চলে যাওয়া বছরের সবচেয়ে ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ #দীপবীর। মুম্বইয়ে গত পরশু ‘বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ড’ নিয়ে বিয়ের পর রণবীর সিং প্রথম মুখ খুললেন কফিহাউস ইন্টারভিউতে। সামনে অহনা ভট্টাচার্য।
জুহুর বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেলে সারা দিন অপেক্ষা করার পর অবশেষে রাত এগারোটায় দেখা মিলল তাঁর। দুপুর থেকে সমানে সাক্ষাৎকার দিয়ে, ফোটোশুট করে, বিয়েতে নেচেও ভরপুর এনার্জি। ‘আঁখ মারে ও লড়কি’ গুনগুন করতে করতে সামনে এসে যখন বসলেন, চোখেমুখে নতুন বিয়ের আনন্দ, উত্তেজনা স্পষ্ট। দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা দীপিকা পাড়ুকোনকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়া, ইতালিতে রূপকথার বিয়ে, নতুন ছবি ‘সিম্বা’ আর সদ্য পাওয়া সেরা অভিনেতার সম্মান নিয়ে মুখ খুললেন রণবীর সিং।
বিয়ের জন্য অভিনন্দন! নেমন্তন্ন করলেন না যে?
রণবীর: আমাকে বলে লাভ নেই, কমপ্লেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এখন অন্য কেউ।
রণবীরকে বলছি না তো, ‘সিম্বা’-কে বলছি।
রণবীর: সিম্বার কাছে নালিশ করে কি কোনও লাভ আছে? ও তো কামিনা! নালিশ তো শুনবেই না, উলটে টাকা নিয়ে নেবে আপনার থেকে।
‘পদ্মাবত’-এর জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন, তার জন্যও আপনাকে অভিনন্দন।
রণবীর: অনেক ধন্যবাদ!
পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠে আপনি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।
রণবীর: এটা তো প্রথম বার নয় যে আমি মঞ্চে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম! তবে এ বার কিন্তু আমার চেয়েও বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল দীপিকা। তার পেছনে কারণও আছে। আলাউদ্দিন খিলজির চরিত্রে অভিনয় করাটা সহজ ছিল না। আমাকে বেশ স্ট্রাগল করতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাটা দীপিকার জন্যও সহজ ছিল না, আমার জন্যও না। ও সেই কষ্টটা দেখেছে আর তার পর এই অ্যাওয়ার্ড। স্বাভাবিকভাবে ও একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিল।
[ দেশের বর্তমান এলিজেবল ব্যাচেলারদের পাত্রী হতে পারেন কারা? ]
মঞ্চে যে ওই কথাগুলোই বলবেন সেটা কি আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন?
রণবীর: একেবারেই না। আমি কখনও কোনও অ্যাওয়ার্ড সেরিমনিতে কী বলব সেটা লিখে নিয়ে যাই না। এটা আমার এক্সপেকটেশন ম্যানেজমেন্টের একটা কায়দা বলতে পারেন। আমি অনুষ্ঠানে যাই, তার পর যদি কোনও পুরস্কার পাই তখন মঞ্চে উঠে কী বলব ভেবে পাই না। কিন্তু আমার একহাতে পুরস্কার, অন্য হাতে মাইক, আর এতজন দর্শক আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, কিছু তো বলতেই হবে। তাই ওই মূহূর্তে যা মনে আসে বলে দিই। ওই সময় ভেবেচিন্তে, ফিল্টার করে কথা বলি না।
তা হলে ২০১৮ ভালই কাটল?
রণবীর: হ্যাঁ, ভাল কেটেছে। যদিও কয়েকটা কষ্টের মূহূর্ত এসেছে। এ বছরের মাঝামাঝি আমার নানি চলে গেলেন। তবে ওঁর মৃত্যুতে আমাদের পরিবারের সকলে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ বছর আমি বেশ কয়েকটা ভাল ছবি করলাম। যেমন ‘সিম্বা’, ‘গাল্লি বয়’ আর ‘পদ্মাবত’। বছরের হাইলাইট অবশ্যই ছিল আমার বিয়ে। আমার স্ত্রী এত সুন্দর করে সব আয়োজন করেছে। আমি ওকে বারবার বলি যে আমি তো স্বপ্নেও এ রকম একটা বিয়ের কথা ভাবতে পারতাম না। এর পুরো কৃতিত্বটাই ওর। ইটস আ ফেয়ারিটেল! পুরো রূপকথা। এই সুন্দর স্মৃতিগুলো চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থেকে যাবে।
পরের ছবি রোহিত শেট্টির ‘সিম্বা’। আপনার কেরিয়ারের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
রণবীর: এটা আমার সবচেয়ে বড় ছবি। রোহিত শেট্টির ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করা খুব বড় ব্যাপার। ‘বাজিরাও মস্তানি’ রিলিজের পরপরই আমি ‘সিম্বা’-র অফার পাই। আমি ভেবেই রেখেছিলাম যে যদি মশলা ছবিতে কাজ করি তা হলে রোহিত শেট্টির ছবিতেই করব। অন্য কেউ ওর মতো করে এই ঘরানাটা পারে না। তাই আমি ক’টা দিন অপেক্ষা করলাম এবং অবশেষে ‘সিম্বা’ হাজির আপনাদের সামনে!
তরুণ প্রজন্ম বলিউডি মশলা ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এর কারণ কী মনে হয় আপনার?
রণবীর: ভারতীয় সিনেমায় মশলা ছবি বরাবর নিজের জায়গা বজায় রাখবে। দেখুন, এক-এক জন অভিনেতা এক-এক বিষয়ে পারদর্শী হন। কেউ সব রকমের ছবিতেই সমান স্বাচ্ছন্দ্য। আবার কেউ কেউ মশলা ছবিতে বেশি ভাল কাজ করেন। আমি মনে করি সব ধরনের ছবির জন্য জায়গা আছে। আর তাই সবাই কাজ পায়।
[ ‘আগে অল্প জেনেই বড় বড় কথা বলতাম’, অকপট শাহরুখ ]
আজকাল অনেক অভিনেতা ওয়েব সিরিজের দিকে ঝুঁকছেন। আপনাকে কবে ওয়েব সিরিজে দেখব?
রণবীর: আমি ওয়েব সিরিজে কাজ করতে আগ্রহী নই তা নয়। তবে এই মূহূর্তে ওটা নিয়ে ভাবছি না। সিনেমা হলে দর্শক সংখ্যা কমছে দিন দিন। তাঁদের কী ভাবে সিনেমা হলে টেনে নিয়ে আসা যায়, সেটাই এখন আমার চেষ্টা। তাই আপাতত বড় পর্দাতেই কাজ করতে চাই। আর দর্শককেও তো দোষ দেওয়া যায় না। উইকেন্ডে গোল্ড ক্লাসের চারটে টিকিট কাটুন, সাত হাজার টাকা খরচা হবে। রিডিকুলাস! এত টাকা খরচা করার পর ছবিটা দেখে দর্শকের যদি মনে হয় এ ছবি বাড়িতে বসেই দেখতে পারতাম, তা হলে তো রাগ হওয়া স্বাভাবিক!
আপনার পছন্দের ওয়েব সিরিজ কোনটা?
রণবীর: অবশ্যই ‘সেক্রেড গেমস’। বিক্রমাদিত্যর (মোটওয়ানে) কাজ খুব ভাল লেগেছে আমার। ‘সেক্রেড গেমস’-এর পর থেকেই কিন্তু মানুষ ওই প্ল্যাটফর্মকে সিরিয়াসলি নিতে শুরু করেছে।
‘সিম্বা’-র পর কোন ফিল্ম করছেন?
রণবীর: জানুয়ারি থেকে কপিল দেবের চরিত্রে কাজ করার জন্য ট্রেনিং শুরু করব। ফিল্মের নাম ‘৮৩’।
এত পরিশ্রমের পর গত পরশু রাত্তিরে খিলজির জন্য বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ডটা যখন পেলেন। ঠিক তখন কেমন লাগছিল?
রণবীর: আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল যে, আমি একটা অ্যাওয়ার্ড সেরেমনিতে যাব, সেখানে দীপিকা আমার পাশে বসে থাকবে। তার পর ওরা সেরা অভিনেতার জন্যে আমার নাম ডাকবে। ঘোষণা শুনে আমি দীপিকাকে একটা চুমু খেয়ে পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠব। গতকাল রাতে ঠিক সেটাই হল! মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছি। মঞ্চে আমি যা যা বলেছি সেগুলো কিন্তু এক্কেবারে সত্যি। আট বছর হয়ে গেল আমি শো বিজনেসে কাজ করছি। তার মধ্যে ছ’বছর দীপিকাকে ডেট করেছি। এটা বলতেই হবে যে আমার উন্নতির পেছনে ওর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আমি গত ছ’বছরে যা যা অর্জন করেছি, সেটা দীপিকা আমার পাশে না থাকলে হত না। ও বরাবর আমার পা দুটো মাটিতে রাখতে সাহায্য করেছে। সর্বদা আমার পাশে থেকেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.