। ‘হামারা হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ থা। জিন্দাবাদ হ্যায়। অউর জিন্দাবাদ রহেগা।’ দ্বিতীয়টি ‘মা তুঝে সালাম’ ছবির ‘তুম দুধ মাঙ্গোগে, হাম ক্ষীর দেঙ্গে। তুম কাশ্মীর মাঙ্গোগে, হাম চির দেঙ্গে।’ সঙ্গে অবশ্যই দলের, ‘ভারত মাতা কী জয়।’
এদিনই মুম্বই থেকে ছেলের সমর্থনে প্রচার করতে চলে এলেন ধর্মেন্দ্র। তবে এই বয়সে বেশি খাটতে পারবেন না বলে, মিছিলে বের হননি। বাড়িতে বসেই এক স্থানীয় চ্যানেলকে ছেলের সমর্থনে সাক্ষাৎকার দিলেন। কথা ছিল এদিন এক ছোট জনসভায় বক্তব্য রাখবেন ধরম পাজি। কিন্তু সানির পরিক্রমা এত বেশি সময় ধরে চলল যে, সব প্ল্যান বানচাল। যে কারণে সানি দেওলকে গুরদাসপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি, তা বেশ সফল। ইতিহাস বলছে, ১৯৫২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৭ বছর এখান থেকে অ-কংগ্রেসি প্রতিনিধি সংসদে গিয়েছেন। প্রথমবার ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির যজ্ঞ দত্ত শর্মা। তিন বছর পরই হারানো আসন ছিনিয়ে নেয় কংগ্রেস। এরপর ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিন দফায় সাংসদ হন বিজেপি-র বিনোদ খান্না। ২০০৯ সালে কংগ্রেস আবার জিতলেও গতবার ফের জেতেন প্রয়াত অভিনেতা বিনোদ খান্না। তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আবার জেতেন কংগ্রেস প্রার্থী সুনীল কুমার জাখর। যিনি এবারও কংগ্রেসের প্রার্থী।
গুরদাসপুর কেন্দ্রের যা অতীত, এটি কংগ্রেসের ঘাঁটি। ’৭৭ সালে জনতা পার্টি ছাড়া এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়েছেন শুধু বিনোদ খান্না। এবারও তাই এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে পদ্মফুল ফোটাতে কোনও কৃষকের কড়া পড়ে যাওয়া হাত নয়, মুম্বইয়া ‘ঢাই কিলো কা হাত’-এর সেলিব্রিটি তাসই ফেলা হয়েছে বিজেপি-র পক্ষে। সানির রোড শো-গুলিতে জনজোয়ার বলছে, প্রাথমিক লক্ষ্যে সফল গেরুয়া শিবির। দু’দিন আগেই তো তাঁর গাড়ির বনেটে উঠে সানিকে চুমুও খেতে দেখা গিয়েছে এক মহিলাকে।
এদিন সকাল থেকেই টার্গেট ছিল সানি দেওলকে ধরতে হবে। কিন্তু তালিকা মেনে চার-পাঁচটি গ্রাম ঘুরেও তাঁর দেখা মিলল না। কোথাও শুনলাম “জি ও তো পন্ধরা মিন্ট পহেলেহি চলে গয়ে।” তো কোথাও গালে হাত দিয়ে ঠায় বসে গ্রামের আট থেকে আশি। ঠিক করলাম যে কোনও একটি গ্রামেই তাঁবু ফেলা যাক। নাঙ্গালে সানির আসার কথা সওয়া দুটোয়। অবশেষে যখন এলেন ঘড়িতে তখন সাড়ে চারটে। একে খানাখন্দে ভরা গ্রামের সরু পথ। তার উপর জনজোয়ার। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলল সানির কনভয়।
কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য এই চমককে পাত্তা দিচ্ছেন না। এক মুখপাত্র বললেন, “হিরোরা পর্দাতেই ভাল। বিনোদ খান্নাকে মোট ১৩ বছর এমপি করে ভুগেছে এখানকার গ্রামবাসী। তুমুল মোদি গিমিককেও পাত্তা দেয় না, না হলে দু’বছর আগে উপনির্বাচনে আমরা জিততে পারি? ভোটাররা বুঝে গিয়েছে গুরদাসপুর সুরক্ষিত হাত প্রতীকে।” গুরদাসপুরের রিমোট কংগ্রেসের হাতে যাবে, না কি ‘ঢাই কিলো কা হাত’-এ, সে উত্তর দেবে সময়। তবে পর্দার হিরোকে হাতের নাগালে পেয়ে সুদে-আসলে উশুল করে নিচ্ছেন স্থানীয় পিন্ডবাসীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.