আট থেকে আশি তাঁকে দেখে গেয়ে ওঠে ‘সুরাইয়া জান লেগি ক্যায়া’। সেই ক্যাটরিনা কাইফ এই মুহূর্তে সিঙ্গল, কিন্তু রেডি টু মিঙ্গল নন। বিয়ের পাত্রও পাচ্ছেন না। মুম্বইয়ে মুখোমুখি অহনা ভট্টাচার্য।
নায়িকারা সব একে একে বিয়ে করে ফেলছেন। সবার নজর আপনি কবে ছাদনাতলায় বসবেন?
ক্যাটরিনা: সবাই আমাকে এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। কিন্তু বিয়েটা কি আমার হাতে বলুন? কবে বিয়ে হবে এটা কি আগে থেকে প্ল্যান করা যায়? ইন্টারনেটে গিয়ে একটা বোতাম টিপে লিখে দিলাম আমার মনের মানুষ এসে গিয়েছে আর তক্ষুনি সে আমার সামনে হাজির হয়ে যাবে- এ রকম আবার হয় নাকি? আমি মনে করি না আগে থেকে পরিকল্পনা করে বা পাত্র খুঁজে কোনও লাভ আছে। যখন হওয়ার ঠিক হবে। নিজে থেকেই হবে।
আপনি জীবনে কিছুই প্ল্যান করে করেন না?
ক্যাটরিনা: অনেক সময় এমন হয়েছে যে আমি কোনও কিছু পরিকল্পনা করে করেছি, কিন্তু সেটা সফল হয়নি। তাই আমি বিশ্বাস করি, আগে থেকে পরিকল্পনা না করে কোনও কাজ করলে হয়তো সেটা সফল হয়ে যাবে!
নিয়তিতে বিশ্বাস করেন?
ক্যাটরিনা: হ্যাঁ, ভীষণ ভাবে।
একটু আগে বললেন ইন্টারনেটে বোতাম টিপে মনের মানুষ পাওয়া যায় না। আপনাকে যদি খুঁজতে বলা হয়, কী রকম পাত্র চাইবেন?
ক্যাটরিনা: সে মজা করতে ভালবাসবে। শক্তিশালী হবে। একটু আধ্যাত্মিক মনের হবে। প্লাস তাকে হতে হবে পরিণত, সফল আর স্বাধীনচেতা।
[ ‘আমার বিয়েটা সত্যি রূপকথা’, স্ত্রীকে কৃতিত্ব রণবীরের ]
আপনার সঙ্গে দীপিকা পাড়ুকোনের কোল্ড ওয়ার নিয়ে বহু আলোচনা হয়। তার পরেও ওঁর বিয়ের রিসেপশনে গেলেন কেন?
ক্যাটরিনা: দেখুন, আমি আবেগের বশে চলি। যদি মনে করি কোনও কাজ করা উচিত, তা হলে সেটা করে ফেলি। আমার মনে হয়েছিল ওখানে যাওয়া উচিত তাই গিয়েছিলাম, সিম্পল। ওখানে গিয়ে খুব আনন্দ পেয়েছি। সবার সঙ্গে গল্পগুজব করেছি। এটা দীপিকা-রণবীরের জীবনের একটা বড় অধ্যায়। একটা বড় পদক্ষেপ। সেই সেলিব্রেশনের অংশ হতে পেরে আমিও খুশি।
আপনার আর দীপিকার সম্পর্ক নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়। মিডিয়া কি আপনার প্রতি একটু বেশিই কঠোর?
ক্যাটরিনা: কখনও কেউ কেউ কঠোর কথা বলে ফেলেন। কখনও ভাল কথা বলেন। আবার কখনও কিছুই বলেন না। আমি আর দীপিকা কখনও একে অপরের সার্কলে ছিলাম না। তাই লোকে সেটা নিয়ে মন্তব্য করবে এটাই স্বাভাবিক। ঠিক হ্যায় ইয়ার! ইটস ওকে উইথ মি।
দেখতে দেখতে বলিউডে পনেরো বছর পার করে দিলেন। জার্নিটা কেমন?
ক্যাটরিনা: অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক কিছু শিখেছি। কাজ করতে করতে কাজটা শিখেছি। গত কয়েক বছরে এমন সব জিনিসে বেশি মন দিচ্ছি যেগুলোয় আমার আরও উন্নতি দরকার। যেমন ডায়ালগ বলার কায়দা বা কোনও চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তুতি নেওয়া। আমার সৌভাগ্য যে এমন কয়েকজনকে পাশে পেয়েছি যাঁদের ছাড়া আমার চলে না। আমার টিম আমার এই দুর্বল জায়গাগুলো ঠিক করতে সাহায্য করছে।
আপনাকে ইদানীং চরিত্র নিয়েও বেশ এক্সপেরিমেন্ট করতে দেখা যাচ্ছে।
ক্যাটরিনা: যখনই আমি নতুন কিছু করি বা শিখি, খুব আনন্দ পাই। আসলে বেশির ভাগ মানুষ নিজের কমফোর্ট জোনে থাকতে পছন্দ করেন। আমিও ব্যতিক্রম নই। নিজের সেফটি এরিয়ায় আমিও নিশ্চিন্ত বোধ করতাম এত দিন। কিন্তু ইদানীং আমার ইচ্ছে করে নতুন ধরনের কাজ শিখতে, নতুন কিছু করতে। আর আমি এমন কিছু পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছি যাঁরা খুব ভাল করে গল্প বলতে জানেন। ফলে কয়েকটা স্ট্রং চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, যে রকম আগে কখনও করিনি। তা ছাড়া এত বছর ধরে দর্শক আমাকে দেখছেন। তাঁদের সামনে নতুন কিছু তুলে ধরা আমার কর্তব্য। তাই না?
‘জিরো’-তে আপনার ‘জব তক হ্যায় জান’-এর দুই সহ-অভিনেতা শাহরুখ খান আর অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে ফের কাজ করার সুযোগ পেলেন। কেমন লাগছে?
ক্যাটরিনা: ভীষণ ভাল লাগছে! শাহরুখের বিভিন্ন বিষয়ে এত জ্ঞান, ওঁর প্যাশন, ওঁর এনার্জি- সব আগের মতোই রয়েছে। এই ক’বছরে কিছু বদলায়নি। তবে এই ছবিতে অনুষ্কার সঙ্গে আমার বেশি সিন নেই। অনুষ্কার সঙ্গে আলাদা করে একটা ছবিতে কাজ করতে চাই, হয়তো দুই মেয়ের গল্প বা কোনও অ্যাকশন ফিল্ম!
আনন্দ এল রাইয়ের এই ছবিতে আপনাকে একজন অভিনেত্রীর চরিত্রে দেখা যাবে। নিজের জীবনের সঙ্গে ববিতা কুমারীর চরিত্র কতটা মেলে?
ক্যাটরিনা: প্রথমেই বলি, আমি মদ খাই না। ফরচুনেটলি, আই ডোন্ট ব্যাটল উইথ অ্যালকোহলিজম। ববিতা সেখানে খোলাখুলি মদ খায়। তা ছাড়া ও খুব অ্যাগ্রেসিভ, যা মনে আসে মুখের ওপর বলে দেয়। আমি ও রকম নই।
মুখের ওপর বলে দেওয়া কি সব সময় অনুচিত?
ক্যাটরিনা: না, সব সময় অনুচিত না। মাঝে মাঝে মানুষের মুখের ওপর উচিত কথা শুনিয়ে দেওয়া দরকার। তাতে হয়তো নিজেকে বোকা বোকা মনে হতে পারে, কিন্তু জাস্ট বলে নিজে হালকা হয়ে যাওয়া উচিত। যদিও আমি নিজে কখনও সেটা করি না। কথা শোনানোর দরকার মনে হলেও আমি কিচ্ছু বলি না। এই অনুভূতিটা নিয়েই থাকি যে শেষ পর্যন্ত আমি কিছু বলিনি।
[ শীতে উষ্ণ থাকুন, ঋতাভরী ও রেচেলের থেকে জেনে নিন টিপস ]
তার মানে আপনি বেশির ভাগ অনুভূতি নিজের মনের মধ্যেই রেখে দেন, প্রকাশ করেন না?
ক্যাটরিনা: নিজেই সেগুলোকে সামলানোর চেষ্টা করি। কারণ জীবনটা আমার। আর কেউ যদি আমার জীবনে আর না-ই থাকে, তা হলে তাকে নিয়ে সময় নষ্ট করব কেন? আপনি হয়তো এটাকে ইগো বলবেন বা ভয়। কিন্তু আমি মনে করি কখনও কখনও কিছু না বললেও ‘আমি শেষ পর্যন্ত কিছু বলিনি’, এই অনুভূতিটা মানুষকে শান্তি দেয়।
কখনও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান না?
ক্যাটরিনা: নিয়ন্ত্রণ হারাই না। তবে জীবন তো সব সময় এক রকম ভাবে চলে না, রাস্তা কখনও উঁচু তো কখনও নিচু। এই হয়তো সব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে, আপনি নিশ্চিন্ত বোধ করছেন। পরমুহূর্তেই আপনার মাথায় দুঃখের পাহাড় নেমে আসতে পারে। তাই আমি মাঝে মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি না।
তখন কী করেন?
ক্যাটরিনা: এক-একটা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রত্যেকের নিজস্ব কায়দা থাকে। কোপিং মেকানিজম থাকে। কেউ শরীরচর্চা করে, কেউ পরিবার আর বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়। আমি যদি মনে করি যে কখনও আমার ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হচ্ছে, তা হলে হয় পুরোপুরি কাজের মধ্যে ঢুকে যাই, অথবা কাজের বাইরের জীবনে নিজের একশো ভাগ দিয়ে দিই। কিন্তু দুটোর কোনওটাই হেলদি নয়। কারণ দুটোতেই শেষে গিয়ে ক্লান্তি আসে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.