ঋতাভরীর হাতে পুজোর ঘণ্টা। ইনস্টাগ্রামের টু পিস থেকে সংস্কৃত শিক্ষা। মায়ামি বিচ থেকে পুজোর ঘরে। নতুন ঋতাভরী চক্রবর্তী! বিস্মিত ইন্দ্রনীল রায়
ইনস্টাগ্রামে আপনার পালি হিলের ফ্ল্যাটের ছবি দেখে তো সল্টলেকের বাড়ি কাঁদছে। সবার প্রশ্ন, তাহলে কি ঋতাভরী পাকাপাকিভাবেই শিফট করে গেলেন মুম্বই?
– না, না, একেবারেই না। সল্টলেক ছিল, আছে, থাকবে। সল্টলেকের বাড়ি সবচেয়ে স্পেশাল।
আপনার এই ফ্ল্যাটটা কোথায় পালি হিলে?
-একদম নার্গিস দত্ত রোডের উপরেই।
আমাকে এখানকার এক নামী অভিনেত্রী আপনার ফ্ল্যাটের ছবি দেখে বলেছিলেন, “শি হ্যাজ গ্রেট টেস্ট।” এই ইন্টিরিয়র, নীল থিম সবটা আপনার আইডিয়া?
– প্লিজ, ওঁকে থ্যাঙ্কস বলবেন। হ্যাঁ, পুরো ফ্ল্যাট সাজানো, নীল থিম সবটাই আমার করা। আমি যেখানেই বেড়াতে যাই দেশে-বিদেশে, সেখান থেকে জিনিস কিনি। সে সব কিছু দিয়েই ফ্ল্যাটটা সাজিয়েছি।
এদিকে কলকাতায় আপনার প্রোডিউসার শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ও আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি’ ছবিতে শুনলাম আপনি এক মহিলা পুরোহিতের রোলে?
-কী ভাল একটা চরিত্র দিয়েছে আমাকে শিবুদা আর নন্দিতাদি। এমনিতে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিরিয়ালে আমার চরিত্রটাকে অনেক শেড দিয়েছিলেন রবি ওঝা ও মিতালিদি। চরিত্রটা সেই সময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এতদিন পরে এরকম ধাঁচের আরেকটা চরিত্র পেলাম। এমনিতে আমাদের দেশে নারীকেন্দ্রিক ছবি মানেই সেটা গুরুগম্ভীর আর সিরিয়াস। ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি’ ছবিতে ফেমিনিজম অবশ্যই আছে, কিন্তু সেটা অদ্ভুত একটা এন্টারটেনমেন্টের মোড়কে। ইট ইজ লাভলি।
কিন্তু শিবপ্রসাদ-নন্দিতা তো সে জন্য আপনার প্রশংসা করছিলেন না। ওঁরা বলছিলেন আপনার ইনভলভমেন্টের কথা। পুরোহিতের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আপনি নাকি সংস্কৃতও শিখেছিলেন। সেটে সব মন্ত্র মুখস্থ করে আসতেন।
-(হাসি) প্লিজ লজ্জা দেবেন না।
বলুন না, সত্যি মুখস্থ করে আসতেন মন্ত্র?
– হ্যাঁ, আসতাম। আমি যাতে সংস্কৃত উচ্চারণ পারফেক্টভাবে করতে পারি তার জন্য যাদবপুরের এক সংস্কৃত প্রফেসরের কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলাম। উনি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ডিং করে করে পাঠাতেন। সব ব্যবস্থা শিবুদারাই করে দিয়েছিলেন। ওঁরা যখন এতটা ইনভলভড আর সিরিয়াস, আমারও ডিউটি ছিল যেন ওঁদের এই ইনভলভমেন্টকে সম্মান জানাই। তাই মন্ত্র পড়া, চামর দোলানো, আই প্র্যাকটিসড এভরিথিং টিল আই ওয়াজ পারফেক্ট।
আচ্ছা আপনি বাংলা সিরিয়াল করলেন। কয়েকটা বাংলা ছবি করলেন। তারপর মুম্বই চলে গেলেন। ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি’ কি তাহলে আপনার ঘরে ফেরা? রিটার্ন অফ দ্য প্রডিগাল ডটার?
-না রিটার্ন তো নয়। আমি তো কোনওদিন কলকাতা ছেড়ে যাইনি কোথাও। হ্যাঁ, কলকাতায় কাজ করতে করতে মনে হয়েছে আমার আরও বড় জায়গায় কাজ করা উচিত। সে জন্যই আমার মুম্বই আসা এবং কাজ করা। আমার কাছে এটা একটা ন্যাচারাল প্রোগ্রেশন। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমি কলকাতা ছেড়ে একেবারেই চলে গেছি।
আপনার থিংকিং ক্লিয়ার। আপনি অ্যাম্বিশাস। আজকে আপনার কি মনে হয়, এই স্বাধীনচেতা ঋতাভরীকে কনজার্ভেটিভ টালিগঞ্জ ঠিক করে হ্যান্ডল করতে পেরেছে?
– দেখুন অসুবিধে যে হয়নি তা নয়। আমি বাংলা সিরিয়াল করেছি প্রথমে, তারপর সিনেমা করেছি বাংলায়। আমি চেষ্টা করেছি ‘ফিট ইন’ করতে। কিন্তু সত্যি বলছি, আমি অ্যাডজাস্ট করতে পারিনি। একটা স্টেজে আমার মনে হয়েছে, আমি কেন এটা করছি? এটা তো আমার ন্যাচারালি আসছে না। সেখান থেকে মুম্বই আমাকে অনেকটা স্পেস দিয়েছে। এখানে আমার প্রচুর কাজ। নিজে অ্যাক্টিং করছি। আমার নিজের প্রোডাকশন হাউস আছে। অফ কোর্স ফিনান্স্যার জোগাড় করে করছি। আমার কাছে এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। স্ট্যাটিসফায়িংও।
আপনি বলছিলেন ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি’ ছবিতে আপনি সংস্কৃত মন্ত্র পড়েছেন, চামর দুলিয়েছেন। আবার আপনি অনুরাগ কাশ্যপের বন্ধু, যিনি টুইটারে হিন্দুত্ববাদীদের একহাত নেন রোজ। এই দুটো দিক সামলাতেন কীভাবে?
-(হাসি) আরে একটা সিনেমা, একটা রিয়েল লাইফ। দুটোর মধ্যে তো কোনও বিরোধ নেই। আই ভ্যালু বোথ অফ দেম। আর দেখুন এ কে ইজ…
‘এ কে’ মানে অনুরাগ কাশ্যপ?
– হ্যাঁ। যা বলছিলাম, এ কে কিন্তু একেবারেই এপলিটিক্যাল মানুষ…
এটা কোনও কথা হল ঋতাভরী? টুইটার, ‘এনডিটিভি’তে যিনি রাজনৈতিক মন্তব্য রাখছেন, এনআরসি, সিএএর তীব্র বিরোধিতা করছেন, তিনি এপলিটিক্যাল কী করে হন?
– আপনাকে কে বলল সরকারের বিরোধিতা করতে পলিটিক্যাল হতেই হবে? সরকারের কিছু জিনিস, কিছু ডিসিশন এ কে’র ভাল লাগেনি। ও তার বিরোধিতা করেছে এবং করবেও। ও মনে করে আমাদের দেশে অটোক্র্যাটিক রুল চলছে, গুন্ডাগর্দি চলছে। এ কে ইজ অ্যান অনেস্ট ম্যান আর তাই জন্য রাখঢাক না করে সেগুলো বলেছে। বাট আই নো এ কে ইজ অ্যাবসোলিউলি এপলিটিক্যাল। ওর কিছু জিনিস ভাল লাগলে ও বলবে, কিছু জিনিস ভাল না লাগলে সেটাও খুলে বলবে। যেমন দীপিকা পাড়ুকোনের জেএনইউ যাওয়া ও সাপোর্ট করেছে। দ্যাটস হিম।
আপনিও কি দীপিকার জেএনইউ যাওয়াকে সাপোর্ট করেন?
– অ্যাবসোলিউটলি। একশোবার সাপোর্ট করি। একজন নাগরিক হিসেবে দীপিকার ওখানে যাওয়ার অধিকার আছে। তাতে প্রেজেন্ট গভর্নমেন্ট রেগে যেতেই পারে। কিন্তু তারা তো আমার নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। আর আমি বা এ কে এটা মনে করি, এই সরকারের দেশ চালানোর কোনও ব্লু প্রিন্টই নেই। তারা কোনও ক্রিটিসিজম নিতে পারে না। আর ছবি রিলিজের আগে দীপিকা কত বড় রিস্ক নিয়েছিল, সেটা বলুন। ইট ওয়াজ নট ইজি। আই রেসপেক্ট হার ফর হোয়াট শি ডিড।
তাহলে আপনাকে প্রশ্নটা করেই ফেলছি। কলকাতায় আজকাল অনেকেই বলে ঋতাভরী চক্রবর্তীর বয়ফ্রেন্ড এখন অনুরাগ কাশ্যপ।
– কলকাতা লাভস ইটস গসিপ। এটুকুই বলব, বয়ফ্রেন্ড না বাট এ কে ইজ অ্যাবসোলিউটলি ওয়ান অফ মাই ক্লোজেস্ট ফ্রেন্ডস। ইন ফ্যাক্ট, সেটাও ঠিক নয় বোধহয়। এ কে ইজ ফ্যামিলি। সেটা আজ থেকে নয়। বহুদিন ধরে আমি, আমার মা, আমার বোন ওকে চিনি।
ওহ তাই?
– ইয়েস। উই নো হিম ফর আ লং টাইম। আজও কলকাতায় কোনও কাজে এলে ও অর্গানাইজারদের বলে আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দাও, আমি শতরূপাদির বাড়ি যাব। (হাসি) তাই এসব গসিপ কী রিউমার নিয়ে আমরা কেউই ভাবি না।
আর একটা জিনিস ক্লিয়ার করবেন? এই যে ইনস্টাগ্রামে আপনি এত পোস্ট দেন। এটা কি সত্যি যে, একটা পোস্ট দেওয়ার জন্য আপনি পাঁচ লাখ টাকা পান?
– (হাসি) ইন্দ্রদা!
বলুন না। এখানকার নায়িকারাও জানতে চান।
– আপনি যে অঙ্কটা বললেন সেটা প্রায় ঠিক। বাট সব সময় ওভাবে হয় না। ন্যাশনাল কী ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের যা কনট্র্যাক্ট থাকে তাতে হয়তো তিনটে পোস্ট করলে পাঁচ লাখ টাকা রেমিউনারেশন হয়।
কী বলছেন? ফ্যানটাস্টিক!
– হ্যাঁ। এখন তো টপ সেলেবদের ক্ষেত্রে একটা ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করলে পঞ্চাশ লাখও দিচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো। অ্যান্ড ইউ নো, আমি সোশ্যাল মিডিয়াকে খুব সিরিয়াসলি নিই।
কলকাতায় কিন্তু অনেকেই স্পেকুলেট করেন, আপনার এই হাই প্রোফাইল লাইফস্টাইল, এটা মেনটেন করেন কীভাবে?
– এটা আমিও প্রচুর শুনেছি। হয়তো আমার সামনে বলেনি। কিন্তু পিছনে যে বলা হয় সেটা আমি জানি। তাদের একটাই কথা বলব, আমি আজকে যে জায়গাটায় রয়েছি সেটা করতে কিন্তু আমাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে হয়। এই পরিশ্রমটা তাঁরা মুম্বই এসে দেখেও যেতে পারেন। ইট ইজ নট ইজি। লোকের ব্যাপারে শুধুই স্পেকুলেট করা খুব সহজ।
হিরোইনরা যে কনস্ট্যান্টলি এটা নিয়ে কথা বলেন সেটা কখনও বুঝতে পেরেছিলেন বা পারেন?
– (হাসি) হ্যাঁ পারি। আমার লাইফস্টাইল নিয়ে, আমার বিদেশে ঘোরা নিয়ে প্রচুর কথা যে হয় সেটা বুঝতে পারি। আসলে আমি মায়ামি বিচে বিকিনিতেও ঘুরতে পারি, মুম্বইতে প্রোডাকশন হাউসও চালাতে পারি আবার ‘ব্রহ্মা জানেন…’ ফিল্মে বাঙালি পুরোহিতের চরিত্রেও সমান কমফর্টেবল। এটা নিয়ে হিংসে করলে দেয়ার ইজ নাথিং দ্যাট আই ক্যান ডু। (হাসি)
আপনার সম্বন্ধে সবচেয়ে আউটরেজিয়াস রিউমার কী শুনেছেন?
– (একটু ভেবে) সবচেয়ে আউটরেজিয়াস রিউমার হল আমার নাকি একজন বিদেশি বয়ফ্রেন্ড আছে যে এই লাইফস্টাইল আর আমার বিদেশে ঘুরতে যাওয়া স্পনসর করে। অনেস্টলি বলছি, সত্যি এরকম যদি কেউ থাকত আমি খুশি হতাম (হাসি)। এই সাংঘাতিক খাটনিটা তাহলে আমাকে খাটতে হত না।
আচ্ছা, আপনার ভাল বন্ধু সৃজিত মুখোপাধ্যায় বিয়ে করলেন। বিয়ের পর কথা হল সৃজিতের সঙ্গে?
– ও যেদিন বিয়ে করেছে আমি তারপরের দিনই ওদের দু’জনকে উইশ করেছি। মে দে হ্যাভ আ গ্রেট ম্যারেড লাইফ।
ইনস্টাগ্রামে পালি হিলের অত সুসজ্জিত ফ্ল্যাট দেখে কলকাতার নায়ক কি পরিচালকেরা হোয়াটসঅ্যাপ করেছেন? কেউ কি ওখানে দেখা করলেন আপনার সঙ্গে?
– না, এখানে কোনও হিরো বা ডিরেক্টর আসেনি। (হাসি) তবে জার্নালিস্টরা আসতে পারেন। প্লিজ মুম্বই এলে আমার ফ্ল্যাটে আসবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.