তাঁর পরবর্তী ছবি ‘তুষাগ্নি’ মুক্তি পাওয়ার আগে অমৃতা চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি শুভঙ্কর চক্রবর্তী।
বাবা নামকরা সাংবাদিক। মেয়ে সোশিওলোজিতে ফার্স্ট ক্লাস, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনেও তাই। আপনি সাংবাদিক হলেন না কেন?
অমৃতা: ছোটবেলা থেকে বাবার অফিসে বহুবার গেছি। গ্র্যাজুয়েশনে পাস সাবজেক্টে আমার জার্নালিজম ছিল। কিন্তু বাবা আমাকে বারবার বলতেন, “চেষ্টা করবে সাংবাদিকের উলটোদিকের চেয়ারটায় বসতে।” বাড়ির সবাই জানত আমার অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক আছে। স্কুলে গান শিখেছি। নাচ শিখেছি। নাটক দেখতাম। সিনেমা দেখতাম। কিন্তু জার্নালিজমের প্রতি কোনও টান অনুভব করিনি।
বাবা অলোক প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় কোনওদিন আপনার ইন্টারভিউ নিয়েছেন?
অমৃতা: এখনও অবধি নেননি। কিন্তু বলেছেন নিতে চান। (হাসি)
বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবিতে (‘আনওয়ার কা অজিব কিস্সা) ডেবিউ। কেরিয়ারের শুরুটা তো দারুণ ছিল?
অমৃতা: দারুণ মানে, দারুণ ভয় ছিল। ওরকম বিশাল মাপের পরিচালক। তখন বয়সটাও খুব কম ছিল। যখন প্রথম অডিশন দিতে ওঁর বাড়ি যাই, খুব ভয় পেয়েছিলাম। শুধু কথা বলছিলাম ওঁর সঙ্গে। বুঝতেই পারিনি কথাবার্তাটাই ছিল অডিশনের অংশ। পরে শুটিংয়ে বুঝলাম এই ডায়ালগগুলো তো আমার জানা!
২০১৩ থেকে ’১৯। ছ’বছরে আপনার আটটা ফিল্মের একটাও সুপারহিট নয়। আক্ষেপ হয়?
অমৃতা: প্রথম দিকে খারাপ লাগত। কিন্তু এখন বুঝি সিনেমা সুপারহিট কিংবা ব্লকবাস্টার হওয়াটা আমার হাতে নেই। সেটা ডিপেন্ড করে কোন সময়ে, কোন ছবির সঙ্গে আমার ফিল্ম রিলিজ করছে। ডিস্ট্রিবিউশন কেমন। প্রোমোশন কেমন হচ্ছে। কিন্তু এ সব মাথায় রেখেই বলছি, ‘আহা রে’ সিনেমা হলে ৭৫ দিন পেরোল। হাউসফুলও ছিল। টেকনিক্যালি ‘আহা রে’ হিট ছবি।
ওই ফিল্মগুলোর রিভিউতে আপনার অভিনয়ের প্রশংসা হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ছাড়া আর কোনও প্রথম সারির পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়নি আপনার। ইন্ডাস্ট্রিতে কি নিজেকে ব্রাত্য মনে হয়?
অমৃতা: প্রথম সারির পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়নি ঠিকই, কিন্তু এই কয়েক বছরে প্রত্যেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ছবিতে কাজ করার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কথাও হয়েছিল। কোনও কারণে সেটা হয়নি। আমি যে একজন অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর কাছে রেজিস্টার হয়েছি, সেটাই প্রাপ্তি। আর এই যে আপনি বললেন অভিনয়ের প্রশংসা হচ্ছে, আমার কাছে এটাই অনেক। ফিল্মের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের যে আমার কাজ ভাল লাগছে, সেটাই শেষ কথা।
[ আরও পড়ুন: ‘আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছ’ফুট লম্বা হতেই হবে,’ স্বপ্ন অভিনেত্রী রকুলপ্রীতের ]
আপনি তো মেগা সিরিয়ালও করেছিলেন। পরে আর করলেন না কেন?
অমৃতা: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আমার প্রথম মেগা সিরিয়ালের প্রযোজক। তাঁকে জানিয়েছিলাম, আমার আগ্রহ সিনেমার দিকে। উনি বলেছিলেন, “তুই যদি সিনেমা করতে চাস, মেগা সিরিয়াল থেকে ব্রেক নিয়েও করতে পারিস।” তাই আমি করেছিলাম। কিন্তু কী জানেন তো, আমার নাম অমৃতা। আর সেই নামেই আমি পরিচিতি পেতে চাই। রাস্তায় বেরলে সেলফি তুলতে যদি সিরিয়ালের চরিত্রের নাম ধরে মানুষ আমাকে ডাকে, সেটা আমি পছন্দ করব না। ‘ও সিরিয়াল করে’, কিংবা ‘ওকে সিরিয়ালে দেখেছি’ এই পরিচিতি আমি চাই না।
আপনি তো নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির ডাই হার্ড ফ্যান? ডেবিউ ফিল্মে যিনি আপনার কো-স্টার ছিলেন।
অমৃতা: ছবিতে যে ক’টা দৃশ্যে আমি ছিলাম, নওয়াজজিও ছিলেন। মানুষটাকে দেখেছি আর অবাক হয়েছি। পরপর প্রশ্ন করে গিয়েছি, উনি বিরক্ত হননি। উত্তর দিয়েছেন। আড্ডা দিয়েছেন। এখনকার অভিনেতারা মেকআপ ভ্যান নিয়ে অবসেসড। প্রধান চরিত্র করছেন বলে সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে মেকআপ ভ্যান শেয়ার করেন না। কিন্তু ওই ফিল্মে নওয়াজজি এপ্রিলের গরম দুপুরে হাজরার কাছে একটা বাড়িতে জলচৌকির উপর শুয়ে কাটিয়ে দিলেন। ঘরে শুধু একটা পাখা চলছে। জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন, “আমি পাঁচটা মেকআপ ভ্যান রাখতে পারি। কিন্তু সেটা রাখলে কি খুব ভাল অভিনেতা হয়ে যাব? পাঁচটা মেকআপ ভ্যানে যদি আমার অভিনয় পাঁচগুণ ভাল হয়ে যায়, আমি রাখব। কিন্তু ছবির চরিত্র এই পরিস্থিতিটাই ডিজার্ভ করে।” এরকম এক অভিনেতার ফ্যান হব না?
এখনও অবধি আপনাকে যে সব ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে, তার মধ্যে সেক্সের ছিঁটেফোঁটাও নেই। বোল্ড সিনে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হতে পারে বলে মনে হয়?
অমৃতা: বোল্ডনেস দেখাতে যে জামাকাপড় খুলে ফেলতে হবে, এটা কিন্তু নয়। ‘উড়তা পঞ্জাব’-এ বারবার দেখানো হয়েছে আলিয়া মলেস্টেড হচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যত সেটা দেখানো হয়নি। ওয়েবে সেন্সর থাকে না তা বলে অযথা সেক্স যে কোনও সিনে ঢুকিয়ে দেওয়ার কারণ আমি দেখি না। অভিনেত্রী হিসেবে যদি এমন স্ক্রিপ্ট পাই যেখানে প্রয়োজনে বোল্ড সিন আছে, আমি করব। কিন্তু আমার সিন এমএমএস হয়ে ঘুরবে, এটা আমি চাই না।
পরের ছবি ‘তুষাগ্নি’ কবে রিলিজ?
অমৃতা: ১৪ জুন।
এরকম অ্যাকশন প্যাকড ছবি। জঙ্গির কবলে স্ত্রী। তাঁর স্বামী সিআইডি অফিসার। ‘মেহের আলি’র পর আবার অ্যাকশন ছবি। অভিজ্ঞতা কেমন?
অমৃতা: অভিজ্ঞতা! ফুল লোডেড রিভলভার মাথায় ঠেকানো ছিল!
কী বলছেন?
অমৃতা: হুম। ছবির প্রযোজক প্রীতিময় চক্রবর্তীর লাইসেন্সড রিভলভার আছে। সেটা ব্যবহার করা হয় এক দৃশ্যে। জনৈক অভিনেতা আমার মাথায় সেটা ঠেকাবে। কিন্তু পরে সবাই জানতে পারে ওটা লোডেড। তার পর ওটা আনলোড করা হয়। ভুলভাল কিছু হলে ওই সিনটাই আমার জীবনের লাস্ট সিন হতে পারত।
[ আরও পড়ুন: ব্লাউজ থেকে উঁকি মারা বিভাজিকা, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফাটল কি না! ]
আপনার ছবি তো নেটফ্লিক্সেও রিলিজ করেছে।
অমৃতা: ইয়েস, ‘স্মোকিং ব্যারেলস’।
বলিউড অফারও তো আসছে?
অমৃতা: কথাবার্তা চলছে। সই হলে বলব।
আপনার পিআর কিন্তু খুব খারাপ।
অমৃতা: একদম। (হাসি)
আচ্ছা, অমৃতা কি সিঙ্গল?
অমৃতা: বলব না। (হাসি)
এতগুলো বছর রয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। কোনও কো-অ্যাক্টরের প্রেমে পড়েননি?
অমৃতা: নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। আর উঠতে পারছি না। (হাসি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.