তিনি অর্ণব গোস্বামী। তীব্রতম উত্তাপের বাতাবরণেও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার ধারেকাছে যান না। দেন না ইন্টারভিউও। তাঁর থিওরি খুব সহজ; মতামত জানানোর জন্য তো নিজের প্রাত্যহিক শো আর চ্যানেল রয়েছে। অন্যজন অপর্ণা সেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ৪৯ জনের যে দল চিঠি লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনিও অন্যতম। ২৪ জুলাই দিল্লির সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই দুই অতি পরিচিত মুখকে ঘিরে উদ্ভূত তপ্ত বিতর্কের দাবানল থামার কোনও লক্ষণ নেই। বরং উত্তরোত্তর বাড়ছে। গোটা দেশ টিভি ও ডিজিটাল মিডিয়ায় বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে যা দেখেছে তার রাউন্ড টু এবার কফিহাউসে। শুনলেন গৌতম ভট্টাচার্য।
তুমি যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই। তবু নিশ্চয়ই জানো যে তোমাদের বিতর্কটা ভাইরাল হয়ে গেছে।
অর্ণব: হ্যাঁ জানি। এখনও চলছে।
কিছুটা অপ্রত্যাশিত বিতর্ক না? অর্ণব ভার্সাস অপর্ণা।
অর্ণব: ইউ আর মেকিং আ মিস্টেক। ইট ইজ নট অর্ণব ভার্সাস অপর্ণা। এটা একজন সাংবাদিকের সঙ্গত প্রশ্ন করার অধিকারের সঙ্গে একজন সেলিব্রিটির অত্যন্ত অসঙ্গতভাবে সেটার জবাব দিতে না চাওয়ার ঔদ্ধত্যের লড়াই।
সঙ্গত প্রশ্ন?
অর্ণব: অফ কোর্স সঙ্গত প্রশ্ন। আমি তেইশটা কোশ্চেন তো করেছি। সর্বসমক্ষে সেই প্রশ্নগুলো রয়েছে। উনি বা ওঁরা জবাব দিন না। তা না করে মহিলা এমন অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছেন কেন? আমি তো বলব ফ্যাসিস্ট অ্যাটিটিউড।
গোটা দেশে এই বিতর্ক ঘিরে তীব্র বিভাজন তৈরি হয়েছে। কারও মনে হয়েছে অপর্ণা ঠিক। কারও মনে হয়েছে অর্ণব। কলকাতার কথা বলতে পারি। অনেকেরই কিন্তু মনে হচ্ছে একজন বিশিষ্ট মহিলাকে প্রশ্ন করার পক্ষে অর্ণব গোস্বামীর ধরনটা খুব রুক্ষ ছিল।
অর্ণব: ওটা ছাড়ো। কনটেন্টের কথায় এসো। কনটেন্টটা ঠিক ছিল কি না আসল বিচার্য তো সেটাই হওয়া উচিত? যে প্রশ্নগুলো আমি তুলে ধরেছি সেগুলো যথার্থ কি না? দ্যাট ইজ দ্য ওনলি পয়েন্ট।
অর্ণব, একটা কথা কি সকলেরই মাথায় রাখা উচিত নয় যে স্বাক্ষরপত্রে যাঁদের অংশগ্রহণ রয়েছে তাঁরা সবাই মোটামুটি এমিনেন্ট মানুষজন। অপর্ণা সেন তো একা নন। ওখানে রামচন্দ্র গুহ, শ্যাম বেনেগাল, সৌমিত্র চ্যাটার্জি থেকে অনেক বিদগ্ধ মানুষের সই রয়েছে।
অর্ণব: মানে কী? এমিনেন্স ডাজ নট গিভ ইউ দ্য রাইট টু ওনলি আস্ক কোয়েশ্চেন্স অ্যান্ড নট রিপ্লাই টু দেম। তোমার এমিনেন্স আছে বলে কি সব কিছু তোমার জন্য ওয়ান ওয়ে ট্র্যাফিক নাকি? যে তুমি একদিকে যত ইচ্ছে যাবে। অথচ তোমাকে কেউ কোনও প্রশ্ন করলে তুমি পাত্তাই দেবে না। আমি তো মেনে নিচ্ছি যে ওই গোষ্ঠীতে বেশ কিছু বিদগ্ধ মানুষ রয়েছেন। সৌমিত্র চ্যাটার্জিকে কলকাতায় চাকরি করার সময় আমি তো ইন্টারভিউ করতেও গেছিলাম। খুব শিক্ষিত একজন মানুষ। উনি, নাসির, অপর্ণা- এঁরা নিজের ফিল্ডে যা কাজ করেছেন, তা নিয়ে তো কথা বলার অবকাশ নেই। কেউ বলছেও না। কিন্তু এঁদেরও বুঝতে হবে নিজের গণ্ডি পেরিয়ে যদি বৃহত্তর রাজনৈতিক জীবনে ঢুকতে চান, তাহলে তার নানান দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেখানে আমি প্রতিবাদ ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলাম আর পালটা এলেই কেটে পড়লাম– এটা হতে পারে না।
তুমি বলছ সিলেক্টিভ সাইলেন্স?
অর্ণব: অ্যাবসোলিউটলি। অপর্ণা সেন কোথায় ছিলেন যখন চাঁদনি চকে মন্দিরের ওপর হামলা হল? যখন জায়রা ওয়াসিমকে মারধরের ঘটনা হল? কই মুখ খোলেননি তো? গেছিলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় গ্রামে গ্রামে যখন তৃণমূলের অত্যাচার চলছিল? কোথায় ছিলেন যখন প্রফেসর সুব্রত চ্যাটার্জিকে প্রকাশ্যে গণধোলাই দেওয়া হচ্ছিল? আজকে বলছেন লিঞ্চিস্তান। ফেটে পড়ছেন সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতিতে। আমার প্রশ্ন মনমোহন সিং সরকারের আমলে তো ২০০৯-২০১৩ পিরিয়ডে অন্তত ৯০০ সংখ্যালঘু দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছেন। কই অপর্ণারা তো তখন কিছু বলেননি। ওঁর নিজের রাজ্যে যখন মমতা ব্যানার্জি আক্রোশজনিত নানান অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কই অপর্ণাকে তো প্রতিবাদী দেখিনি?
তথ্যটা বোধহয় ঠিক নয়। অপর্ণা নন্দীগ্রামের সময় যেমন সিপিএমের বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেও একাধিকবার মুখ খুলেছেন। এই সেদিন এনআরএস আন্দোলনের সময় ধর্মঘটী ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
অর্ণব: ওটা খুব অকেশনালি করা। আমি ওটাকে করার পর্যায়ে ধরি না। আমি তো বলব যতদিন যাচ্ছে ওঁর বা ওঁদের মুখোশটা মানুষ ধরতে পারছেন। ভারতবর্ষ জুড়ে একই প্রশ্ন উঠছে, মহিলা উত্তর দিচ্ছেন না কেন? কিসে ওঁর এত সমস্যা? লুক গৌতম আই ডু নট ওয়ান্ট আ ডিবেট উইথ হার- অর্ণব ভার্সাস অপর্ণা। আমি শুধু চাই উনি আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দিন।
দিল্লির প্রেস কনফারেন্সে সেদিন তোমার ঢুকে পড়ার ধরনটা যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছে। লাইভ টিভিতে হলের বাইরে থেকে একজন এত নামী সাংবাদিক সে নিউজরুম থেকে ফোনে ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাচ্ছে- এ জিনিস ভারতবর্ষ আগে দেখেনি।
অর্ণব: উপায় ছিল না। আর কেউ যখন প্রশ্নগুলো করেনি, বাইরে থেকে আমাকেই করতে হল। কিন্তু উনি তো জবাব না দিয়ে চলে গেলেন। আবার বলছি, প্লিজ ডোন্ট কনসিডার হাউ ইট ওয়াজ আস্কড। জাস্ট কনসিডার, প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটা সঙ্গত কি না? আরে ভাই তুমি অবলীলায় আমাদের দেশকে বলছ লিঞ্চিস্তান। কেন অপমান করছ নিজের দেশকে? গন্ডগোল অন্য দেশে হয় না? এই তো ক’দিন আগে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে কী নারকীয় হত্যাকাণ্ডই না ঘটল! আমেরিকায় হয়নি হিংসাত্মক ঘটনা? ব্রিটেনে হয়নি? রিসেন্ট পাস্টের ক’টা উদাহরণ দেব? কই ওরা তো নিজের দেশকে খাটো করায় নেমে যায়নি? এত দরদ উথলে উঠল সংখ্যালঘুদের প্রতি। তা হিন্দুদের উপর যখন অত্যাচার-খুন-জখম হয়েছে তখন অপর্ণা নির্বাক ছিলেন কেন? কই মুসলিম মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে তো কখনও আওয়াজ তুলতে দেখলাম না। বোঝাই যায় ওঁর প্রতিবাদের পিছনে গভীর রাজনৈতিক অভিসন্ধি জড়িত আছে।
অপর্ণা কিন্তু আগাগোড়াই লেফট লিবারেল। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ দেখে থাকলে বুঝবে হঠাৎ করে নয়। ঠিক হোক ভুল হোক। এটাই ওঁর বরাবরের স্ট্যান্ড।
অর্ণব: আমি একটাই কথা বলতে চাই। উনি জবাবগুলো দিন। যদি ওঁর জানা না থাকে খবরের কাগজ থেকে সেগুলো জানার চেষ্টা করুন। ঔদ্ধত্য বন্ধ করুন। আর আমার দিক থেকে এখনও অফার দিচ্ছি। আসুন না রিপাবলিক টিভিতে আমার অতিথি হয়ে। আমি ওঁর ইন্টারভিউ নিতে চাই। বসুন আমার সামনে।
অর্ণব, নানা মহলে ক্রমাগত ধারণা জন্মাচ্ছে যে তুমি ও রিপাবলিক টিভি অঘোষিতভাবে বিজেপির মুখপাত্র। তোমার পর্যায়ের সাংবাদিকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অর্ণব: অ্যাবসোলিউট ননসেন্স। কত সব ইস্যুতে আমরা বিজেপি ও সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছি তার ঠিকঠিকানা নেই। বিহার এনসেফেলাইটিস! কারা প্রথম স্টোরি করে শোরগোল ফেলেছিল? প্লিজ ফাইন্ড আউট। কৈলাশ বিজয়বর্গীর ছেলেকে নিয়ে কারা প্রথম অ্যাগ্রেসিভ ইনভেস্টিগেটিভ কভারেজ করে? কারা দেখিয়েছিল দ্য ফাইট বিটুইন বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া অ্যান্ড সুষমা স্বরাজ? এগুলো কি একটাও প্রো বিজেপি স্টোরি? থাক আমি আর এটা নিয়ে ডিসকাসই করতে চাই না। শুধু বলছি আমার কাছে যা ফিডব্যাক নিয়মিত আসছে, তাতে ওঁর নিজের রাজ্যেই মানুষ অপর্ণাকে ধরে ফেলেছে।
তাই?
অর্ণব: ইয়েস। ওয়েস্ট বেঙ্গল সমেত গোটা দেশ এখন ওঁর হিপোক্রিসিটা ধরে ফেলেছে। তাই ওঁর আর ওঁদের লবির বিরুদ্ধে জনমত প্রতিদিন তীব্রতর হচ্ছে।
অপর্ণার কাছে অর্ণবের প্রশ্ন-
প্রত্যুত্তরে অপর্ণা সেন কী বললেন তা জানতে পড়ুন আগামিকাল দ্বিতীয় পর্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.