Advertisement
Advertisement

Breaking News

ডিজিটালে ফিরল ‘পথের পাঁচালী’-র স্মৃতি, নবজন্ম অপু-দুর্গার

কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হল সেই পুনরুদ্ধার করা ‘পথের পাঁচালী’।

Pather Panchali digital version
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:November 15, 2018 6:18 pm
  • Updated:November 15, 2018 6:18 pm  

সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজি নতুন জীবন পেয়েছে ডিজিটাল স্পর্শে। কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘পথের পাঁচালী’ দেখে এলেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

পঁচিশ বছর আগে ঘটেছিল সেই সর্বনাশ। ১৯৯৩-এর ৩০ জুলাই। ১৯৯২-এ চলে গেছেন তিনি। সত্যজিৎ রায় শুনে যাননি, লন্ডনের হেন্ডারসন ল্যাবরেটরিতে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেল তাঁর ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫), ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬), ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯)- এর মূল নেগেটিভগুলি। মূল নেগেটিভগুলি কেন লন্ডনের হেন্ডারসন ল্যাবরেটরিতে? কারণ সেগুলির স্বাস্থ্য আমাদের উদাসীনতা এবং অযত্নে নষ্ট হয়েছে। তাদের সারা অঙ্গ বিক্ষত। এ-অসুখের কোনও চিকিৎসা নেই এদেশে! ক্রমাগত নষ্ট হওয়া ছাড়া উপায় নেই তাদের! তাই সেগুলির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের চিকিৎসা চলছিল লন্ডনের ল্যাবরেটরিতে। এমন সময় লাগল আগুন। এবং ঘটে গেল অকল্পনীয় সর্বনাশ! এর পর কী?

Advertisement

সেই শৌভিক বাস্তব, ম্যাজিক রিয়েলিটি আমরা দেখলাম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনাতেই রবীন্দ্রসদনে। অবিশ্বাস্য। অকল্পনীয়। একেবারে আনকোরা নতুন হয়ে ফিরে এসেছে পুড়ে যাওয়া, অচিকিৎস্য অপু-ট্রিলজি! তারা যেন ঠিক যেমন দেখেছিলাম ১৯৫৫-তে, ’৫৬-তে, ’৫৯-এ, আমার বয়স ১৪, ১৫, ১৮। না তো। এখন যেন আরও বড়, আরও উজ্জ্বল, আরও ভাল। শুধু মনে হচ্ছে, ‘পথের পাঁচালী’-র এই তেষট্টি বছরের নব যৌবন দেখলে কী বলতেন মানিকদা? হয়তো বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে করে বসতেন সেই অমোঘ ঘোষণা, ‘এ যে আরও ভাল! কী করে করলে!’

ইতালিতেই কেন গাঁটছড়া বাঁধছেন রণবীর-দীপিকা? এই ১০টি কারণই নেপথ্যে ]

পুড়ে যাওয়া, ঝলসে যাওয়া, কোনও কোনও জায়গায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নেগেটিভ থেকে তিন খণ্ডে নতুন হয়ে ফিরে এল অপু-ফিল্ম! কী করে সম্ভব? সাহেবরা কি ইচ্ছে করলে সব পারেন? আর আমরা শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি? রাজনীতি করি? মুখে জগৎ জয় করি? শুধু চালবাজি। শুধু বকবক। অথচ আমরা কেন ওই সাহেবদের মতন বলতে পারি না, সত্যজিৎ রায়কে ভালবাসি, তাঁর ছবির মধ্যে এমন একটা পবিত্রতা আছে যা নষ্ট হতে দিতে পারি না, তাই বছরের পর বছর চেষ্টা করে, বিপুল অর্থ ব্যয় করে, এই অনন্য সিনেমাকে বাঁচালাম! কেন বলতে পারি না আকিরা কুরোসোয়ার মতো, ‘সত্যজিতের ছবি না দেখা মানে চন্দ্রসূর্যকে না দেখা!’

ক্রাইটেরিয়ন কালেকশন-এর বিশেষজ্ঞদের কাছে ঋণী হয়ে রইল সত্যজিতের অপু, দুর্গা, সর্বজয়া। ঋণী হয়ে রইল রুপোলি কাশের দিগন্তপ্রতান। ঋণী হয়ে রইল সেই রেলগাড়ি যা দেখতে অপু-দুর্গা দৌড়চ্ছে কাশের বুক চিরে। ঋণী হয়ে রইল অসহায় ইন্দির ঠাকরুনের রাগ, অভিমান, নিঃসঙ্গ দারিদ্র্য, ‘দিন তো গেল সন্ধ্যা হল’ গান, ও ইন্দির ঠাকরুনের সেই অবিস্মরণীয় মৃতু্যদৃশ্য! ক্রাইটেরিয়ন এবং অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার্সের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে। তাঁদের মুখে শোনাও গেল অপুর পুনরুদ্ধারের কাহিনি। তাঁরা স্বীকার করলেন, ইতালির বোলোনিয়াতে একটি সংস্থা পুড়ে যাওয়া ফিল্মকে ফিরিয়ে আনার জাদু জানে। সেই সংস্থার সাহায্য ছাড়া ফিরত না অপু-ট্রিলজি। হারিয়ে যেত সত্যজিতের এই অনন্য সিনেমা চিরদিনের জন্য!

সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ তেষট্টিতে পড়ল। ছোট্ট অপু, ছোট্ট দুর্গা। তাদের চোখের তারায় ঝলমল করছে কালোর আলো! দৃষ্টিতে কী দীপ্ত জীবন, এখনও! সবই সেই সাহেবদের দক্ষতা, সাহেবদের ভালবাসা, সাহেবদের মমতা ও শিল্পবোধের দান! কে বলবে ফিরে এল অগ্নিদগ্ধ অপু-দুর্গা! এ তো অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে তাদের নতুন জন্ম!

মৃত্যুর দু’দশক পরে আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ফাটাকেষ্টর কালীপুজো ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement