Advertisement
Advertisement
P V Sindhu

‘ঝঞ্ঝাটের ভয়ে বিশ্বাস থেকে সরে যেও না’, মহিলাদের বার্তা সিন্ধুর

জীবনে নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক করার পাসওয়ার্ড দিলেন হায়দরাবাদি শাটলার।

P V Sindhu's exclusive interview and message for woman
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:August 29, 2019 7:21 pm
  • Updated:August 30, 2019 3:10 pm  

দেশের মহিলাদের এই বার্তা দিতে চান। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সোনার মেডেল যদি বিশাল স্টেটমেন্ট হয়। এটা পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু-র বিবৃতি নম্বর দুই। বুধবার রাতে হায়দরাবাদে বন্ধুর গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে তিনি ফোনে গৌতম ভট্টাচার্যর সঙ্গে।

সবাই একটা সময় বলতে শুরু করেছিল সিন্ধু হল ফাইনাল স্পেশালিস্ট। সেই অন্তহীন নেগেটিভকে পজিটিভ করলেন কী করে?

Advertisement

সিন্ধু: আমার মনে হয় যে লোকগুলো বলছিল। ক্রমশ যাদের কথাগুলো ভনভন করছিল। তাদের জবাব আমার র‌্যাকেটই দিয়ে দিয়েছে। আমার কি কিছু বলার দরকার আছে?

আমি জানতে চাইছি নির্দিষ্ট একটা বিন্দুতে ক্রমাগত আটকে যাওয়া মানুষ কীভাবে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার চূড়ান্ত সীমান্তটা অতিক্রম করতে পারে?

সিন্ধু: তাকে দু’ভাবে খাটতে হবে। টেকনিক্যাল দিকগুলোকে আরও ধারালো করতে হবে। মানসিক দিকটাকে নিখুঁত করতে হবে।

আর একটু বুঝিয়ে যদি বলেন। রুপোর সিন্ধু কী করে সোনার সিন্ধু হলেন?

সিন্ধু: আমি কিছু পয়েন্ট দিয়ে দিচ্ছিলাম আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে। সেগুলো আনফোর্সড এরর হয়ে যাচ্ছিল। ফাইনাল ম্যাচে এসব পয়েন্ট দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। বলতে পারেন আমার ডিফেন্সটা নিখুঁত করা নিয়ে অনেক খেটেছি। দিনের শেষে প্র‌্যাকটিস এবং আরও প্র‌্যাকটিস ছাড়া টেকনিক্যালি নিখুঁত হওয়ার কোনও রাস্তা নেই।

[ আরও পড়ুন: ‘কমেডিয়ান নন, ভানুদা পূর্ণাঙ্গ অভিনেতা’, স্মৃতি রোমন্থন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ]

আপনার নতুন কোরিয়ান ট্রেনার কিম সম্পর্কে অনেক প্রশংসাসূচক কথা শোনা যাচ্ছে। কিম জি হুয়ান নতুন কী শেখালেন?

সিন্ধু: উনি আমার স্কিল সেট নিয়ে পড়ে আছেন গত কয়েক মাস। সেটা খুব ইউজফুলও হয়েছে। তবে বিশেষভাবে যদি জিজ্ঞেস করেন, বলব আমার নেট প্লে-টা উনি অনেক ভাল করেছেন।

এর আগে গোপীচাঁদ আপনাকে নিয়ে নাগাড়ে পড়ে ছিলেন। এখনও আছেন। গোপীচাঁদের তাৎপর্য আপনার এই সাফল্যে ঠিক কী?

সিন্ধু: গোপী স্যর তো আমায় তৈরি করেছেন স্টেপ বাই স্টেপ। এক-একটা ইটের পর নতুন ইট বসিয়েছেন।

বলছিলেন মানসিকতা ঠিক করার কথা। আপনার রুপো থেকে সোনার জার্নিতে কি কোনও মনোবিদের কাহিনিও আছে?

সিন্ধু: (একটু সময় নিয়ে) স্পোর্টস সাইকোলজিস্টদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সেটা খুব ইউজফুলও হয়েছে। অনেক সময় আমি ওঁদের সঙ্গে কথা বলি। বললাম না, উপকারও পাই। এর সঙ্গে করি মেডিটেশন। মন তাতে আরও শান্ত থাকে।

আপনার পর্যায়ে না হলেও অনেক ছোটখাটো স্তরেও একজন মহিলার এই সমস্যা হতে পারে। সে নিয়মিত সেকেন্ড হয় কিন্তু কিছুতেই ফার্স্ট হতে পারে না। সিন্ধুসভ্যতা তাকে কী শেখাল?

সিন্ধু: (হাসি) শেখাল যে নিজের ওপর বিশ্বাস কখনও হারাতে নেই। আশেপাশে যে যা ইচ্ছে বলতে পারে। সেগুলো ক্রমাগত কানেও বাজবে। খারাপ লাগবে। আপসেট হয়ে র‌্যাকেট তুলতে ইচ্ছে করবে না। আমার তো এক-এক সময় মনে হত লোকগুলোকে বলি, আরে ভাই ম্যাচে একই সঙ্গে দু’জন জিততে পারে না। একজন জিতবে একজন হারবে, এটাই নিয়ম। আর যে হেরেছে সে কোনও অপরাধ করেনি। কিন্তু দিনের শেষে সেই নেগেটিভিটি নিয়ে পড়ে থাকিনি। আবার উঠেছি। নিজের ওপর বিশ্বাস পুনর্স্থাপন করেছি। নতুন করে লড়েছি। তারপর কী হয়েছে আপনারা জানেন।

জাম্প কাট নরেন্দ্র মোদীর অফিস। কী বললেন প্রধানমন্ত্রী?

সিন্ধু: (হাসি) বললেন দারুণ করেছ। কিন্তু শুভেচ্ছা জানাই, আরও অনেক মেডেল তোমাকে দেশের জন্য আনতে হবে।

[ আরও পড়ুন: মহাকাব্য থেকে ধর্মবিশ্বাস, জানুন কৃষ্ণ জন্মকথার অন্তর কাহিনি ]

একেই টোকিও নিয়ে লোকে বলতে শুরু করেছে সোনা চাই। তার মধ্যে আবার প্রধানমন্ত্রীর চাপ। দুঃসহ লাগছে?

সিন্ধু: একেবারেই না। রেসপন্সিবিলিটি আমার ভাল লাগে। বেশ কয়েক বছর ধরেই তো আমি এটায় অভ্যস্ত।

ঠিক। ২০১৬ রিওর রুপো জেতা থেকেই তো আপনি ভারতবাসীর মানচিত্রে। একটা কথা বলুন। রিওর সেই মেয়েটা আর সুইজারল্যান্ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী সিন্ধু। দু’জনের তফাত কী?

সিন্ধু: বিশাল তফাত কিছু নেই। কিন্তু সোনা জেতা এই মেয়েটা তুলনায় বেশি ম্যাচিওর্ড (হাসি)।

পিটি ঊষার সঙ্গে আপনার একটা ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে। কিশোরবয়সী আপনি ঊষার কোলে। দেখেছেন?

সিন্ধু: হ্যাঁ দেখেছি। খুব মজাও পেয়েছি। উনি তো অনেক বছর আগে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তখন তোলা।

জিতে ফেরার পর ঊষার সঙ্গে কথা বলেছেন?

সিন্ধু: নাহ, কোনও সময়ই পাইনি। কয়েক মাস আগে দেখা হয়েছিল। কিন্তু এবার জিতে ফেরার পর যা চলছে, একেবারে রুদ্ধশ্বাস। কোনও সময়ই পাচ্ছি না। প্রাইম মিনিস্টারের কাছে গেছিলাম। ফিরে এসে হায়দরাবাদে রাজ্যপালের কাছে। সিএমের কাছে। প্লাস একটা লম্বা প্রেস কনফারেন্স করলাম। সময়ই হয়ে ওঠেনি।

জীবনের এত বড় স্বপ্নে আরোহণ করে পিভি সিন্ধু নিজেকে নিজে কী উপহার দিলেন?

সিন্ধু: (হাসি) ভেবেছিলাম কিছু একটা দেব। কিন্তু সেটা কেনার সময় বের করতে পারিনি। বললাম না প্রাণান্তকর ব্যস্ততা চলছে। তবে একটা কিছু কেনার ইচ্ছে আছে।

ছোট-ছোট কোনও উপহার যেটা হাতের কাছেই থাকতে পারে?

সিন্ধু: হ্যাঁ সেটা ভেবেছি। একটু বিরিয়ানি খেতে চাই।

হায়দরাবাদি বিরিয়ানি?

সিন্ধু: হ্যাঁ।

[ আরও পড়ুন: জাতীয় পুরস্কার আমার আগেই পাওয়া উচিত ছিল: আয়ুষ্মান খুরানা ]

টুর্নামেন্টের মধ্যে কি বিরিয়ানি খাওয়া অ্যালাওড?

সিন্ধু: বলছেন কী! (আতঙ্কিত) একেবারেই না। এবার একদিন নিয়ম ভেঙে খেতে চাই। আদারওয়াইজ আমার তো সেট ডায়েট।

শেষ প্রশ্ন। আর একবার জানতে চাইছি। আপনাকে যারা মডেল ভাবে, দেশের সেই লক্ষ লক্ষ মেয়েদের কী বলবেন?

সিন্ধু: বলব এক, যেটা করতে ভাল লাগে সেটা চুটিয়ে করুন। দুই, ফোকাসড থাকুন। লক্ষ্য থেকে নড়বেন না। তিন, প্রচণ্ড পরিশ্রম করার জন্য তৈরি থাকুন। চার, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুরণ করতে হলে কিছু স্যাক্রিফাইস অবশ্য। ত্যাগ ছাড়া শৃঙ্গে চড়া যাবে না। পাঁচ, প্রচুর ওঠানামা আসবে। তাতে ভেঙে পড়লে চলবে না। ছয়, নিজের ওপর বিশ্বাস যেন কখনও না যায়। বিশ্বাসটাই আসল। ওটাই রক্ষা করে। ওটাই দিনের শেষে জেতায়।

সোনার মন্ত্র

  • যেটা করতে ভাল লাগে সেটা চুটিয়ে করুন।
  • ফোকাসড থাকুন। লক্ষ্য থেকে নড়বেন না।
  • প্রচণ্ড পরিশ্রম করার জন্য তৈরি থাকুন।
  • উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুরণ করতে হলে কিছু স্যাক্রিফাইস অবশ্য। ত্যাগ ছাড়া শৃঙ্গে চড়া যাবে না।
  • প্রচুর ওঠানামা আসবে। তাতে ভেঙে পড়লে চলবে না।
  • নিজের ওপর বিশ্বাস যেন কখনও না যায়। বিশ্বাসটাই আসল। ওটাই রক্ষা করে। ওটাই দিনের শেষে জেতায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement