ফুটবলার বিদেশ বসু তাঁর আত্মীয়। জি বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়ালে জয়ীর ভূমিকায় তিনি। দেবাদৃতা বসু—র সঙ্গে কথা বললেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
‘জয়ী’ ধারাবাহিকের পর আপনার জীবন কতটা বদলে গিয়েছে?
দেবাদৃতা: অনেকটাই। আমি জানতাম অভিনয় কেরিয়ার শুরু হলে অনেক নতুন মানুষ জীবনে আসবেন। জার্নিটা কঠিন হবে। কিন্তু হয়নি। যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সকলেই খুব ভাল, কোঅপারেটিভ। তা ছাড়া ‘জয়ী’ হয়ে প্রচুর মানুষের ভালবাসা পেয়েছি, আশীর্বাদ পেয়েছি, ছোটবেলা থেকেই যেটা চেয়েছিলাম।
আপনার বাবা ‘হ—য—ব—র—ল’ নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। বোনও থিয়েটার করেন। আপনিও। অভিনয় তাহলে আপনার রক্তে?
দেবাদৃতা: ঠিক রক্তে বলাটা ভুল হবে। বরং এটা বলতে পারেন যে, ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের মধ্যেই ছিলাম। যখন আট বছর বয়স, তখন থেকেই বাবাদের নাটক হলে স্টেজের পাশ থেকে দেখতাম। হয়তো সেখানে আমার এন্ট্রি অনেক পরে। তা—ও খুব ছোট চরিত্র। তবু বসে বসে পুরো নাটক দেখতাম, শিখতাম নিজের মতো করে। অভিনয়ের প্রতি আমার ইনভলভমেন্টটা প্রথম থেকেই ছিল।
বাবার হাত ধরেই তাহলে আপনার অভিনয়ে আসা?
দেবাদৃতা: একদম। এখনও ‘হ—য—ব—র—ল’য় অভিনয় করি। ‘জাহানারা’ করছি।
ছোটপর্দায় প্রথম ধারাবাহিক। প্রথমেই সাফল্য। ছ’শো পর্ব পেরিয়েও চড়া টিআরপি। অভিনয়ের ডাক পেলেন কীভাবে?
দেবাদৃতা: কাজের জন্য চেষ্টা করছিলাম। অনেক জায়গায় যোগাযোগ করছিলাম। একদিন বাবার কাছে একটা ফোন এল। লুক সেট করার জন্য আমাকে ডাকা হল। তারপরই ‘জয়ী’র চরিত্রের জন্য সিলেক্টেড হই।
ধারাবাহিক তো ফুটবলকেন্দ্রিক। ফুটবল খেলতে পারেন? শিখেছেন?
দেবাদৃতা: আগে জানতাম না। ফুটবল কোনওদিন ছুঁয়েও দেখিনি। কিন্তু ‘জয়ী’র জন্য ট্রেনিং নিতে হয়েছে। এখন অনেকটাই খেলতে পারি। বল নিয়ে ড্রিবল করতে পারি। (হাসি) এখন সেটে ট্রেনারের দরকার পড়ে না। নিজের ওপর ডিপেন্ড করতে পারি।
ফুটবলারের চরিত্রে অভিনয়ের কথা জেনে ‘হ্যাঁ বলতে ক’বার ভেবেছিলেন?
দেবাদৃতা: অনেকবার ভেবেছিলাম! ধারাবাহিকটার সঙ্গে ফুটবল ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। অনেক ম্যাচও খেলতে হয়েছে তার জন্য। কঠিন ছিল। কিন্তু নিজেকে গ্রুম করার এত ভাল সুযোগ ছাড়তে পারিনি। তবে ফুটবল নিয়ে চর্চাটা আমার পরিবারেই রয়েছে। আমার দাদু (বাবার জেঠু) বিদেশ বসু মোহনবাগানে খেলতেন।
‘জয়ী’র জীবনে যেমন ফুটবল, দেবাদৃতার জীবনে তেমন কী?
দেবাদৃতা: অভিনয়!
আপনার বয়স মাত্র ১৮। কিন্তু ধারাবাহিকে আপনার অভিনীত চরিত্র অনেকটাই পরিণত। এক ছেলের মা। অনেকে বয়স্ক চরিত্রে অভিনয় করতে, মা সাজতে অনীহা দেখান। আপনার মতামত?
দেবাদৃতা: ‘জয়ী’র চরিত্রটায় ম্যাচিওরিটির পাশাপাশি অদ্ভুত একটা নিষ্পাপ ব্যাপার রয়েছে। সেটা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। বাকিদের কথা বলতে পারব না। কিন্তু আমি কখনও অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি। নাটকে স্কুলগার্লের চরিত্রেও অভিনয় করছি, আবার টিভিতে বাচ্চার মা-ও সাজছি! ভার্সেটাইলিটি তো মেনটেন করা উচিত!
পড়াশোনা?
দেবাদৃতা: সতীশচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে ক্লাস টুয়েলভে পড়ি। বিষয় হিউম্যানিটিজ। আমার সামনেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।
মেগাসিরিয়ালে অভিনয় করেন। থিয়েটার করেন। পড়াশোনাও করেন। এত ব্যস্ততা সামলান কীভাবে?
দেবাদৃতা: এত কিছু ব্যালান্স করা কঠিন। কিন্তু ম্যানেজ করছি কোনওভাবে। (হাসি) থিয়েটার, সিরিয়াল– কোনওটাই ছাড়তে পারব না! তা ছাড়া পরিবারের সকলেই আমাকে খুব সাপোর্ট করে। সেটেও সকলে খুব সাহায্য করে। শুটিংয়ের ফাঁকে পড়াশোনা করি। প্যাক আপ হয়ে গেলে বাড়িতে এসে পড়ি।
‘জয়ী’র পর কী?
দেবাদৃতা: থিয়েটারটা থাকবেই। নাচও। বাকি ছোট হোক বা বড়, ভাল সুযোগের অপেক্ষায় থাকব সব সময়।
কোনও ড্রিম প্রোজেক্ট? বা চরিত্র?
দেবাদৃতা: ড্রিম প্রোজেক্ট সেভাবে নেই। তবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে চাই। সুযোগ পেলে খুশি হব।
২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপের সময় অদ্ভুতভাবেই আপনি খবরে উঠে এসেছিলেন। অজস্র মিম ছড়িয়েছিল আপনাকে নিয়ে। মেসি হোক বা অন্য কোনও জনপ্রিয় ফুটবলার! কেউ কোনও ম্যাচে গোল করতে না পারলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তঁার সঙ্গে আপনার ছবি বসিয়ে বীভৎস ট্রোল করা হত।
দেবাদৃতা: আমি খুব মজা পেয়েছিলাম। যে সব মিমের কথা বলছেন, তার মধ্যে কিছু আমি নিজেই শেয়ার করেছিলাম! (হাসি) পজিটিভভাবে নিয়েছি সব কিছু। এ সবের মানে তো এটাই না যে লোকজন ‘জয়ী’কে নোটিস করছে? সেটা তো ভাল ব্যাপার!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.