Advertisement
Advertisement

Breaking News

শিক্ষক দিবসে গুরুদের স্মৃতিচারণায় সফল তারকারা

স্মৃতিচারণায় দেবশংকর, কৌশিকীও৷

Celebrities remember Teachers’ Day celebration during childhood
Published by: Sayani Sen
  • Posted:September 5, 2018 1:18 pm
  • Updated:September 5, 2018 3:35 pm  

শিক্ষক৷ কেউ বলেছিলেন ‘শোলে’ দেখতে। কেউ শিখিয়েছিলেন অঙ্ক। টিচার’স ডের সকালে তাঁদের স্মরণীয় কিছু শিক্ষকের শিক্ষা নিয়ে বললেন দেবশঙ্কর হালদার ও কৌশিকী চক্রবর্তী। শুনলেন শ্যামশ্রী সাহা৷

 

Advertisement

 

 

কোচ বা শিক্ষক এঁরা আমাদের বাবা-মায়ের মতো, কারণ বেশিরভাগ সময়ই আমরা তাঁদের থেকেই শিখি। স্যর কিছু কিছু সময়ে ভীষণ স্ট্রিক্ট হয়ে যেতেন। আবার কিছু সময়ে খুব ভালবাসতেন। খেয়াল রাখতেন। কিন্তু কখনও আমাকে বলেননি ‘‘ওয়েল প্লেড’’।

 

 

     

   ‘শোলেদ্যাখো রবীন্দ্রসংগীতও গাও: দেবশংকর হালদার

আমার অভিনয়ে আসাটা কিন্তু কোনও অভিনেতার হাত ধরে নয়৷ তাই যদি শিক্ষকের কথা বলতে হয়, তাহলে তিনি অভিনয় জগতের কেউ নন। তিনি আমার স্কুলের শিক্ষক। শিবশম্ভু পাল। উনি একজন কবি ছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু। যাঁরা কবিতার অনুগত পাঠক তাঁরা ওঁর নাম জানেন। ওঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ আছে। আমি পাইকপাড়া রামকৃষ্ণ বিদ্যালয় নামে একটা ওঁচা স্কুলে পড়তাম। ওই স্কুলে সাধারণত ভাল ছেলেরা পড়ত না। আমার ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। পাড়ার স্কুলে পড়লে পাড়ার মাঠে খেলতে পারব বলে আমি হিন্দু বা হেয়ার স্কুলে ভরতি হইনি। মাস্টারমশাই ওই স্কুলে বাংলা পড়াতেন। উনি অসম্ভব ভাল শিক্ষক ছিলেন। আমাকে বলেছিলেন, ফুটবল যারা খেলে তারা পড়াশোনাও করে। ফুটবল খেলতে হলে কবিতাও পড়তে হয়, নাটকও দেখতে হয়, গানও শুনতে হয়। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখনই আমি ভাল স্পোর্টসম্যান। মানে আমি দৌড়লে ফার্স্ট হবই। একদিন মাঠে আমি দৌড়ব বলে রেডি, তখন শুনি মাইকে গান হচ্ছে, ‘প্রাণ চায় চক্ষু না চায়’। মাস্টারমশাই গাইছেন, খালি গলায়। গান শোনার পর আমি ওঁর সঙ্গে আলাদা করে আলাপ করলাম। সেই থেকে স্যরের সঙ্গে বন্ধুত্ব। উনিই আমাকে বলেছিলেন, নান্দীকার, বহুরূপী, পিএলটি নাটকের দলের কথা। মাস্টারমশাই নিজে হিন্দি সিনেমা দেখতেন, আমাদেরও দেখতে বলতেন। ওঁর প্ররোচনায় আমি ‘শোলে’ দেখেছিলাম। ওঁর তাড়নায় আমি কবিতা পড়তে শিখেছি। শিল্পসংস্কৃতির লোকদের অন্যভাবে চিনেছি। আমার অভিনয় জীবনের প্রাথমিক যোগসূত্র গড়ে দেন উনি। তাই ওঁর নামই প্রথমে মনে পড়ে। আমার ‘উইঙ্কল-টুইঙ্কল’ নাটকের সেকেন্ড শো দেখতে এসেছিলেন। পরে উনি আমাকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। ওঁর সেই প্রতিক্রিয়াটাও ছিল কবিতার মতো। কোনওদিন ভোলার নয়। একটা কবিতা যখন হয়, তখন তার ভিতরে কিছু শব্দ থাকে আর কিছু নৈঃশব্দ থাকে। মাস্টারমশাই আমাকে চিঠিতে লিখেছিলেন ‘‘কখন যে আড়ালে তোর ভিতরে নৈঃশব্দের সাধনা চলছিল এটা বুঝতে পারিনি। তোর এই থিয়েটারটা দেখতে গিয়ে বুঝতে পারলাম।’’ এর আগে আমি অনেক নাটক করেছি, কিন্তু উনি একটু ঘরকুনো মানুষ ছিলেন, খুব একটা দেখতে যেতে চাইতেন না। তারপর একদিন নিজেই আমার নাটক দেখতে যেতে চাইলেন। ওই চিঠিটা আমি আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছি। ওটা আমার কাছে একটা বড় পাওয়া। খুব রসিক মানুষ ছিলেন আর দেখতেও অনেকটা রবি ঘোষের মতো। উনি  পড়াতে পড়াতেও মজা করতেন। আমার জীবনে ওঁর প্রভাব অনেকটাই।

[ছবির জন্য গান তৈরি করতে আগ্রহী রাঘব, চান দায়িত্ব]

অভিনয় জগতের শিক্ষকের কথা বলতে হলে আমার বাবার কথাই বলি প্রথম৷ কারণ, বাবার হাত ধরেই থিয়েটারে এসেছি। বাবা ভাল অভিনেতা ছিলেন। পাড়াতেও বাবা নাটক করাতেন। কিন্তু তবুও আমি বলব সেই শেখানোর মধ্যে একটা আলগোছে ভাব ছিল। কিন্তু আমার মাস্টারমশাই, একজন অভিনেতা বা শিল্পী হতে গেলে যা যা লাগে সেই রসদগুলো আমাকে জুগিয়ে দিয়েছিলেন।

   

কেউ কিছু না পারলে ধৈর্য হারিও না: কৌশিকী চক্রবর্তী

টিচার’স ডে বললে স্কুলের কথাই সবার আগে মনে পড়ে। আর সংগীত জীবনে আমরা শিক্ষককে গুরু বলি। তার জন্য অন্য আর একটা দিন আছে। ‘গুরুপূর্ণিমা’। আমার বড় হওয়াটা অতিরিক্ত প্রাচ্য নির্ভর সংস্কারে তাই আমার টিচার’স ডের রেফারেন্স একমাত্র স্কুল। আমার ভালবাসার এবং শ্রদ্ধার মানুষ  যিনি তিনি আজও আমার সব থেকে পছন্দের মানুষদের মধ্যে একজন। পাঠভবন স্কুলের ম্যাথস টিচার দীপঙ্কর সরকার। উনি ম্যাথস ছাড়াও ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি পড়াতেন। আমি যে ম্যাথস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রিতে অসাধারণ ছিলাম, সেটা কোনওদিনও বলতে পারব না। কিন্তু যতটুকু করেছি সেটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্যরের পরিশ্রমের ফল। কারণ আমি আর যাই হোক অঙ্ক করার জন্য জন্মাইনি, সেটা স্যর জানতেন। আর এর পরেও স্যর অদম্য চেষ্টা করেছিলেন যাতে আমি অঙ্কে ফেল না করি৷ ওঁর জন্যই আমি মাধ্যমিকে অঙ্কে আশির কাছাকাছি নম্বার পেয়েছিলাম। এটা আমার জীবনে একটা আশ্চর্য ঘটনা। আমি নিজেও জানি না স্যর এটা কী করে সম্ভব করতে পারলেন! বিশ্বাস করো, অঙ্ক আমার জন্য নয়। আজ পর্যন্ত আমার জীবনে বা খাতায় বেশিরভাগ অঙ্কই মেলেনি। যার শরীরে অঙ্ক করার কোনও জিনই নেই, তাকে অঙ্কে পাস করানোটা মনে হয় হয় স্যরের নিজের কাছে বড় পরীক্ষা ছিল।

[‘বাবুমশাই’ হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে স্মৃতিচারণায় প্রভাত রায়]

উনি আমার জন্য প্রচণ্ড খেটেছিলেন। আমি ওঁর বাড়িতেও গিয়ে পড়তাম। সবাই অঙ্ক করত আমি চুপ করে বসে থাকতাম৷ কিছুক্ষণ পর স্যর বলতেন ‘‘তুই বসে আছিস কেন?’’ আমি বলতাম কী করে শুরু করব, সেটাই বুঝতে পারছি না। অঙ্ক বিষয়টা আমার কাছে এতটাই বিরক্তিকর ছিল যে, মনে হত কে সি নাগকে প্ল্যানচেটে ডেকে জিজ্ঞেস করি, কেন উনি এত শক্ত শক্ত অঙ্ক দিয়েছেন? আমার ইচ্ছে করত ওঁর সঙ্গে দেখা করে বলি, প্লিজ এভাবে শক্ত শক্ত অঙ্ক দিয়ে আর টর্চার করবেন না। আমি যে অঙ্ক বুঝতে পারতাম না, তার জন্য স্যর কোনওদিন বিরক্ত হননি। স্যর এটা শুনলে কষ্ট পাবেন যে আজও আমি অঙ্ককে ভালবাসতে পারিনি৷ কিন্তু এটা সত্যি যে আমি অঙ্ককে যতটুকু আমার জীবনে অ্যাকসেপ্ট করেছি, সেটা স্যরের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধার জন্য। আমার বাবা-মার পরে গুরুজন স্থানীয় কোনও মানুষ যদি খুব গভীর একটা জায়গা জুড়ে থাকে, তবে সেই জায়গায় স্যর আছেন।

পরবর্তীকালে আমি যখন বড় হয়েছি, স্যর আমার বন্ধু হয়ে গেছেন। আমি কাকে বিয়ে করব সেই আলোচনাটাও আমি ওঁর সঙ্গে করেছিলাম। এটা আমার বাবা-মাও জানতেন৷ যে কথাটা আমি কাউকে বলতে পারছি না, আমার মনের খুব গোপন কথা সেই কথাও আমি স্যরের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি। স্যর এমন একজন মানুষ যিনি আমারও বন্ধু আবার বাবা-মারও বন্ধু। স্যরের অসুস্থতার কোনও খবর পেলে আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন ফোন করি। একবার আমার কনসার্ট স্যর টিকিট কেটে শুনতে এসেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আপনি টিকিট কেটেছেন কেন? উনি বললেন, ‘‘সবাই টিকিট কাটছে আর আমি কাটতে পারি না? এরকম  করিস না। আমার জীবনের পোটেনশিয়ালটাকে লিমিটেড করে দিস না৷’’

[নচিকেতা, রূপঙ্করদের আড্ডা ছিল শ্যামবাজারের এই চায়ের দোকানে]

টিচার’স ডের দিনটার কথা খুব মনে পড়ছে। ওই দিন স্যরের সামনেই আমরা স্যরের মিমিক্রি করতাম। স্যর মন দিয়ে দেখতেন আর কোথাও ভুল হলে বলতেন, ‘‘না না বাঁ হাতে নয়, ডান হাতে আমি এমনি করে ডাস্টারটা ধরি।’’ আমার ছেলে এখন ছোট। আমি চাই আমার ছেলেও স্যরের গাইডেন্সে বড় হোক। পাঠভবন স্কুলে যারা আমার ব্যাচ বা যে সময় স্যর ছিলেন, তাদের কাছে একটা বড় প্রাপ্তি দীপঙ্কর স্যর। উনি শুধুই আমার একজন শিক্ষক নন, যিনি আমাকে ফিজিক্স, ম্যাথস, কেমিস্ট্রি পড়িয়েছেন, তাঁর থেকেও বড় যে বৃহত্তর জীবনের শিক্ষা দিয়েছেন উনি। যোগাযোগ অনেক কমে গেছে তবুও স্যর এখনও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement