কারণ সোশ্যাল মিডিয়াতেও এখন প্রেমের ঘটকালি চলছে! লিখছেন শুভঙ্কর চক্রবর্তী।
সাত বন্ধু। তরুণিমা অধ্যাপিকা। পৃথ্বী আইনজীবী। দীপাঞ্জয় ডাক্তার। লগ্নজিতা কলেজ পড়ুয়া। জিশান চাকরিজীবী। সুমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। রাজেশ সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাত বন্ধুর আলাপ। বন্ধুত্ব ছাড়াও এঁদের একটা কমন ইন্টারেস্ট আছে।
ঘটকালি! হ্যাঁ, এঁরা প্রত্যেকে ঘটক। তবে পেশাদার ঘটকের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘটকালি এঁরা করেন না। এঁদের কারবার সোশ্যাল ফোরামে। এঁরা ডিজিট্যাল ঘটক! ভাবছেন কীভাবে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় পৃথ্বী আইচের। কথাবার্তা হয় নতুন কিছু করা নিয়ে। ঠিক হয় একটা গ্রুপ তৈরি হবে, ‘প্রেম পাতানোর গ্রুপ’। ‘সিঙ্গল’ নর-নারীদের ‘কাপল’ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হবে এই গ্রুপ। গ্রুপে পোস্ট হবে সিঙ্গলদের ছবি। সঙ্গে তাঁদের ভাললাগা থেকে শুরু করে কেমন পার্টনার পছন্দ, সব তথ্য। গ্রুপের অন্য মেম্বারদের পছন্দের সঙ্গে ক্রাইটেরিয়া মিলে গেলেই কেল্লা ফতে! একে অপরের ইনবক্সে আলাপ, প্রেম এবং বিয়ের পিঁড়ি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুরু হল সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণিমা-পৃথ্বীদের নতুন অভিযান, মানে গ্রুপ। নাম ঠিক হল ‘সিঙ্গলদের বিবাহ অভিযান’!
শুরুটা দু’জনে হলেও জুটে গেল বাকি পাঁচজন। গ্রুপের সাতজন অ্যাডমিন। মেম্বার সংখ্যা ৮৫,০০০! “রোজ প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাটটা করে পোস্ট আসে গ্রুপে,” বলছিলেন তরুণিমা।
কতজনের চার হাত এক করতে পারলেন?
“প্রচুর। গুনে শেষ করতে পারব না। গ্রুপ ইনবক্সে প্রচুর মেসেজ আসে, ‘ধন্যবাদ অ্যাডমিন’। তা ছাড়া আজকাল তো ফেসবুক সূত্রে আলাপ এবং তারপর প্রেম-বিয়ে হয়। আমরা একটা প্ল্যাটফর্ম দিয়েছি সিঙ্গলদের,” বললেন তরুণিমা। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন পৃথ্বী আইচ। পরের প্রশ্ন ছিল গ্রুপে মেয়েরা নিজেদের ছবি পোস্ট করছেন। বাকিরা তা দেখছেন। এমনও তো হতে পারে যে, সে সব ছবি অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ ব্যবহার করল। “আমরা গ্রুপে বহুবার জানিয়েছি। নিজেদের ছবি কেউ পোস্ট করবেন না। করলে তা একেবারে নিজের দায়িত্বে। কিন্তু কে কার কথা শোনে! ছবি পোস্ট করছে, এমনকী বারবার অনুরোধও করা হচ্ছে সে ছবি যেন গ্রুপে অ্যাডমনিরা পোস্ট করে।”
‘সিঙ্গলদের বিবাহ অভিযান’ ক্লোজড্ গ্রুপ। তাই অ্যাডমিনদের আমন্ত্রণ অথবা তাদের অনুমোদন ছাড়া গ্রুপের মেম্বারশিপ মিলবে না।
আকাশে-বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। আর কয়েক দিন বাদেই ঢ্যাং কুড়া কুড় বাজল বলে। পটুয়াপাড়ায় চলছে রঙের ফাইনাল টাচ। অন্যদিকে ‘সিঙ্গলদের বিবাহ অভিযান’ গ্রুপে বাড়ছে পোস্ট, বেশিরভাগ পোস্ট ঠিক এরকম- ‘অষ্টমীতে একা অঞ্জলি দেব নাকি? কেউ একসঙ্গে ফুল ছুড়বেন?’
কথাটা শুনেই হেসে ফেললেন দুই অ্যাডমিন। “এবার পুজোয় গ্রুপ মেম্বাররা যেন কেউ সিঙ্গল না থাকে। তাই পোস্ট অ্যাপ্রুভ করা বাড়িয়ে দিয়েছি,” বললেন তরুণিমা।
কিন্তু একটু আগে যে বললেন আপনি নিজেই সিঙ্গল?
“আমি একা নই। অ্যাডমিনদের প্রত্যেকেই সিঙ্গল। তার জন্যেই তো গ্রুপের বিবরণে লেখা রয়েছে, ‘যদি কেউ ভাবেন গ্রুপে বর/বউ পাবেন-ই, অ্যাডমিনদের দেখুন। তাঁরা ঘোরতর সিঙ্গল,” হাসতে হাসতে বললেন তরুণিমা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.