সজাগ থাকতে নানান রকম মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আজও সেটে সবচেয়ে এনার্জেটিক ব্যক্তিটি তিনি। ‘স্যর’ অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে সুজয় ঘোষ-এর অভিজ্ঞতা শুনলেন প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত।
অমিতাভ-শাহরুখ জুটি
দু’জনেই অসম্ভব এনার্জেটিক মানুষ। একসঙ্গে থাকলে বোঝা কঠিন হয়ে যায়, কাকে ছেড়ে কাকে দেখব? শাহরুখের একটা ব্যাপার আমি খুব রেসপেক্ট করি। তিনি জানেন এই ফিল্মে তাঁর ভূমিকা অ্যাক্টরের নয়, প্রোডিউসারের। আর ঠিক সে ভাবেই তিনি বিহেভ করেছেন। সত্যিকারের প্রোডিউসারের মতো শাহরুখের একমাত্র ইন্টারেস্ট আর লক্ষ্য হল এই প্রোডাক্টটাকে যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় ভাবে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মার্কেটিং, প্রোমোশন, পোস্ট প্রোডাকশন, সবেতেই শাহরুখ খুব সাহায্য করেছেন। আমাদের দেশে অনেকে ভাবে প্রোডিউসার শুধু ফিল্ম তৈরির টাকা দেয়। আদতে তা নয়। প্রোডিউসার এমন একজন যিনি ফিল্মটাকে আরও ভাল করে তোলেন। শাহরুখ যেটা করেছেন। অনেকে এটাও জিজ্ঞেস করেছেন যে, এই ফিল্মে শাহরুখ ক্যামিও করবেন কি না। যাঁরা ইতিমধ্যে ফিল্মটা দেখে ফেলেছেন, তাঁরা তো জানেনই। বাকিরা উত্তরটা জানতে হলে আসুন!
এনার্জি দিন-দিন বাড়ছে
শাহরুখের এনার্জির কথা বলছিলাম। কিন্তু স্যর হচ্ছেন যে কোনও সেটের সবচেয়ে ইয়ং মেম্বার। সবচেয়ে তরতাজা, সবচেয়ে এনার্জেটিক। পুরো সেটের ‘এনথু’ এক দিকে আর স্যরের ‘এনথু’ এক দিকে। লম্বা শুটিং শিডিউল থাকলে আমরা সবাই মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু স্যর কখনও ঘুমোন না। সব সময় তিনি জেগে আছেন। স্যর ইজ অলওয়েজ অ্যাওয়েক অ্যান্ড শার্প। ওঁর সঙ্গে কাজ না করে থাকলে স্যরের এনার্জি লেভেল যে ঠিক কতটা, স্রেফ শব্দে বলে বোঝানো অসম্ভব। শুধু অভিনেতা নয়, মানুষ হিসেবেও ওঁর জীবনীশক্তি দেখার মতো। আমার মনে হয় না এর সঙ্গে বয়সের কোনও সম্পর্ক আছে। কারণ স্যরের এনার্জি দিন দিন বাড়ছে। রোজই ওঁকে দেখে, ওঁর এনার্জি দেখে চমকে যাই।
[চাকরি খুঁজছেন বিগ বি! ব্যাপারটা কী?]
এতগুলো মোবাইল নিয়ে কী করেন?
স্যরের কাছে একটা-দুটো নয়, প্রচুর মোবাইল ফোন আছে। প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডের ফোন। আর প্রত্যেকটাই তিনি ব্যবহার করেন। দেখে এতটাই অদ্ভুত লেগেছিল যে, একদিন জিজ্ঞেস করে ফেললাম, স্যর এতগুলো ফোন নিয়ে আপনি কী করেন? কী দরকার আপনার এতগুলো ফোনের? উনি বললেন, “ইট হেলপস মি টু কিপ শার্প। এগুলো আমাকে সজাগ থাকতে সাহায্য করে। আমি যত বেশি ফোন ব্যবহার করি, বৈচিত্রের সঙ্গে তত বেশি মানিয়ে নিতে পারি। একটা জিনিস থেকে অন্য জিনিসে সহজে সুইচ করতে পারি।” শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। আসলে প্রত্যেকটা ব্র্যান্ডের ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আলাদা। ইউজার ইন্টারফেস আলাদা। কোথাও ‘হোম’ বাটনটা বাঁ দিকে, কোথাও কি-প্যাড অন্য রকম। আর এত রকম মোবাইলের সব ক’টা স্যর সমান স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের সবারই কিন্তু একটা ফোন থেকে আর একটা ফোনে সুইচ করতে সমস্যা হয়। নতুন ফোনের সব কিছু আয়ত্ত করতে কিছুটা সময় লাগে। যার জন্য চট করে লোকে ফোনের ব্র্যান্ড পালটায় না। স্যর কিন্তু ঠিক সেটাই করেন। আমরা কেউ এ ভাবে ভাবব না। অথচ তিনি ভাবেন।
বাঁধা ডায়েট
বিরাট কোহলির ডায়েট চার্ট আমরা সবাই জানি। অমিতাভ বচ্চনের ডায়েট চার্টটা কী, আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে। এটুকু জানি, স্যর স্ট্রিক্ট ভেজিটেরিয়ান। ওঁর নির্দিষ্ট একটা ডায়েট আছে, যেটা উনি খুব কড়া ভাবে ফলো করেন। উলটোপালটা খাবার খুব বেশি খান না। এর বাইরে সেটে অমিতাভ বচ্চন আর পাঁচজন অভিনেতার মতোই থাকেন। আপনাদের শুনতে হয়তো আশ্চর্য লাগবে, কিন্তু স্যরকে আমি কোনও দিন দেখিনি আলাদা স্টারসুলভ বলয়ে নিজেকে আটকে রাখতে। সহকর্মী হিসেবে উনি দারুণ এনজয়েবল একজন মানুষ।
সেটে পরিচালক, বাইরে ফ্যান
হি ইজ অমিতাভ বচ্চন আফটার অল। ওঁর সঙ্গে কথা বলতে হলে যে কারও থরহরিকম্প অবস্থা হবে। আমারও কিছুটা হয়। কিন্তু একবার শুটিং শুরু হয়ে গেলে ব্যাপারটা অন্য রকম হয়ে যায়। তখন আমাদের মাথায় একটাই জিনিস থাকে– কী করলে ফিল্মের ভাল হবে? উনি অমিতাভ বচ্চন, তখন কিন্তু সেটা মাথায় রাখলে চলে না। কারণ ফিল্মিং শুরু হয়ে গেলে পরিচালক আর অভিনেতা, দু’জনকেই ফিল্মের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হয়। কেউ যত বড় স্টারই হোক না কেন, ফিল্মের ওপরে সে নয়। তখন ফিল্মটাই আমাদের সব। শুটিংয়ের সময় ধরুন আমার কোনও সাজেশন আছে। সেটা যদি ভয় পেয়ে না বলি, তাতে ফিল্মের প্রতি অন্যায় করা হবে। আমার কোনও কনসার্ন থাকলে অবশ্যই স্যরকে বলি। উনিও শোনেন। এই সময়টা যদি আমি ভয় পেয়ে যাই, সেটা ওঁর প্রতিও অন্যায় করা হবে। কারণ উনি ক্যামেরার পিছনে একজন ডিরেক্টরকে দেখতে চান, কোনও ফ্যানবয়কে নয়। স্যর এক্সপেক্ট করেন আমি তাঁর প্রতি নয়, ফিল্মের প্রতি লয়্যাল থাকব। আমাদের দু’জনের এটা নিয়ে আলোচনা হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নিই। পরিচালক হিসেবে আমার যা সাজেশন, স্যরকে বলি। কিন্তু সেটা শুধু শট চলার সময়। সেটের বাইরে স্যরকে কিছু বলব, আমার অত বুকের পাটা নেই!
একেই বলে কিস্তিমাত
ইন্টারনেটে কয়েক জায়গায় দেখছিলাম আমাকে কোট করে বলা হয়েছে, আমি নাকি অমিতাভ বচ্চনকে টেনেটুনে এই ছবিটা করতে রাজি করিয়েছিলাম। একদম ভুল খবর। আসলে যেটা হয়েছিল, আপনাদের বলি। বেসিকালি আমি স্যরের কাছে গিয়েছিলাম ওঁকে এই ফিল্মে অভিনয় করার প্রস্তাব দিতে। উনি রাজিও হয়েছিলেন। তখন কিন্তু আমি ছবিটা ডিরেক্ট করছিলাম না। ক্রিয়েটিভ প্রসেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। স্যরকে তখন বারবার বলেছিলাম, এটা দারুণ ফিল্ম। ভদ্রলোক এতই বুদ্ধিমান, এতই শার্প যে শোনামাত্র বললেন, “ইউ ওয়ান্ট মি টু ডু দিস ফিল্ম বিকজ ইট ইজ সাচ আ ব্রিলিয়ান্ট স্ক্রিপ্ট। তুমি আমাকে এই ছবিটা করতে বলছ কারণ তোমার মতে এটা দুর্দান্ত স্ক্রিপ্ট। পারফেক্ট চিত্রনাট্য।” বললাম, হ্যাঁ খুব ভাল স্ক্রিপ্ট। আর তার পরেই ঠিক একজন পেশাদার দাবা খেলোয়াড়ের মতো স্যর আমাকে বললেন, “দেন ওয়াই আর ইউ নট ডিরেক্টিং ইট? তুমি নিজে ডিরেক্ট করছ না কেন?” ওই সময় মনে হয়েছিল, একেই বলে কিস্তিমাত! আই থট দ্যাট ওয়াজ ভেরি ওয়েল প্লেড। তার পরেই ফিল্মটার পরিচালনায় নামলাম।
[নির্ধারিত রিলিজ ডেটের দু’দিন আগেই আসছে ‘কলঙ্ক’!]
কেমিস্ট্রিটা অজানাই থাক না
এই প্রশ্নটা অনেকেই আমাকে করেন যে, স্যর আর আমার কেমিস্ট্রির রহস্যটা কী? আমি অনেস্টলি জানি না। যদি জানতাম তা হলে তো হয়েই যেত। হয়তো বিরাট কোনও পুরস্কার পেয়ে যেতাম! কিন্তু আমি সত্যিই জানি না। আর একটা কথা, আমি জানি না যে এই সিক্রেটটা আদৌ আমি জানতে চাই কি না। আসলে না জানার মধ্যেও একটা মজা রয়েছে। স্যরের সঙ্গে প্রত্যেকবার কোনও কাজ যখন শুরু করি, একেবারে শূন্য থেকে শুরু করি। সব যদি জানতেই পারতাম, তা হলে এই আনন্দটা বোধহয় থাকত না।
‘পিংক’ আশীর্বাদ
‘পিংক’-এর পর অমিতাভ বচ্চন আর তাপসী পান্নু আবার একসঙ্গে। শুধু তাই নয়, ‘বদলা’-তেও কোর্টরুম ড্রামার রেশ আছে। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, একটু ঝুঁকি নেওয়া হয়ে গেল না? আমার কিন্তু মনে হয়, ব্যাপারটা একদম রিস্কি নয়। আমার কোনও ‘পিংক’ হ্যাংওভার নেই। বাকিদের মধ্যে যদি থেকে থাকে, তাহলে সেটা খুব ভাল হ্যাংওভার। আই উড রাদার হ্যাং ওভার পিংক দ্যান এনি আদার কালার! ‘পিংক’ দুর্ধর্ষ সিনেমা। সেই ফিল্মের তারকা নিয়ে কাজ করাটা আমাকে বদার করেনি। আসলে সব ফিল্মের নিজস্ব কিছু ডিমান্ড থাকে। কাকতালীয় ভাবে এই ফিল্মেরও ডিমান্ড ছিলেন স্যর আর তাপসী। এ রকম তো হতেই পারে যে আরও একটা ফিল্ম হল যেটা স্যর আর তাপসীকেই ডিমান্ড করে। কোর্টরুম ড্রামার ছোঁওয়া হয়তো সেই ফিল্মটাতেও থাকল। তাতে অসুবিধে কোথায়? কত রকমই তো লাভ স্টোরি হয়। তা ছাড়া ঘুরেফিরে তো সেই
পাঁচ-ছ’টা ইমোশন। সেগুলো নিয়েই আমাদের লড়তে হয়। ‘পিংক’ আমার কাছে মাথাব্যথা নয়, বরং আশীর্বাদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.